‘অশান্ত হচ্ছে শান্ত সিলেট’
মাত্র দুদিনে ঘটা তিনটি ঘটনাই ভীষণ আলোচিত। এতে অশান্ত হয়ে উঠছে শান্ত সিলেট। প্রশ্নবিদ্ধ আইনশৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি। অনেকের মাঝেই এখন উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা।
ঘটনাগুলো হলো, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে ‘বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল’ অপসারণ, পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগে পুলিশ সদস্য আটক ও একদিনে পাঁচটি মামলায় এক কাউন্সিলরের জামিন পাওয়া।
সিলেটের শান্তিপ্রিয় লোকজন মনে করছেন, দল ও মতের বাইরে গিয়ে সম্প্রীতি রক্ষায় রাজনৈতিক দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একযোগে কাজ করলে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সহজেই সম্ভব।
৩০ জানুয়ারি রাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি ভেঙে ফেলা হয়। যদিও পরদিন শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ‘তাওহিদি কাফেলা’র শোকরানা সমাবেশে দাবি করা হয়, ‘আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতার দাবির মুখে ম্যুরালটি অপসারণ করেছে জেলা প্রশাসন’।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ ম্যুরাল ভাঙচুরের বিষয়টি স্বীকার করলেও জানান, রাতের আঁধারে কে বা কারা ভেঙে দিয়েছে, তিনি জানেন না।
৯ জানুয়ারি ‘সিলেটের তৌহিদি জনতা’র ব্যানারে নগরে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল অপসারণে তিনদিনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। এরপর থেকে একই দাবিতে একাধিক কর্মসূচি পালিত হয়।
কর্মসূচিগুলোতে বলা হয়, সিলেটের মাটিতে কোনো ধরনের ভাস্কর্য মেনে নেয়া হবে না। সিলেট সেনানিবাসেও শেখ মুজিবের একটা ভাস্কর্য কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। দ্রুত সেটিও অপসারণ করতে হবে।
শোকরানা সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন তাওহিদি কাফেলার আহ্বায়ক মাওলানা মুশতাক আহমদ খান। বক্তব্য দেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা রেজাউল করিম জালালি, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, হজরত শাহজালাল (রহ.) তাওহিদি কাফেলার সদস্য সচিব মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, মহানগর জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমান, মহানগর ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা হাবীব আহমদ শিহাব, মহানগর কওমি মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক মাওলানা সৈয়দ শামীম আহমদ প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন মাওলানা নিয়ামত উল্লাহ খাসদবিরী ও মুফতি রশিদ আহমদ।
আলোচিত দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ৩১ জানুয়ারি হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার শরীফে। স্থানীয় জনতার অভিযোগ, মাজারের গেটে দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট পুলিশের এক কনস্টেবল অন্য তিনজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে ‘মাজার ও ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য’ করেন। পাশে থাকা একজন এর প্রতিবাদ করেন। পরে স্থানীয় লোকজন ও শাহজালাল মাজার সংলগ্ন দরগাহ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে ওই চার পুলিশ সদস্যকে আটকে রাখে। পরে পুলিশ ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদীসহ নেতারা গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। মহানগর পুলিশের উধ্বর্তন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল থেকে অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে যান।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য হলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তৃতীয় অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে একদিনে পাঁচটি মামলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলরের ৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদের জামিন প্রাপ্তি ঘিরে। মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিস্ফোরক, অস্ত্র ও হত্যাচেষ্টার ঘটনাও। পরে আদালত প্রাঙ্গণেই রেজওয়ানের ওপর চড়াও হন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা কেন ‘স্বৈরাচারের দোসরের’ পক্ষে দাঁড়ালেন, এমন শোরগোল তোলেন তারা। প্রশ্ন তোলেন আদালতের বিএনপিপন্থী পিপি-এপিপিদের ভূমিকা নিয়ে। মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী পরে উত্তেজিতদের রোষানল থেকে রেজওয়ান আহমদকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধদের মন্তব্য ছিল, ‘বিগত ১৬ বছরের নির্যাতন-নিপীড়নের কথাগুলো কি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমাজ ও আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবকরা বেমালুম ভুলে গেছেন? সামান্য টাকার কাছে দুর্দিনের কর্মীদের অবমূল্যায়ন করছেন তারা। দল কিন্তু এখনো নির্বাচনে যায়নি/ক্ষমতায়ও বসেনি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যগুলো খেয়ালে আনেন’।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে