Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

পানিবন্দির ঝুঁকিতে লাখ লাখ মানুষ

পলিতে ভরাট হয়ে গেছে যশোরের ভবদহ অঞ্চলের ৫ নদ-নদী

District  Correspondent

জেলা প্রতিনিধি

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪

লিতে ভরাট হয়ে গেছে যশোরের ভবদহ অঞ্চলের ৫টি নদ- নদী। নদ-নদীগুলো হলো-হরিহর, আপার-ভদ্রা, হরি, ঘ্যাঁংরাইল ও বুড়িভদ্রা। ভারী বৃষ্টি হলেই এসব নদ-নদীর পানি বের হয়ে যেতে পারে না। তাই জলাবদ্ধতা নিরসন কমিটির দাবি, বর্ষা মৌসুমে এই নদ-নদীগুলোর অববাহিকায় বসবাসরত লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়বে। এ কারণে কমিটির পক্ষ থেকে এলাকায় এলাকায় নদী খননসহ টিআরএম চালুর দাবিতে জনমত গঠনে সভা-সমাবেশ অব্যাহত রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, নদ-নদীগুলো খনন করা না হলে বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেবে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরার ৯টি উপজেলার পানি নিষ্কাশনের প্রধান নদী যশোরের ভবদহ থেকে হরি নদীর দৈর্ঘ্য ১৮ কিলোমিটার। তবে হরিহর নদের ৪০ কিলোমিটার, আপার ভদ্রার ১৮ কিলোমিটার, বুড়িভদ্রার ১২ কিলোমিটার নদ-নদী পলিতে ভরাট হয়ে পড়েছে।

সূত্রে আরও জানা যায়, পলিতে ভরাটের কারণে হরিহর, আপার ভদ্রা ও বুড়িভদ্রা নদী ৫ ফুট উঁচু হয়ে গেছে। একই কারণে হরি নদী এখন নালায় পরিণত হয়েছে। এ ছাড়াও ঘ্যাঁংরাইল নদীর খর্ণিয়া ব্রিজ থেকে কেশবপুরের চটচটিয়া ব্রিজ পর্যন্ত পলিতে ভরাট হয়ে গেছে।

এই পরিস্থিতিতে হরি-ঘ্যাঁংরাইল নদী অববাহিকা অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসন কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সংশ্লিষ্ট নদ-নদীসহ বিভিন্ন ক্যানেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত ৮০টি স্লুইস গেট রয়েছে। এসব স্লুইচ গেট দিয়ে ১ লাখ ৫ হাজার হেক্টর এলাকার পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু নদ-নদীতে পলি জমে ভরাট হওয়ায় ৮০টি স্লুইচ গেটের অধিকাংশই কোনো কাজে আসছে না।
এ বিষয়ে হরি-ঘ্যাঁংরাইল নদী অববাহিকা অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এলাকায় টিআরএম চালুসহ নদ-নদী খননের দাবিতে সভা-সমাবেশ অব্যাহত রাখা হয়েছে। জনমত গঠনের মাধ্যমে আগামীতে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

হরি-ঘ্যাঁংরাইল নদী অববাহিকা অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসন কমিটির সভাপতি মহির উদ্দীন বিশ্বাস বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই হরি, আপার ভদ্রা, বুড়িভদ্রা, ঘ্যাঁংরাইলসহ হরিহর নদ খনন না করা হলে ভারী বর্ষণে কেশবপুর, মণিরামপুর, অভয়নগর, ডুমুরিয়া, ফুলতলার পূর্বাংশ ও তালা উপজেলার উত্তরাংশে জলাবদ্ধতা দেখা দেবে।

তিনি আরও বলেন, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা না হলে এ সকল অঞ্চলের প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়বে। নদ-নদী খননের পাশাপাশি নদী সংলগ্ন যে কোনো একটি বিলে রিভার টাইডাল ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু করা না হলে নদীতে প্রবাহমান ধরে রাখা সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে শুধু নদী খনন করলেই হবে না। টিআরএম ছাড়া এ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়।
এ প্রসঙ্গে ভবদহ পানি নিষ্কাশন কমিটির কেশবপুর উপজেলার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আগামী বর্ষা শুরুর আগেই নদী খনন না হলে কেশবপুরের পাশাপাশি পাশের উপজেলাগুলোর ব্যাপক এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে এই এলাকার মানুষ মহাবিপদের ভেতরে পড়ে যাবে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এতে এলাকার কৃষকদের পড়তে হবে বেকায়দায়।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান নদ-নদীগুলো কচুরিপানায় ভরে যাওয়ায় নদী না অন্য কিছু তা চেনা বড় মুশকিল হয়ে পড়েছে। কচুরিপানা অপসারণ করা না হলে নদ-নদীর সৌন্দর্য ফেরানো সম্ভব নয়।

আবু বকর সিদ্দিক দাবি করেন, ভবদহ এলাকার হরি নদী সংলগ্ন একটি বিলে টিআরএম করা না হলে এই এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাবে না।

এ ব্যাপারে যশোরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার বলেন, হরিহর নদের ৪০ কিলোমিটার, আপার ভদ্রার ১৮ কিলোমিটার, বুড়িভদ্রার ১২ কিলোমিটারসহ হরি নদী পলিতে ভরাট হয়ে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগেই এ সকল নদ-নদী খনন করা না হলে নদী অববাহিকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই নদ-নদীগুলোর খননের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

তবে খুব শীঘ্রই এসব নদ-নদী খনন করা হবে কি না তা নিশ্চিত করতে না পারলেও ভবদহ ২১ ব্যান্ড স্লুইচ গেটের উজানে ১০ কিলোমিটার খননের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ