স্পর্শ, দৃষ্টিহীনের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে সাহিত্যের আলো
স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা একটি বিশেষ প্রকাশনা সংস্হা, যারা শুধু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্যই বই প্রকাশ করে। গত কয়েক বছরের মত এবারও প্রকাশনা সংস্থাটি, অমর একুশে বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বাইরে যাওয়ার ফটকটির কাছে অবস্থিত ড. মুহাম্মদ এনামুল হক ভবনের সামনের সেই কোণটিতে তাদের বইয়ের সংগ্রহ সাজিয়ে বসেছে।
অমর একুশে বইমেলায় স্পর্শই একমাত্র প্রকাশনা সংস্থা যারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদেরকে বই পড়ার সুযোগ করে দিয়ে তাদের কাছে সাহিত্যের স্বাদ পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করে যাচ্ছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় এবারের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা নাজিমের কথা। তিনি জানান, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও তিনি শুধুমাত্র বই পড়ার সুযোগ পেতেই বইমেলায় আসেন।
নাজিম বলেন, “আমার স্বপ্ন অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার, যেন ভবিষ্যতে বইমেলায় আরও বেশি করে আসতে পারি। বই পড়ার ক্ষেত্রে আমার পছন্দের বিষয় রাজনীতি ও ইতিহাস। কিন্তু আমার জন্য এ সম্পর্কিত বই খুব কমই আছে। তবে এখানে আমি অন্তত কিছু বই পড়ার সুযোগ পাই।”
অন্যদিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা নাবিলা বিন্তে জান্নাতও স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশে ব্রেইল বই ছাপানোর ক্ষেত্রে স্পর্শই সর্বপ্রথম এগিয়ে এসেছে।শুধু তাই নয়, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বইয়ের পাশাপাশি সাহিত্যের বইগুলো পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছে সংস্থাটি। যে বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা এতদিন অন্য কারও নজরেই পড়েনি, সেটি নিয়েই কাজ শুরু করেছে স্পর্শ।
তবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাড়াও, সালেমা আলির মত স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তির অধিকারীদের অনেকেই মনে করেন, এই ধরনের সুযোগ বইমেলার অন্যান্য স্টলেও ছড়িয়ে দেওয়া উচিৎ। যদিও এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবে কেবল আলোচনাতেই আটকে আছে বলে মনে করেন তিনি।
স্পর্শর সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত নন্দিতা সাহা জানান, ২০১৪ সাল থেকে তারা বইমেলায় অংশগ্রহণ করে আসছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১১৯টি ব্রেইল বই প্রকাশিত হয়েছে এবং এ বছর আরও ২৯টি নতুন বই এসেছে।
তিনি দুঃখের সঙ্গে জানান, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পড়ার জন্য নানা ধরনের বই ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশিত হতে পারে। কিন্তু অনেক প্রকাশনা সংস্থা কপিরাইটের জটিলতার কারণে প্রায়ই সেগুলো প্রকাশ করতে আগ্রহ দেখায় না। যে কারণে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা অনেক ভালো ভালো বই পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার প্রতিষ্ঠাতা নাজিয়া জাবীন বলেন, “স্পর্শ বিশ্বাস করে, প্রত্যেকটি মানুষের বই পড়ার মাধ্যমে জ্ঞানলাভের অধিকার রয়েছে। আর তাই আমরা তাদের কাছে এই সুযোগটি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
তিনি এই উদ্যোগের উল্লেখযোগ্য দিকটি তুলে ধরে বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শিশুদের সমাগম অনেক বেড়েছে।এমনকী, পার্বত্য চট্টগ্রামের মত প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুরা বইমেলায় ভিড় জমাচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল স্পর্শর এই উদ্যেগের প্রশংসা করে বলেন, আলোচনা ও সম্ভাব্য বাস্তবায়নের জন্য তারা বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন।
এদিকে, বইমেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ড. কে এম মিজাহিদুল ইসলাম ভিউজ বাংলাদেশকে জানান, ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৮৭৮টি বই নতুন প্রকাশিত হয়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মেলায় সবচেয়ে বেশি বই আসে, যে সংখ্যাটি ছিল ২৯৮টি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে