Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

শেখ হাসিনা : এক মানবিক সত্তা

Syed Mozaffar  Ahmed

সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ

বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারি ২০২৪

বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম ভূখণ্ড। লাখো বীর মুক্তিযোদ্ধার রক্তে স্নাত হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যার গঠন হয়েছিল। আক্ষরিক অর্থেই এর পেছনের কারিগর ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যেন তার এক ছন্দময় অর্কেস্ট্রা যুদ্ধে গোটা জাতিকে তাদের জীবন উৎসর্গের জন্য ঐক্যবদ্ধ করেছিল, যা দীর্ঘদিন ধরে বাঙালি জাতির ওপর চলমান পশ্চিম পাকিস্তানের নিষ্পেষণমূলক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিল। রাজনীতির অসংখ্য মারপ্যাঁচকে পাশ কাটিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে উঠেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নির্ভীক এক নেতা। পতন আসন্ন জেনে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এবং পিপলস পার্টির প্রধান ভুট্টো ‘অপারেশন সার্চলাইট' নামের এক নারকীয় সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে বন্দুকের মুখে বাঙালি জাতিকে স্তব্ধ করে দিতে শুরু হয় সেই অভিযান। ওই রাতেই আটক করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। পাকিস্তানের ফয়সালাবাদে জেলবন্দি অবস্থায় তিনি যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। ৯ মাসের লড়াইয়ে লাখো মানুষের রক্তে ভিজে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। পাকিস্তানের ফয়সালাবাদ জেলে থেকে মুক্তিলাভের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। সংগ্রামরত এক জাতির আশা ও প্রেরণার উৎস হয়ে কাজ শুরু করেন।

খুব দ্রুত টালমাটাল পরিস্থিতির দিকে চলে যায় বাংলাদেশ। গোটা বিশ্বের কাছে এক দেশপ্রেমী নেতা হিসেবে সমাদৃত বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা নির্মমভাবে হত্যা করে। এর সঙ্গে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা অনিশ্চয়তার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়, যা বেশ সময়কাল ধরে বিরাজমান ছিল। এই ক্রান্তিকালে ত্রাণকর্তারূপে হাজির হন নিহত নেতার বড় কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি নির্বাসন থেকে ফিরে আসেন দেশে। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসা সেই বিপথগামী স্বাধীনতাবিরোধী প্রশাসনের কবল থেকে দেশমুক্তির চ্যালেঞ্জকে আলিঙ্গন করেন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ সময় ধরে কিছু ধারাবাহিক হৃদয়বিদারক ঘটনা ও তীব্র সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অভূতপূর্ব বিজয় লাভ করেন তিনি। রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েই দেশের প্রশাসনের আমূল পরিবর্তন আনায় জোর দেন। খুব দ্রুতই অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের আলো উদ্ভাসিত হয় বাংলাদেশে। রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিটি খাতে অসাধারণ সাফল্য আসতে থাকে। শেখ হাসিনা নারী হিসেবে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক জরিপে তাকে বিশ্বের ৪২তম ক্ষমতাধর নারীনেত্রী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। দেশের গণমানুষের জীবনে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনায়নে মানবহিতৈষী ও গণতন্ত্রের মানসকন্যা এবং অদম্য আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছেন শেখ হাসিনা।

বিগত ১৪ বছরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছেন। কভিড-১৯-এর ধকলের মাঝেও গড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছিলেন। দেশের লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের পরাকাষ্ঠা থেকে তুলে এনেছেন। আইএমএফ বলছে, জিডিপি বিবেচনায় বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া ক্রয়ক্ষমতা সমতার (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি-পিপিপি) ভিত্তিতে ৩২তম অবস্থানে রয়েছে এই দেশ। বিশ্বনেতা শেখ হাসিনা যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ খাতে এবং আইসিটিভিত্তিক ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন এনেছেন। ডিজিটালাইজেশনের এই আশীর্বাদ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে স্পর্শ করেছে এবং পাঁচ কোটি মানুষের হাতে মোবাইল ফোনের সেবা পৌঁছে গেছে। আইসিটি নিয়ে দূরদর্শী স্বপ্নচারী প্রধানমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের আইটিকে রপ্তানির সবচেয়ে বড় খাতে পরিণত করতে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। বাংলাদেশের মানুষ এই প্রচেষ্টার সুফল তাদের জীবনের প্রতিটি বাঁকে উপভোগ করছে। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে কর্মমুখর ও আলোকবর্তিকাবাহী এই প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। ইতিমধ্যে তার সরকার সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে রয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণতের পথে এগোচ্ছে। দেশের ১৬ কোটি মানুষের চাপ সামলে নিয়েও মিয়ানমারের বর্বর সামরিক অভিযানে বাস্তুচ্যুত ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা 'মাদার অব হিউম্যানিটি' হয়ে উঠেছেন। শেখ হাসিনা এক জ্বলজ্বলে তারকা এবং পরিবর্তন আনয়নকারী, যিনি বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে টেনে হিঁচড়ে উন্নয়নের রাস্তায় তুলে এনেছেন। এর মাধ্যমে ২০৪১ মিশনকে সামনে রেখে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে তিনি নিজেকে আত্মোৎসর্গের চূড়ান্তে নিয়ে গেছেন।

জাতি গঠনে এই অবদানের জন্য তাকে বেশ কয়েকটি সম্মানজন পুরস্কারে ভূষিত করেছে এই বিশ্ব। আর এর মাধ্যমে তিনি রাজনীতি ও প্রশাসন পুনর্গঠনে একজন ক্ল্যাসিক আইকনিক নেতৃত্ব হয়ে উঠেছেন। এই অসাধারণ স্বীকৃতি তার রাজনৈতিক জীবনকে মহিমান্বিত করেছে। সীমিত সম্পদে সুনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশকে সমৃদ্ধ করে তোলায় শেখ হাসিনা প্রশাসনের অবদানকে সাধুবাদ জানিয়েছে বিশ্বখ্যাত কিছু সংস্থা। সত্যিকার দেশপ্রেমের এই দীক্ষা তিনি রক্তসূত্রে পেয়েছেন তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে, যিনি এই গ্রহের অন্যতম জনপ্রিয় ও খ্যাতিমান নেতা। দেশের এই অগ্রগতির নমুনা আরেক ধাপ এগিয়েছে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে, যা কি না দেশের নিজের অর্থায়নে গড়ে তোলা সবচেয়ে সম্মানজনক মেগাকাঠামো। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে বর্বরভাবে হত্যার মাধ্যমে যে কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল, সেই পথ পেরিয়ে শেখ হাসিনা এক নতুন সূর্যোদ্বয় দেখিয়েছেন। পরিবারের ওপর চালানো সেই নির্মম যন্ত্রণা শেখ হাসিনা আজও বয়ে চলেছেন এক আবেগমাখা সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে।

লেখক: অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ও সাবেক প্রক্টর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ