দায়িত্ব হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত শিরীন শারমিনই স্পিকার: আইনজ্ঞদের অভিমত
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট দেশ ত্যাগ করার পর তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যা মামলা হচ্ছে দেশব্যাপী। এরপর রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন; কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী স্বপদে থেকে যান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী; কিন্তু গত ২৭ আগস্ট রংপুরে স্বর্ণশ্রমিক মুসলিম উদ্দিন (৩৮) নিহত হওয়ার ঘটনায় শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। এরপর গত ২ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী নতুন কেউ দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকার পদে রয়েছেন বলে গণ্য হবে। নতুন নির্বাচন ছাড়া স্পিকার নির্বাচনের সুযোগ সংবিধানে নেই। তবে সংবিধান মেনে চলা না হলে বা বর্তমান সংবিধান বাতিল বা স্থাগিত হলে সেটা ভিন্ন বিষয়।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এ ব্যাপারে ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারের পদ কীভাবে শূন্য হবে, তা সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে। সেখানে সংসদ সদস্য পদ না থাকা, পদত্যাগ করাসহ পাঁচটি কারণে স্পিকারের পদ শূন্য হবে বলে বলা আছে। একই অনুচ্ছেদে বলা আছে, এসব বিধান সত্ত্বেও ক্ষেত্রমতে স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল রয়েছেন বলে গণ্য হবে। তাই সদ্য পদত্যাগ করা জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী পরবর্তী স্পিকার দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত তার পদে আছেন বলে ধরে নেওয়া হবে। সংবিধান এমনটাই বলে।’
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘স্পিকারের পদ শূন্য হবে, যদি তিনি সংসদ সদস্য পদে না থাকেন, মন্ত্রী হন, অপসারণের প্রস্তাব সংসদে গৃহীত হয়, পদত্যাগ করেন অথবা কোনো সাধারণ নির্বাচনের পর অন্য কোনো সদস্য তার কার্যভার গ্রহণ করেন। তবে পদ শূন্য হওয়ার মুহূর্তেই তাকে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হয়। অর্থাৎ নতুন কোনো সংসদ সদস্য স্পিকারের দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত আগের স্পিকার তার পদে আছেন বলে ধরে নেওয়া হবে। এমনটাই বলা আছে সংবিধানে। তাই পরবর্তী সংসদ না আসা পর্যন্ত পদত্যাগ করা সত্ত্বেও স্পিকার শিরীন শারমিন তার পদে বহাল থাকবেন। তবে পরবর্তী স্পিকার আসা পর্যন্ত দীর্ঘ একটা গ্যাপের কারণে জটিলতা সৃষ্টি হবে। এমনটা আগে কখনো হয়নি তাই।’
অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সংবিধানের ৭৪(৬) অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে– এই অনুচ্ছেদের (২) দফার বিধানাবলি সত্ত্বেও ক্ষেত্রমত স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার তাহার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল রহিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।’ তাই সংসদ ভেঙে গেলেও স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার তাদের পদে আছেন। সংসদ ভেঙে যাওয়ার কারণে তারা এই মুহূর্তে সংসদ সদস্য নন। অন্যদিকে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন। তার পরেও বর্তমান সংবিধান মোতাবেক স্পিকার তার পদে বহাল আছেন বলে ধরে নেওয়া হবে। তার পদ শূন্য করতে হলে সংবিধান বা সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা বাতিল বা স্থগিত করতে হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ আহসানুল করিম বলেন, ‘সংসদ ভেঙে দিলেও স্পিকারের পদ যায় না। পদত্যাগ করলেও নতুন স্পিকার দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত তিনি পদে আছেন বলে ধরে নিতে হয়। পরবর্তী সংসদের সদস্যদের শপথ পড়ানোর ভার তার ওপরই বর্তায়। এমনকি রাষ্ট্রপতির অবর্তমানে স্পিকারকেই রাষ্ট্রপ্রধানের ভার নিতে হয়। তাই পরবর্তী পার্লামেন্ট না হওয়া পর্যন্ত স্পিকার শিরীন শারমিন তার পদে বহাল থাকবেন। তার পদত্যাগের ফলে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই এবং এ ধরনের শূন্যতার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশেই নয় উপমহাদেশেই প্রথম।’
উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী গত সোমবার পদত্যাগ করেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। রাষ্ট্রপতি তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন এবং ওই দিনই সেটা কার্যকর করা হয়েছে বলে সরকারি এক গেজেটে জানানো হয়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে