গরমে হাঁপানি রোগীদের বিশেষ সতর্ক থাকার পরামর্শ
আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরেও তার প্রভাব পড়ে। শীত গিয়ে বসন্তকাল শুরু হলেও, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে এ সময়েও তাপমাত্রা যথেষ্ট বেশি থাকছে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন বা তারতম্যের জন্য বিভিন্ন রোগের বিস্তার হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ফাল্গুনের শুরুতেই সারা দেশে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরম থেকে অনেকের অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে শ্বাসজনিত কিছু রোগের মধ্যে সর্দি-কাশি, জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা, টনসেলাইটিস, হাঁচি, এমনকি নিউমোনিয়াও হতে পারে।
একুশে পদকপ্রাপ্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, এ সময় যে কোনো বয়সী মানুষের কো-মরবিডিটি টনসেলাইটিসের ঝুঁকি বেশি। শুধু তাই নয়, ডায়াবেটিস, হাইব্লাডপ্রেশার, কিডনি রোগী, লিভারের রোগী এবং ক্যান্সারের রোগীদেরও স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।
যারা শ্বাসজনিত রোগে ভোগেন এবং যাদের মধ্যে হাঁপানি, অ্যাজমা ও দীর্ঘস্থায়ী ব্রংকাইটিস জাতীয় রোগ রয়েছে, তাদের এই গরমে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক। তিনি এসব রোগীকে নিয়মিত ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শও দিয়েছেন।
ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, এই যে হঠাৎ করেই গরম এবং শীত চলে যাওয়াতে বাতাসের আর্দ্রতা বৃদ্ধি বা ধুলাবালিতেও এসব রোগীর সমস্যা হচ্ছে। আর্দ্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধুলাবালি বেড়ে যাচ্ছে, এতে অ্যাজমারোগীসহ উল্লিখিত রোগীদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি রয়েছে। রোগীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে এবং রোদের মধ্যে অহেতুক ঘোরাফেরা না করাই উত্তম। কাজের প্রয়োজনে ঘরের বাহির হতে হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং যারা রোদে কাজ করেন, তাদের ছাতা ব্যবহার করতে হবে।
এই গরমে হাঁপানি রোগীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, শুধু গরমে নয়, বছরের যে কোনো সময় বাড়তে পারে হাঁপানির সমস্যা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে হাঁপানি যদিও বংশগত রোগ। শীতে ও গরমে শ্বাসকষ্টের সমস্যার বাড়বাড়ন্ত হয়; কিন্তু গরমেও অ্যাজমার রোগীদের সাবধানে থাকা জরুরি। শ্বাসনালির প্রদাহ এবং সংক্রমণজনিত সমস্যার কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। পাশাপাশি, শ্বাসনালিতে জমতে থাকে মিউকাস। ফলে তাদের কাশি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়।
গরমে কী কী কারণে এই সমস্যা বাড়তে পারে, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গরমকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। বাতাসও তুলনায় ভারী হয়। ফলে শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক। বিশেষ করে যাদের হাঁপানির সমস্যা আছে, তাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জায়গায় বেশিক্ষণ থাকলেও সমস্যা হতে পারে। হাঁপানির রোগীদের খোলামেলা জায়গায় থাকাই ভালো। হাঁপানির সমস্যার অন্যতম কারণ হতে পারে অ্যালার্জি। অত্যধিক গরমে র্যাশ, চুলকানি, অ্যালার্জির সমস্যা নতুন নয়। তাই দীর্ঘদিন ধরে যারা শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভুগছেন, তাদের এই গরমে সতর্ক থাকতে হবে। অনেক সময় খাবার কিংবা বিভিন্ন ধরনের পোশাক থেকে অ্যালার্জি হতে পারে, সে ক্ষেত্রে বুঝে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, রমজান মাস চলছে। এই রমজানে রাস্তাঘাটে বিভিন্ন ধরনের মজাদার ইফতারি কিনে খাওয়ার জন্য পসরা সাজিয়ে রাখা হয়, এসব খাদ্য এড়িয়ে চলতে হবে। শরীর ঠান্ডা রাখার নামে রাস্তার পাশে খোলা বাহারি ঠান্ডা জাতীয় শরবতসহ আখের রস না খাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
এ অবস্থায় শিশুদের সুরক্ষায় রোদ পরিহারের পাশাপাশি যত্রতত্র পানি, রাস্তার পাশের খোলা জুস-শরবত, আখের রস ফলের শরবত পান করা থেকে বিরত থাকা এবং আইসক্রিম না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক। বরং এ সময় বাচ্চাদের ঘরে ফুটানো পানি খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
আইসিডিডিআর,বির চিকিৎসকরা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে অতিরিক্ত গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে। অনিরাপদ পানি ও খাবার গ্রহণের কারণে ডায়রিয়া বেড়ে গেছে। প্রচণ্ড রোদ ও গরমে শিশুরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাইরে যেতে হলে অবশ্যই বাসা থেকে বিশুদ্ধ পানি নিতে হবে, প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করতে হবে। এই গরমে বাচ্চাকে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে।
গরমে বাচ্চারা পানি নিয়ে খেলতে পছন্দ করে, তাই ৫-১৫ মিনিটের মধ্যে গোসল শেষ করতে হবে। গোসলের সময় এবং সপ্তাহে অন্তত ২ দিন চুলে শ্যাম্পু করতে হবে এবং গোসলের পর খুব ভালোভাবে চুল শুকাতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে