পরিসংখ্যানগত বিভ্রান্তি উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধক
গল্পটি ব্রিটিশ আমলের। ব্রিটিশ বাংলায় একবার সারা দেশে সরকারি উদ্যোগে পশু শুমারির উদ্যোগ নেয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল, দেশের গবাদি পশুর পূর্ণাঙ্গ এবং সঠিক হিসাব লিপিবদ্ধ করা। সারা দেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে গবাদি পশুর শুমারি শুরু হয়। তৃণমূল অর্থাৎ ইউনিয়ন কাউন্সিল পর্যায় থেকে এই শুমারি কার্যক্রম শুরু হয়। একটি ইউয়নে পশু শুমারি নির্দেশনা পৌঁছুতে অস্বাভাবিক বিলম্ব হয়ে যায়। যেদিন থানা পশুসম্পদ অধিদপ্তরে রিপোর্ট দাখিলের নির্ধারিত তারিখ, তার মাত্র এক দিন আগে একটি ইউনিয়নের কাছে এই নির্দেশনা গিয়ে পৌঁছে। চেয়ারম্যান পশু শুমারির নির্দেশনা পেয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি ভাবতে থাকেন কি করে মাত্র এক দিনের মধ্যে সারা ইউনিয়নের গবাদি-পশুর হিসাব বা পরিসংখ্যান বের করা সম্ভব? চেয়ারম্যান তার আসনে বসে গালে হাত দিয়ে চিন্তামগ্ন হয়ে পড়েন; কিন্তু কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছিলেন না।
এমন সময় ইউনিয়ন কাউন্সিলের সেক্রেটারি চেয়ারম্যানের কক্ষে প্রবেশ করেন। চেয়ারম্যানকে এভাবে চিন্তামগ্ন দেখে সেক্রেটারি বিনীতভাবে জানতে চান হুজুর কি এমন সমস্যা যে, এভাবে চিন্তা করছেন? চেয়ারম্যান সেক্রেটারির কথায় কোনো জবাব দিলেন না। সেক্রেটারি একই কথা আবার জানতে চাইলে চেয়ারম্যান কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে বলেন, আগামীকাল পশু শুমারির রিপোর্ট দাখিলের শেষ তারিখ। এখন কি করি বলুন তো। নির্ধারিত সময়ে রিপোর্ট দিতে না পারলে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। আর এক দিনের মধ্যে তো এই অসাধ্য কাজ কোনোভাবেই সমাধা করা সম্ভব নয়। সেক্রেটারি মুচকি হেসে বললেন, হুজুর এ আর কঠিন কি? আমাকে আজকের এই অর্ধবেলা ছুটি দিন, আমি আপনাকে আগামীকালের মধ্যে পুরো ইউনিয়নের গবাদি পশুর হিসাব বের করে দিচ্ছি। চেয়ারম্যান কিছু দ্বিধান্বিতভাবে সেক্রেটারিকে অর্ধবেলা ছুটি দিলেন।
পরদিন সকালবেলা চেয়ারম্যান সাহেব সেক্রেটারির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় সেক্রেটারি হন্তদন্ত হয়ে চেয়ারম্যানের কক্ষে প্রবেশ করে বললেন, হুজুর আমাদের ইউনিয়নে ৫ হাজার গরু, ৩ হাজার ৫০০টি ছাগল, দুটি মহিষ এবং ২১৩টি ভেড়া আছে। চেয়ারম্যান অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে সেই রিপোর্ট থানা পশুসম্পদ অধিদপ্তরে প্রেরণ করলেন। চেয়ারম্যান একটি বিরাট বিপদ থেকে বেঁচে গেলেন। তিনি সেক্রেটারির ওপর খুবই খুশি হলেন। তবে একটি বিষয় চেয়ারম্যানকে খুবই ভাবিয়ে তোলে। তিনি ভাবতে থাকলেন সেক্রেটারি কীভাবে এই অসাধ্য সাধন করলেন। তিনি সেক্রেটারিকে একান্তে ডেকে জানতে চাইলেন, তুমি কীভাবে এই অসাধ্য সাধন করলে? সেক্রেটারি বললেন, এ আর কঠিন কি? আমি আপনার কাছ থেকে ছুটি নিয়ে সামনের মাঠে যাই। সেখানে যেসংখ্যক গরু, ছাগল এবং ভেড়া চরে বেড়াচ্ছিল তা গুনলাম। মাঠের আয়তন আমার জানাই ছিল। মাঠের আয়তন এবং সেখানে চড়ে বেড়ানো গরু-ছাগলের সংখ্যা দিয়ে পুরো ইউনিয়নের অনুপাত বের করি। এভাবেই আমি ইউনিয়নের পশুসম্পদের হিসাব বের করি। চেয়ারম্যান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, আপনার হিসাব সবই ঠিক আছে। তবে দুটি ছাগল হিসাব থেকে বাদ পড়ে গেছে। এর একটি হচ্ছি আমি আর একটি হচ্ছেন আপনি।
এটি একটি রূপক গল্প। তাই তার সত্যতা খুঁজতে যাওয়া বৃথা। তবে গল্পটি যে একেবারে নিরর্থন নয়, তা জোর দিয়েই বলা যেতে পারে। কারণ আমরা অহরহই তথ্যগত বিভ্রাটির শিকার হচ্ছি। কোন তথ্য সঠিক আর কোন তথ্য ভুল বা বিভ্রান্তিকর, তা বুঝে ওঠা অনেক সময়ই আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে আমরা ভ্রান্তির বেড়াজালে আবর্তিত হয়ে শুধু ঘুরপাক খাচ্ছি। অথচ যে কোনো পরিকল্পনা বা কাজ করার জন্য সঠিক পরিসংখান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বব্যাপীই পরিসংখ্যানগত বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যায়। পরিসংখ্যানগত বিভ্রান্তি আমাদের কীভাবে বিভ্রান্ত করছে এখানে আমি সেটাই দেখানোর চেষ্টা করব। যে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণকালে সঠিক পরিসংখ্যান জানা একান্ত প্রয়োজন; কিন্তু আমাদের দেশের এক শ্রেণির মানুষ তাদের নিজেদের মনগড়া পরিসংখ্যান দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চলেছেন। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যারা এসব বিভ্রান্তিমূলক পরিসংখ্যান প্রচার করেন তারা অত্যন্ত কৌশলের সঙ্গে কাজটি করেন যাতে প্রমাণ করার কোনো সুযোগ থাকে না। তারা অনেকটা বীরবলীয় কায়দায় পরিসংখ্যানগত বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।
মোঘল সম্রাট আকবর অত্যন্ত বিচক্ষণ একজন শাসক ছিলেন। তার সভায় বীরবল নামে একজন রসিক সভাসদ ছিলেন। তার কাজই ছিল সম্রাটকে আনন্দ দেয়া। আকবর মাঝে মাঝেই বীরবলকে অদ্ভুত সব প্রশ্ন করে বিব্রত করার চেষ্টা করতেন। একবার সভায় উপস্থিত বীরবলকে সম্রাট আকবর প্রশ্ন করেন, আচ্ছা বলুন তো দিল্লি শহরে মোট কতটি কাক আছে? বীরবল বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করেই উত্তর দিলেন, দিল্লি শহরে মোট ৯ হাজার ৯৯৯টি কাক আছে। যদি গুনে দেখা যায় কাকের সংখ্যা এর চেয়ে বেশি, তাহলে বুঝতে হবে কিছু অতিথি কাক বাইরে থেকে দিল্লিতে বেড়াতে এসেছে। আর যদি কাকের সংখ্যা কম হয় তাহলে বুঝতে হবে দিল্লির কিছু কাক বাইরে বেড়াতে গেছে। বীরবলের উত্তর শুনে আকবর বুঝতে পারলেন, তাকে ঠকানো এত সহজ হবে না। আমাদের দেশের এক শ্রেণির পণ্ডিত ব্যক্তিদের মাঝে বীরবলীয় চরিত্রের প্রবল উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করা যায়।
কয়েক বছর আগে দেশের একজন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ এ মর্মে তথ্য প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতিদিন ৫ হাজার কোটি টাকার জাল নোট প্রবেশ করে। বিভিন্ন মহল থেকে তার দেয়া এই পরিসংখ্যানের ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপিত হতে থাকে। আমি নিজেও একটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকে তার দেয়া তথ্য চ্যালেঞ্জ করে নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলাম। সেখানে উল্লেখ করেছিলাম এবং তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে প্রমাণ করেছিলাম, যদি প্রতিদিন বাজারে ৫ হাজার কোটি টাকার জাল নোট প্রবেশ করে তাহলে বছরে যে জাল নোট বাজারে আসে, তার পরিমাণ মোট জিডিপির চেয়েও বেশি। পরে বিভিন্ন মহলের আপত্তির কারণে ভদ্রলোক একটি ব্যাখ্যা প্রদান করেন। সেখানে তিনি বলেন, প্রতিদিন ৫ হাজার কোটি টাকার জাল নোট বাজারে প্রবেশ করে না। ৫ হাজার বার জাল নোট হাত বদল হয়। তার এই তথ্যও ছিল মনগড়া। আমাদের দেশে অসুবিধা হচ্ছে, কেউ বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করলেও তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। বিশেষ করে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট কেউ বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করলে তাকে শাস্তি প্রদানের পরিবর্তে উৎসাহিত করা হয়।
একই অর্থনীতিবিদ কিছুদিন আগে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেন। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ৫০ বছরে ১ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। তিনি সম্ভবত খেয়াল করেননি ৫০ বছরে ১ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হলে বছরে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার কোটি টাকা। অথচ ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনট্রিগ্রিটি (জিএফআই) তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল, বাংলাদেশ থেকে শুধু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে বছরে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়। আমরা কার পরিসংখ্যান বিশ্বাস করব? আমি দায়িত্ব নিয়েই বলতে পারি কোনো কর্তৃপক্ষের পক্ষেই পাচারকৃত অর্থ, মানি লন্ডারিংকৃত অর্থেও প্রকৃত পরিমাণ প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
যারা অর্থ পাচার করে বা মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত তারা কখনোই তাদের অবৈধ অর্থের পরিমাণ কারও নিকট প্রকাশ করে না। তাহলে যারা এ ধরনের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেন, তারা কীভাবে এই তথ্য পেলেন? যারা এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য-পরিসংখ্যান প্রকাশ করেন, তারা খুব ভালোভাবেই জানেন তাদের দেওয়া তথ্য বা পরিসংখ্যান কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন না। কারণ কারও কাছে এ-সংক্রান্ত প্রকৃত তথ্য নেই। তাই তারা মনের আনন্দে এসব পরিসংখ্যান প্রকাশ করে চলেছেন। বর্তমান বিশ্বে মানি লন্ডারিং একটি বহুল আলোচিত অর্থনৈতিক প্রসঙ্গ। প্রতিটি দেশই মানি লন্ডারিং নিয়ে বিব্রত-চিন্তিত। বিশ্বব্যাপী মানি লন্ডারিং বৃদ্ধি পাবার অর্থই হচ্ছে বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটছে। যারা মানি লন্ডারিং করেন তারা কালো টাকা বা অবৈধ অর্থ বৈধ করার জন্যই এই কাজটি করে থাকেন।
মানি লন্ডাররা কখনোই তাদের অর্থের উৎস এবং পরিমাণ কারও কাছে প্রকাশ করেন না; কিন্তু কিছু মানুষ আছেন, যারা নির্দ্বিধায় মানি লন্ডারিংকৃত অর্থের পরিমাণ প্রকাশ করে চলেছেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর কি পরিমাণ অর্থ মানি লন্ডারিং করা হয়, তা জানতে চাইলে এক এক জন অর্থনীতিবিদ এক এক রকম পরিসংখ্যান দেবেন। আসলে তাদের কারও দেয়া পরিসংখ্যানই সঠিক নয়। একবার একটি দায়িত্বশীল সূত্র থেকে দাবি করা হয়েছিল, বাংলাদেশে প্রতি বছর যে অর্থ মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বৈধতা দেয়া হয়, তার পরিমাণ জিডিপির ৩৭ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত। বিশ্বব্যাংকের একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট একবার বলেছিলেন, বিশ্বে প্রতি বছর যে বিপুল পরিমাণ অর্থ মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বৈধতা দেয়া হয়, তার পরিমাণ মোট বিশ্ব জিডিপির ২ থেকে ৫ শতাংশ। অঙ্কের হিসাবে, যার পরিমাণ ৮৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার থেকে ২ লাখ কোটি মার্কিন ডলার।
ওপরে যে পরিসংখ্যান দেয়া হলো, তা যে কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়, তা বেশি ব্যাখ্যা করে বোঝানোর প্রয়োজন হয় না। আমরা সাধারণত অনুমাননির্ভর কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশ করার ক্ষেত্রে দুটি অঙ্ক ব্যবহার করে থাকি। তবে ব্যবহারিত অঙ্কের মধ্যে গ্যাপ থাকে খুবই সামান্য। যেমন আমরা যদি কোনো পরিসংখ্যান সম্পর্কে নিশ্চিত না হই তাহলে বলি ১০ থেকে ১২ অথবা ৯৫ থেকে ১০০; কিন্তু কখনোই বলি না যে ৮৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার থেকে ২ লাখ কোটি মার্কিন ডলার। অথবা ৩৭ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশ। এ ধরনের বিভ্রান্তিকর পরিসংখ্যান প্রকাশ না করে বিপুল অঙ্ক বা প্রচুর অর্থ বলাটাই যৌক্তিক। বিশ্বব্যাংকের একজন সাবেক প্রেসিডেন্টের পক্ষে এমন অদ্ভুত পরিসংখ্যান দেয়া কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। ফলে যে যেভাবে পারছে বিভ্রান্তিকর পরিসংখ্যান প্রকাশ করে চলেছেন। একটি মজার ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়, আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান নিয়ে। সরকার সব সময়ই চেষ্টা করেন কীভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়ে দেখানো যায়। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবির মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রতি বছরই বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির সম্ভাব্য পরিসংখ্যান প্রকাশ করে থাকে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এসব সংস্থা বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রাক্কলন প্রকাশ করে, তা বাংলাদেশ সরকারের প্রদর্শিত বা অর্জিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির চেয়ে এক বা দুই শতাংশ কম; কিন্তু বছরান্তে সরকার অথবা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কেউই তাদের দেয়া পরিসংখ্যান সংশোধন করে না। একটি নির্দিষ্ট বছরে কোনো জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নিশ্চয়ই দুই বা তিন রকম হতে পারে না। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সব সময়ই সরকারের অর্জনগুলোকে বড় করে দেখানোর দেখানোর চেষ্টা করে থাকে। আর নেতিবাচক অর্জনগুলো কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করে।
পরিসংখ্যান ব্যুরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে, তা সাধারণ মানুষ খুব একটা বিশ্বাস করে বলে মনে হয় না। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রতি বছর পরিসংখ্যান পকেট বুক নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে থাকে। এতে সংক্ষিপ্তাকারে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংযোজিত হয়। গত শতাব্দীর ’৯০-এর দশকে আমি পরিসংখ্যান ব্যুরোর তিন বছরের পকেট বুক পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের আয়তন নিয়ে বিভ্রান্তিতে পতিত হই। তিন বছরের বইয়ে বাংলাদেশের আয়তন তিন রকম লেখা হয়। আমি একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানিয়েছিলেন, মাঝখানের বছরের বইয়ে যে আয়তন উল্লেখ করা হয়েছে সেটাই সঠিক। একবার ভাবুন তো বিষয়টি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো যদি বাংলাদেশের আয়তন কত সেই তথ্যটিই সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে না পারে তাহলে তাদের ওপর মানুষ আস্থা রাখবে কীভাবে?
যদি কোনো পরিসংখ্যানের বিষয়ে নিশ্চিত এবং সর্বজন স্বীকৃত পরিসংখ্যান না পাওয়া যায়, তাহলে সে ধরনের পরিসংখ্যান উল্লেখ না করাই উত্তম। এতে মানুষ বিভ্রান্তি হবে না। কোনো পরিসংখ্যানের ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়া গেলে সেখানে বিপুল পরিমাণ বা প্রচুর পরিমাণ শব্দ দিয়ে পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝানো যেতে পারে। যেমন প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ৮৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার থেকে ২ লাখ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ মানি লন্ডারিং করা হয়, এটা না বলে যদি বলা হতো বিপুল পরিমাণ অর্থ মানি লন্ডারিং হয়, তাহলে সেটা অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য হতো। মানুষও বিভ্রান্তির কবল থেকে মুক্তি পেতো।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে