Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

রাজনৈতিক অস্থিরতায় চোরাচালান কমেছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে

Tanmay Mondal, Kolkata

তন্ময় মণ্ডল, কলকাতা

রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

ভারত-বাংলাদেশ দীর্ঘ সীমান্ত দিয়ে মাদকদ্রব্য, জালনোট (এফআইসিএন) এবং সোনাসহ বেশিরভাগ পণ্যের চোরাচালান অনেকটাই কমেছে বলে জানিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। তবে মাদক হিসেবে ভারত থেকে বাংলাদেশে পাচার করে চড়া দামে বিক্রি হওয়া কাশির সিরাপ ফেনসিডিলের চোরাচালান তীব্রভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর ব্যাপক হামলার অভিযোগের পরও গোপনে অনুপ্রবেশের তেমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি।

বিএসএফ সূত্র বলছে, গত আড়াই মাস ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তাই চোরাচালান ও মানবপাচার কমাতে বাধ্য হয়েছেন জড়িতরা। বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের ডিআইজি এন কে পান্ডে জানান, কিছু নিষিদ্ধ জিনিসের চোরাচালান হঠাৎ কমে গেছে। তবে সতর্ক নজরদারি চালাচ্ছে বিএসএফ।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রয়েছে চার হাজার ১৫৬ দশমিক ৫৬ কিলোমিটারের সীমান্ত। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে দুই হাজার ২১৬ কিলোমিটার এবং দক্ষিণবঙ্গে সীমান্ত ৯০০ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ, যার প্রায় ৬০ শতাংশই নদীকেন্দ্রিক। এই দীর্ঘ সীমান্তের অনেকটা অংশেই অবশ্য কাঁটাতারের বেড়া নেই।

ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের ১ আগস্ট থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ভারতের দক্ষিণবঙ্গের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচারের সময় চার হাজার ১১৭ গ্রাম মাদকদ্রব্য জব্দ হয়েছে। তবে এর পরিমাণ আগের বছরগুলোতে একই সময়ে অনেক বেশি ছিল। ২০২২ এবং ২০২৩ সালে দক্ষিণবঙ্গ বিএসএফ যথাক্রমে ১৯ হাজার ৯৩৪ গ্রাম এবং ১০ হাজার ৬০২ গ্রাম মাদকদ্রব্য জব্দ করেছিল। তবে ফেনসিডিলের চোরাচালান অনেক বেড়েছে। ২০২২ এবং ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে বিএসএফ প্রায় ৩২ হাজার বোতল করে ফেনসিডিল জব্দ করেছিল, এ বছর যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার বোতলে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একই সময়কালে (১ আগস্ট থেকে ১৫ অক্টোবর) স্বর্ণের চোরাচালান ২০২২ সালে ছিল ২৪ হাজার ৯৮০ গ্রাম এবং ২০২৩ সালে ছিল ৫৬ হাজার ৮৯৭ গ্রাম। এ বছর হয়েছে ২০ হাজার ৪৭৫ গ্রাম, যা আগের বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ১ আগস্ট থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ২০২২ সালে প্রায় ৭০ কেজি এবং ২০২৩ সালে প্রায় ১৩৭ কেজি রৌপ্য অলঙ্কার জব্দ করেছিল, যা এ বছর এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫১ কেজিতে।

একইভাবে গত বছরের ১ আগস্ট থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে নয় দশমিক ৪৯ লাখ জাল ভারতীয় রুপি জব্দ হয়েছিল, যা এ বছরের একই সময়কালে মধ্যে দুই দশমিক ৯৯ লাখে নেমে এসেছে।

গত জুলাই-আগস্টে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সহিংস বিক্ষোভের সাক্ষী হয় বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশের।

যদিও এ সময়কালে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর ব্যাপক হামলার অভিযোগ উঠেছে এবং ভারত সরকারের আশঙ্কা ছিল যে, দেশটির বড় অংশের হিন্দু জনগোষ্ঠী ভারতে অনুপ্রবেশ করতে পারে। তবে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের চেষ্টার সময় ১ আগস্ট থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ২০২২ সালে ৪৭০ জন এবং ২০২৩ সালে ৫৮৭ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করা হয়। এ বছরের গত আড়াই মাসে তা কমে ৪৭৮ জনে দাঁড়িয়েছে।

ভারতের দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তে দায়িত্ব পালন করা একজন প্রাক্তন বিএসএফ কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারতে পণ্য চোরাচালান হঠাৎ কমে যাওয়া বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হতে পারে। চোরাচালানিদের এক ধরনের পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন হয়। অস্থিরতা এবং পরিবর্তনের সময় এই পৃষ্ঠপোষকতার অভাব হতে পারে। তবে বিষয়টি অস্থায়ী। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই তারা পৃষ্ঠপোষক বানিয়ে নেবেন। তাই জোরালো নজরদারি সবসময়ই দরকার’।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ