Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

নারী আম্পায়ারের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন দুঃখজনক

Ekramuzzaman

ইকরামউজ্জমান

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

ক্রীড়াঙ্গনে ন্যায়বিচার, সমতা ও মানবিক মর্যাদার প্রশ্নে নারীরা ভীষণভাবে পিছিয়ে আছে, তাদের পিছিয়ে রাখা হয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনে চলছে নৈতিকতা সংকট। নারী-পুরুষ বৈষম্য বেড়েই চলেছে। অথচ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই ১৯৭২ সালে ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ এবং ন্যায়ভিত্তিক ক্রীড়াঙ্গনের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন। বলেছেন ক্রীড়াঙ্গনের সংস্কৃতি হবে বৈষম্যহীন। এখানে নারী-পুরুষে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমরা মুক্তি পেয়েছি। আমাদের নিজেদের রাষ্ট্র পেয়েছি ১৯৭১ সালে। এর আগে রাষ্ট্র নামক জাতির বৃহত্তর সংগঠনটির সঙ্গে আমাদের পরিচয় ছিল না। স্বাধীনতা দিয়েছে নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ, তা সে সিদ্ধান্ত ভুল বা সঠিক যাই হোক না কেন। একাত্তরের স্বাধীনতার পর বাঙালিরা সংগঠন গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছে। পেয়েছে অন্যান্য দেহের মতো ক্রীড়াঙ্গনে জাতির ভাগ্য নির্ধারণের ক্ষমতা নিজেদের হাতে। শুরু হয়েছে ক্রীড়াঙ্গনে বাঙালির সংগঠনের যুগ।

দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও বিভিন্ন খেলার চর্চা এবং মানোউন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে দুর্বলতা, অসচেতনতা, পাশাপাশি প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতার অভাব সর্বোপরি ক্রীড়াঙ্গনের সময়কে সঠিকভাবে পড়তে না পারার অপারগতা ক্রীড়াঙ্গনে জাতির স্বপ্নের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানবিক চ্যালেঞ্জও।

সংগঠক নামধারী কিছু ব্যক্তি আছেন যারা সব সময় ক্ষমতাসীন দলের ছায়ায় থাকতে চান। কারণ একটাই মতলব হাসিল এবং বিভিন্ন ধরনের অবৈধ সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নেয়া। তাদের জন্যই ক্রীড়াঙ্গনে বিতর্কের জন্ম হয়। ক্রীড়াঙ্গনে লক্ষণীয় হয় অস্থিরতা। এই ধরনের সংগঠকদের কাছে ক্রীড়াঙ্গন লোভনীয় পেশা। তারা ক্রীড়াঙ্গনকে দেখেন নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে।

অথচ বঙ্গবন্ধু সব সময় ক্রীড়াঙ্গনে দলীয় রাজনীতির দাপট, হীনম্মন্যতা, নিচুতার বিপক্ষে সরব ছিলেন। সরব ছিলেন ক্রীড়াঙ্গনে সুস্থ জীবনবোধ এবং উদার হৃদয়ের স্বপক্ষে। তিনি সব সময় চেয়েছেন ক্রীড়াঙ্গন পরিচালিত হোক সর্বক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সংগঠকদের মাধ্যমে। যেখানে সুশাসন জবাবদিহিতা এবং দায়বদ্ধতা থাকবে। ক্রীড়াঙ্গন পরিচালিত হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে।

ক্রিকেট শুধু একটি খেলা নয়। একটি জীবনবোধ। একটি মর্যাদাপূর্ণ আচরণ। জীবনের ক্রীড়া সংস্করণ। বাংলাদেশের ক্রিকেট সাহিত্যিক বদরুল হুদা চৌধুরী তার ‘তবু ক্রিকেট ভালোবাসি’ বইয়ে ১৯৬৬ সালে এই ধরনের কথা লিখেছেন।

খেলার রাজা ক্রিকেটে সবচেয়ে খারাপ শব্দ হলো ‘দিস ইজ নট ক্রিকেট’। ক্রিকেটে নেই নিচুতা। পুরুষ ও নারীতে বৈষম্য। নীতি চ্যুতি, অসারল্য ভদ্রতা বা শালীনতার অভাব। ক্রিকেটে স্থান নেই প্রবঞ্চনার, ক্রিকেটের চেতনার সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা চলে না ক্রিকেটে সত্য প্রতিজ্ঞ হতেই হবে। সৌজন্যতা বা ভদ্রতা না থাকলে তো এই খেলা আর খেলা থাকবে না। ক্রিকেট মানুষকে মূল্যায়ন করে। সম্মান এবং মর্যাদা দেয়। ক্রিকেটে নেই জটিল-কুটিলের স্থান ক্রিকেটের শিক্ষা হলো বিনয়ী এবং ভদ্রসুলভ আচরণ। ক্রিকেট মানেই সৌজন্য-সৌখিন্য।

স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিনে ক্রিকেট রসিকরা বাধ্য হয়েছেন ক্লাব কর্মকর্তা এবং কিছু খেলোয়াড়ের অক্রিকেট সুলভ আচরণ শুধু নয় অসৌজন্যমূলক আচরণের সাক্ষী হতে। এই আচরণ ক্রিকেট প্রেমিকদের শুধু আহত করেনি। তাদের মনে কিছু প্রশ্নেরও জন্ম দিয়েছে।

প্রথমেই জানিয়ে রাখি, আমি গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের খেলা দেখতে যাইনি। রোববার ঢাকার কয়েকটি দৈনিকে দেখেছি নারী আম্পায়ারের আপত্তি জানিয়ে প্রাইম ব্যাংক এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কর্মকর্তা এবং খেলোয়াড়রা নারী আম্পায়ারের অধীনে খেলতে আপত্তি জানিয়েছেন। এটি দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে কলঙ্কজনক দিনের একটি। বিতর্ক সৃষ্টি হওয়াতে খেলা শুরু হতে দেরি হয়েছে। এই সংবাদ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় স্থান পেয়েছে।

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে (২৫ এপ্রিল) মনিরুজ্জামানের সঙ্গে ফিল্ড আম্পায়ার ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। কর্মকর্তা এবং খেলোয়াড়রা ভুলে গেছেন জেমি আইসিসির প্যানেলভুক্ত একজন আম্পায়ার। তিনি তার যোগ্যতায় এই সম্মান এবং দায়িত্ব পেয়েছেন। এটি খুব দুঃখজনক নারী আম্পায়ারের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন। আইসিসি যেখানে নারী আম্পায়ারের প্রতি বিশ্বাস এবং আস্থা রেখে তাকে প্যানেলভুক্ত করেছে সেখানে ডিপিএলের দুই দলের আচরণ মোটেই ভদ্রতাসুলভ নয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দুই দল খেলায় অংশ নিয়েছে। মনে রাখতে হবে, আইসিসি কিন্তু এই অখেলোয়াড় সুলভ আচরণকে সহজভাবে নাও নিতে পারে। সময় হয়তো এই বিষয়ে আর কিছু দেখাবে। ক্রিকেট সুস্থ জীবনবোধের জয় হোক। জয় হোক খেলার চেতনায়।

লেখক: কলামিস্ট ও বিশ্লেষক। সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি, এআইপিএস এশিয়া। আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন। প্যানেল রাইটার ফুটবল এশিয়া

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ