ইন্টারনেট খাতে ভারত নির্ভরতা সীমিত করার পদক্ষেপ
বাংলাদেশের ইন্টারনেট খাতে ভারত নির্ভরতা কমাতে এবং ব্যান্ডউইথ আমদানিতে ভারসাম্য আনার জন্য নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আগামী ১ মার্চ থেকে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠানগুলো ভারত থেকে ৫০ শতাংশের বেশি ব্যান্ডউইথ সঞ্চালন করতে পারবে না।
বর্তমানে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রায় ৬০ শতাংশ ভারত থেকে আমদানি করা হয়; যা আন্তর্জাতিক টেরিস্ট্রিয়াল কেবল (আইটিসি) কোম্পানির মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়। তবে বিটিআরসি নতুন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই হার সীমিত করতে চায়। একইসঙ্গে দেশীয় অবকাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়।
বিটিআরসির নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, আগামী ১ মার্চ থেকে আইআইজি অপারেটররা তাদের মোট ব্যান্ডউইথের ৫০ শতাংশের বেশি আইটিসি অপারেটরদের মাধ্যমে আনতে পারবে না।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে ভারত থেকে আমদানি করা ব্যান্ডউইথের হার আরও কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসির (বিএসসিপিএলসি) মাধ্যমে সাবমেরিন কেবল থেকে সরবরাহ বাড়িয়ে ৬০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নেয়া হয়েছে।
নতুন নির্দেশিকার আওতায়, আইআইজি অপারেটররা তাদের মোট ব্যান্ডউইথের ১০ শতাংশ পর্যন্ত স্যাটেলাইট আর্থ স্টেশন বা ভিএসএটি ব্যবহার করতে পারবে ব্যাকআপ ক্যাপাসিটি হিসেবে, যতক্ষণ না বিকল্প আইএলডিসি রুট পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে বিটিআরসির পূর্ব অনুমোদন নেয়া বাধ্যতামূলক।
এছাড়া আইটিসি অপারেটররা সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ এনে ব্যবসা করলেও সরকার কম রাজস্ব পাচ্ছিল, কারণ সাবমেরিন ক্যাবল থেকে আসা রেভিনিউ শেয়ারিং হার ছিল ৩ শতাংশ, কিন্তু আইটিসি অপারেটরদের জন্য ছিল মাত্র ১ শতাংশ।
ইন্টারনেট মার্কেট বিশ্লেষকদের মতে, বিটিআরসির জারি করা নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ভারত থেকে আন্তর্জাতিক টেরিস্ট্রিয়াল কেবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ আমদানি কমানোর ফলে দেশের জন্য বছরে ১ কোটি ২০ লাখ ডলার সাশ্রয় হবে। একইসঙ্গে সরকারের রাজস্ব ভাগাভাগির আয় বাড়বে প্রায় ১০ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ফেসবুক, গুগল, আকামাই এবং ইউটিউবের মতো বড় কন্টেন্ট প্রোভাইডাররা ভারতকে কর প্রদান করে দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা চালালেও ভবিষ্যতে এই ধারা ক্রমান্বয়ে কমে আসবে। নতুন নীতিমালার ফলে বহুজাতিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বাংলাদেশে তাদের ডাটা সেন্টার স্থাপনে মনোযোগী হতে হবে।
বিটিআরসির মাধ্যমে দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামো উন্নত করার পাশাপাশি কৌশলগত নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যও রাখছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে