Views Bangladesh Logo

পারিবারিক সহিংসতা কমানোর জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি

দেশে বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা, সহযোগিতা চেয়ে জাতীয় হেল্পলাইন ১০৯-এ প্রতিদিন গড়ে কল আসে ৭ হাজার। চলতি বছরের প্রথম মাসেই কল এসেছে ৭৯ হাজার ৭১৭টি, গত বছর কল এসেছে ১৯ লাখ ৪৫ হাজারের বেশি। এসব পারিবারিক সহিংসতার শিকার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারী, কিশোরী ও শিশুরা যা দেশবাসীর অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

গতকাল মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, কেউ কল দেন উদ্ধারের সহযোগিতা চেয়ে, কেউ কল দেন তথ্য পেতে। আবার অনেক কিশোরীই বাল্যবিয়ে রোধে সহযোগিতা পেতে কল দেয়। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে চালু করা হেল্পলাইন ১০৯-এ আসা ফোনকলের অর্ধেকই হলো পারিবারিক সহিংসতাকেন্দ্রিক। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ হেল্পলাইন পরিচালনা করে থাকে।

বাংলাদেশে পারিবারিক সহিংসতার খবর নতুন নয়। প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে এসব খবর আসে। বাংলাদেশে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ থাকা সত্ত্বেও পারিবারিক সহিংসতা কমেছে বলা যাবে না, বরং কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে। বেড়েছে সহিংসতার ধরন ও মাত্রা। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নারী ও শিশুদের হত্যা, আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটে; কিন্তু সম্প্রতি দেশে পারিবারিক সহিংসতার কারণ কী? এটা কি দেশের অর্থনৈতিক অনিশ্চিয়তা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তৈরি হয়েছে?

এ নিয়ে গবেষণা জরুরি। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা যায়, পারিবারিক সহিংসতার পেছনে প্রধান কারণ যৌতুকের দাবি পূরণ করতে না পারা এবং পারিবারিক সহিংসতার প্রতিকার সন্ধানের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে আয়, ভরণপোষণ এবং নিরাপত্তার সীমিত বিকল্প থাকা। গবেষণাটি আরও দেখিয়েছে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হওয়া নারী প্রথমে আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে পারিবারিকভাবেই বাবা-মা বা কোনো মুরব্বির সহযোগিতায় তা সমাধান করার চেষ্টা করেন, একেবারে বাধ্য না হলে আইনি ব্যবস্থা নিতে চান না, বাংলাদেশে সেরকম সংস্কৃতিও নেই যা সহিংসতার মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে। বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বাল্যবিবাহ প্রক্রিয়াটাই একটা পাারিবারিক সহিংসতা।

এরকম অনেক পারিবারিক সহিংসতার খবর সংবাদমাধ্যমেও আসে না, হেল্প লাইনে সহযোগিতা চেয়েও অনেক কল করে না, এসব খবর থেকে যায় আড়ালে; কিন্তু বিষয়টি সমাজ-রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। পরিবার একটি মানুষের পরম আশ্রয়, শান্তির জায়গা, মায়া-মমতা-ভালোবাসার জায়গা। সেই আশ্রয় ছুটে গেলে কারও জীবনেরই আর অর্থ থাকে না। বিশেষ করে নারী-শিশুরা পরিবারের ওপরই নির্ভরশীল এবং পরিবারের বন্ধন ছুটে গেলে তারা অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়ে।

সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশে ডিভোর্সের সংখ্যাও বাড়ছে। এ বিষয়গুলো কেবল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকই নয়, সাংস্কৃতিকও। সম্প্রতি আমাদের দেশে সংস্কৃতির বিরাট এক অবক্ষয় ঘটছে লেখাই বাহুল্য। এখানে ব্যক্তির বিকাশ হয়নি, ব্যক্তির প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধার শিক্ষা অপ্রতুল। তা ছাড়া সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনগুলোও আলগা হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। এ নিয়ে বহু গবেষণার প্রয়োজন। সমাজ-রাষ্ট্রের সুনজর প্রয়োজন; কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র কি এতটা সচেতন? ব্যক্তির অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের রাষ্ট্র এখনো তত সচেতন নয়; কিন্তু পারিবারিক সহিংসতা কমানোর জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি। এটা কেবল আইনি প্রক্রিয়াতেই সমাধান সম্ভব না, তার জন্য প্রয়োজন সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি। আমরা চাই রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব বিবেচনা করেই সরকার এদিকে দ্রুত নজর দিক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ