পর্যটন দিবস
কক্সবাজারে নারী পর্যটকদের নিরাপত্তায় বিশেষ গুরুত্বারোপ
কক্সবাজারে সম্প্রতি নারীদের প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন পর্যটকরা। কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া এসব নারী হেনস্তার ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। তাই পর্যটন দিবস উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্টরা পর্যটকদের, বিশেষ করে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
তারা বলছেন, পর্যটকদের কক্সবাজারমুখী করতে সার্বিক নিরাপত্তার পাশাপাশি সেবারও মানোন্নয়নে জোর দেয়া হচ্ছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদ ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘সম্প্রতি কক্সবাজারে যা ঘটেছে, তা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।’ পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত না হতে অনুরোধ করেন ট্যুরিস্ট পুলিশের এ কর্মকর্তা।
কক্সবাজারে এখন আর নিরাপত্তা সংকট নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘নারী থেকে শুরু করে সব শ্রেণির পর্যটকদের সঙ্গে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, সেজন্য পুলিশের আন্তরিকতা ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
এদিকে, প্রশাসন নিরাপত্তার আশ্বাস দিলেও নারী পর্যটকদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আফসানা জাহান (ছদ্মনাম) নারী ট্র্যাভেল গ্রুপের এক সদস্য কক্সবাজারসহ দেশের অন্যান্য পর্যটনস্পটের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বলেন, ‘শুধু কক্সবাজার নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে নারীরা বর্তমানে বেড়াতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। কেউ যখন কোথাও বেড়াতে যান, তখন সে রিলাক্স থাকার জন্য বা কাজের চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য যান। সেখানে যদি নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হয়, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু নেই।’ তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার এসে সৈকতে পুলিশ দেখা যায় না, যা খুবই ভীতিকর। এ পরিস্থিতি থেকে উতরাতে পুলিশের ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই।’
সৈকতের নিরাপত্তা নিয়ে একই কথা বলছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ট্র্যাভেলার লুফাইয়্যা শাম্মী। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার গেলে কিছু উচ্ছৃঙ্খল মানুষ সবসময় হেনস্তা করার চেষ্টা করে। যা অত্যন্ত ভয়েরও। কক্সবাজারকে জনপ্রিয় করে তুলতে নারীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে হবে।’ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসেও একজন নারী দেশের ভেতর ভয়ে একা কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন না বলে আপসোস করেন লুফাইয়্যা।
কক্সবাজারের স্থানীয়রাও নিরাপত্তার সংকট দেখছেন। ভয়ে প্রতিদিনের সান্ধ্যকালীন সৈকতে হাঁটতে যাওয়া বন্ধ করেছেন বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) সদস্য অ্যাডভোকেট প্রতিভা দাশ। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে পর্যটকদের নিরাপত্তার যে ব্যবস্থা তার ধারে কাছেও নেই কক্সবাজারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের পর্যটকদের যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশাসনের দেয়ার কথা, তারা সেটা দিতে ব্যর্থ এবং কক্সবাজার বা বাংলাদেশের যেখানেই ঘুরতে যাই পকেটের সঙ্গে নিজের সম্ভ্রম হারানোরও ভয় থেকে যায়।’ এই সংকট থেকে এবং নিরাপত্তাহীনতা থেকে যদি কক্সবাজারকে বের করা না যায়, তাহলে পর্যটন শহর হিসেবে কক্সবাজার পর্যটকবিমুখ হবে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজারে আশানুরূপ পর্যটক না থাকায় এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় অর্থনীতিতে- এমনটিই দাবি করেন কক্সবাজারের ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেল ব্যবসায়ী বেলাল আবেদিন। তিনি বলেন, ‘সৈকত ও হোটেল-মোটেল জোনে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটায় সবখানে এর প্রভাব পড়েছে। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এ সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য।’
কক্সবাজারের মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, যিনি সেখানকার হোটেল ব্যবসায়ী। নিরাপত্তা ইস্যুতে পর্যটক কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
তিনি দাবি করেন, আইনশৃঙ্খলা এখন স্বাভাবিক। তাই পর্যটকদের নিরাপত্তা সংকট নিয়ে চিন্তা না করে কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন আরিফুল। সেই সঙ্গে সেবার মান বাড়ানোর কথাও জানান তিনি।
পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের পর্যটন সেলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গনি ওসমানী ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের পর সারা দেশের মতো কক্সবাজারেও আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে, তা সত্য। তবে সাময়িক এ সংকট থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে প্রশাসন। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুবিধা বাড়াতে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি কক্সবাজারে যে কয়েকটি ছিনতাই এবং সৈকতে নারী হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত। বিষয়টিতে প্রশাসন কঠোরভাবে হস্তক্ষেপ করেছে এবং এসব বিষয় যেন আর না ঘটে সে দিকেও কঠোর নজর রেখেছে প্রশাসন।’ এ মুহূর্তে কক্সবাজার পর্যটকদের জন্য নিরাপদ এবং নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সবাই ঐকান্তিকভাবে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে