পদে পদে চাঁদাবাজি বন্ধ করুন
বাংলাদেশের বহু ব্যবসাই যে চাঁদাবাজির ওপর চলে এ কথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। দীর্ঘদিন ধরেই এটা বাংলাদেশের এক ভয়াবহ দুর্নীতিচক্র। সরকার আসে-যায়; কিন্তু চাঁদাবাজির ধরন একই থেকে যায়। গণঅভ্যুত্থানের পর যখন রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্কার হচ্ছে তখন আশা করা গিয়েছিল চাঁদাবাজিও কিছুটা কমবে; কিন্তু কমার লক্ষণ তো নেই-ই, কিছু ক্ষেত্রে বরং বেড়েছে। ঢাকার একজন ব্যবসায়ী সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আগে চাঁদা দিতে হতো একজনরে, এখন দিতে হইতেছে চার-পাঁচজনরে’।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে একের পর এক চাঁদাবাজির কারণে রীতিমতো আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ঢাকার অনেক ব্যবসায়ী। রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত না থাকলেও মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তারা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী পরিচয়ে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দলটি ইতোমধ্যে প্রায় দেড় হাজারের মতো নেতাকর্মীকে বহিষ্কারও করেছে; কিন্তু তারপরও তাদের নিয়ন্ত্রণে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে দলটিকে। এ অবস্থার জন্য সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকেই দুষছেন। বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী বাংলাদেশের কালচারটাই ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। তাই এখন চাঁদা ছাড়া আর কোনো কাজ হয় না।
কিন্তু আমরা জানি এই চাঁদাবাজি সেই এরশাদের আমল থেকেই চলছে। বিএনপিও দুবার ক্ষমতায় ছিল, তখনো দেদার চাঁদাবাজি চলেছে। এখন কথায় কথায় বিগত আওয়ামী লীগের কাঁধে সব দোষ চাপিয়ে দিলে হবে না। আওয়ামী লীগ তো বিদায় হয়েছে, তাহলে এখনো কেন চাঁদাবাজি চলছে? বিএনপির নেতাকর্মীরা যদি চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকে তার দায় বিএনপিকেই নিতে হবে এবং সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধের ব্যবস্থা অবশ্যই অতি শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম কয়েক মাস আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক ছিল। আমরা দেখেছি কখন কাকে ধরে কী বিপদে পড়ে এই ভয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চুপচাপ ছিল। এই সুযোগে দেশে অনেক ধরনের অপরাধই বেড়েছে। ছিনতাই আতঙ্কে মানুষ সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বেরোতে ভয় পেত। জনগণের প্রতিবাদের মুখে সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছুটা তৎপর হয়েছে। এখন ছিনতাই, মব-জাস্টিসসহ কিছু অপরাধ কমেছে; কিন্তু চাঁদাবাজি কমেনি। ঈদকে সামনে রেখে বরং কিছু কিছু স্থানে চাঁদাবাজি বেড়েছে। বিশেষ করে পরিবহন খাতে। পণ্য পরিবহনের এক ট্রাকচালকের কাছ থেকে জানা যায়, যশোর থেকে সবজিভর্তি ট্রাক নিয়ে ঢাকায় যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত আসতে পথে তাকে চাঁদা দিতে হয়েছে অন্তত চারটি পয়েন্টে। এ কারণেই আমরা দেখি ঢাকায় এসে সবজির দাম তিন গুণ-চারগুণ বেড়ে যায়। এসবের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।
চাঁদাবাজি বন্ধে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফওজুল কবির খান। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পুলিশকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।’
এটা যেন শুধু কথার কথা না হয়, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। কারণ, চাঁদাবাজি আরও অনেকরকম অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্ম দেয়। বাংলাদেশ থেকে চাঁদাবাজি একবারে দূর করা না গেলে এ দেশের ব্যবসায়িক নীতিনৈতিকতা ঠিক হবে না।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে