তীব্র গরমে শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়ান
বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষ সারা বছরই একরকম মানবেতর জীবনযাপন করেন। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় তাদের লড়াই করতে হয় বৈরী প্রকৃতির বিরুদ্ধে। কৃষক-শ্রমিক-জেলে-রিকশাচালকদের কষ্টের অন্ত নেই। নিম্ন আয়ের মানুষকে দিন এনে দিন খেতে হয়। যতই বিপর্যয় নামুক, তাদের পথে না বেরিয়ে উপায় থাকে না। এর মধ্যে গত তিন দিন ধরে সারা দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। রোদে গনগনে আগুনের উত্তাপ। এই তীব্র গরম মাথায় নিয়েই শ্রমজীবী মানুষদের কাজ করতে হচ্ছে।
এ গরমে জনজীবনে প্রচণ্ড অস্বস্তি বিরাজ করছে। ঘরের বাইরে এলে খরতাপে শরীর ঝলসে যাওয়ার মতো যন্ত্রণা বোধ হয়। একই সঙ্গে ঘাম ঝরতে থাকে প্রচুর। তৃষ্ণা বাড়ে। সব মিলিয়ে ভীষণ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ এবং যারা খোলা আকাশের নিচে রোদে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন, তাদের কষ্ট মাত্রা ছাড়া। তিন দিন আগে তাপপ্রবাহের মধ্যে ঢাকা নার্সিং কলেজের কাছে রিকশা চালানোর সময় এক রিকশাচালক অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন।
সরাসরি কায়িক শ্রম না করলেও প্রখর রোদে লম্বা সময় ধরে খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে হয় শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের। তাদের কষ্টও অসহনীয়। তাদের সেবায় ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত পানি, গ্লুকোজ, খাওয়ার স্যালাইন সরবরাহ করা হয়েছে।
ঢাকা শহরের অবস্থাই সবচেয়ে বেশি খারাপ। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকা শহরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৯২ শতাংশ। আবহাওয়া বিভাগের পরিভাষায় এটি মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ। রাজশাহী, যশোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা- এসব অঞ্চলেও চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। দিনের তাপমাত্রা কমবে-এমন সম্ভাবনা নেই; বরং ১ থেকে ২ ডিগ্রি বাড়তে পারে-এমন পূর্বাভাসই দেওয়া হয়েছে।
রাজধানী ঢাকা শহরে অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষের বাস। গাড়ি-রিকশা চালক থেকে শুরু করে নির্মাণ শ্রমিক, ভাসমান দোকানদার, ফুটপাতের ব্যবসায়ী। দুপুরবেলা যখন পথে বেরোনই অসম্ভব তখনো তাদের বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে। একটু কাজ করেই তাদের ছায়ার নিচে গিয়ে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। সেই ছায়াটুকুও যারা না পান, তারা রোদে পুড়তে পুড়তে ছটফট করেন।
রিকশাচালকদের দেখা যাচ্ছে ক্ষণিক দূরত্বের একটি ট্রিপ নিয়ে গিয়েই তাদের দম ফুরিয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার পর, পানি খেয়ে তারা শান্ত হন। এ ক্ষেত্রে তাদের দৈনিক আয়ও কমে যাচ্ছে। আয় কমলেও গরমে ব্যয় প্রচুর। একটু লেবুর শরবত খেতে গেলেও বাড়তি দশটি টাকা গুনতে হয়। ডাব খাওয়ার সৌভাগ্য হয়তো অনেকেরই নেই, মৌসুমি ফল তরমুজ-বাঙ্গি খেলেও এ সময় একটু আরাম হয়; কিন্তু কজন শ্রমজীবী মানুষের কপালে তা জোটে? গরম পড়েছে দেখে এসব ফলেরও দাম বাড়ছে।
মানুষ মানুষের জন্য। শ্রমজীবী এসব মানুষের বিপদে সমাজের সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষ এগিয়ে আসবেন তাই আমাদের কাম্য। বৃষ্টির দিন রিকশায় চড়লে অনেকে রিকশাভাড়াটা একটু বাড়িয়ে দেন। গরমের মধ্যেও অনেকে তা দিচ্ছেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেকেই সহযোগিতা করছেন। শ্রমজীবী মানুষের সাহায্যে সরকারও এগিয়ে আসবে তাও আমরা আশা করব। এর মধ্যেই অনেকে বলছেন, এই তাপপ্রবাহকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হোক।
সে ক্ষেত্রে অন্তত বয়স্ক শ্রমজীবী মানুষদের কাজ থেকে অব্যহতি দিয়ে তাদের দৈনিক মজুরিটুকুর ব্যবস্থা করা যায় কি না, সংশ্লিষ্ট কর্মস্থল, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই ভেবে দেখা জরুরি, যাদের রক্ত ও ঘামে গাড়ির চাকা ঘুরে, কল-কারখানা চলে, ফসলের মাঠে ফসল ফলে প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণের সময় তাদের প্রতি সমাজের সুবিধাপ্রাপ্ত সবারই আরও সদয় হতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে