Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

কাপ্তাই লেকে চাঁদাবাজি বন্ধ করুন

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪

দেশের অনিন্দ্যসুন্দর একটি স্থান কাপ্তাই হ্রদ। পর্যটন স্থান হিসেবে কাপ্তাই হৃদ সারা দেশের শহরাঞ্চলের মানুষের কাছে পরিচিত। ছোট ছোট পাহাড় ঘিরে রাশি রাশি নীল জল। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। শুধু পর্যটন শিল্প নয়, মৎস্য আহরণসহ এ হ্রদ ঘিরে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়। ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে উৎপাদিত ফসল, মাছ, কাঠ, বাঁশ, পাহাড়িদের কারুপণ্য সবই আনা-নেওয়া হয় এ পথে, যার বাজার বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার। পাহাড়ি-বাঙালি মিলিয়ে কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে সরাসরি প্রায় দেড় লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা।

তাদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্য ও হ্রদ ঘিরে বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন-ব্যবস্থা ধরলে সংখ্যাটি অন্তত ৬ লাখ। বছরে মাছ আহরণ হয় কয়েকশ কোটি টাকার। এ ছাড়া হাটবাজার, ফসল উৎপাদন, যাতায়াত আর পর্যটন নিয়ে হ্রদের অর্থনীতি কয়েক হাজার কোটি টাকার। এটি ঘিরে এক ব্যতিক্রম জীবনযাপন পদ্ধতি ও অর্থনীতির ভিত গড়ে উঠেছে রাঙামাটিতে। যে কাপ্তাইয়ের স্রোতধারা এখনো লাখো মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস, সেখানে সবার ‘গলার কাঁটা’ চাঁদাবাজি। বছরের পর বছর ভাঙা যায়নি এ নেটওয়ার্ক। জেএসএস ও ইউপিডিএফের মতো সংগঠনকে এ জন্য জেলেরা দায়ী করলেও, প্রকাশ্যে মুখ খোলেন না।

গতকাল সোমবার (৭ অক্টোবর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, পুরো জেলায় রয়েছে চাঁদার বড় নেটওয়ার্ক। বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার চাঁদা সশস্ত্র গ্রুপের হাতে যায়। ইটভাটা প্রতি বছরে দিতে হয় ৩০ হাজার টাকা। ঠিকাদারির জন্য ১০ শতাংশ কমিশন কাটে। প্রায়ই অপহরণ করে নেয় মুক্তিপণ। প্রতিটি বড় আকারের রেস্টুরেন্ট মালিককে বছরে দিতে হয় ২০ হাজার টাকা। ফার্নিচার ব্যবসায়ীদের মাথাপিছু চাঁদা ৬ হাজার। প্রতিটি বাঁশের ট্রাকের জন্য চাঁদা ১ হাজার, কলার ট্রাক ২ হাজার, চাঁদের গাড়ি ৩ হাজার ও সিএনজি অটোরিকশার চাঁদা ১ হাজার টাকা। এ ছাড়া পরিবারপ্রতি রয়েছে চাঁদা।

উচ্চবিত্ত পরিবার বছরে ৮০০, মধ্যবিত্ত ৫০০ ও নিম্নবিত্ত পরিবারকে দিতে হয় ৩০০ টাকা। তথ্যমতে, মাছের ব্যবসায় বার্ষিক চাঁদা দিতে হয়। কে, কোন এলাকায় মাছ ধরবে, তা নির্ধারণ করে দেয়ার চেষ্টা হয়। হ্রদ ঘিরে গড়ে উঠেছে অর্ধশত বিনোদনকেন্দ্র। আছে শতাধিক রেস্টুরেন্ট, হোটেল। সক্রিয় কয়েকশ পর্যটন বোট। সব মিলিয়ে বছরে ২০০ কোটি টাকা লেনদেন হয় পর্যটনে। তবে পাহাড়ে বিশাল এ অর্থনীতি ও বিনিয়োগের প্রধান বাধা নিরাপত্তা। ইঞ্জিন ও নৌকার আকৃতিভেদে চাঁদার হারও ভিন্ন।

বিভিন্ন ধরনের রসিদের মাধ্যমে কৌশলে তোলা হয় চাঁদা। চাঁদার হিসাব দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, বার্ষিক ও এককালীন কি না, তাও উল্লেখ রয়েছে। চাঁদা তোলা হয় বিভিন্ন সংগঠনের নামে। সংগঠনগুলো প্রতিপালিত হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক নামে। এর সঙ্গে কারা বা কোন দল জড়িত তাদের সঠিক হদিসও অনেক সময় পুলিশ বের করতে পারে না। জানা যায়, কিছু সংগঠন ও চাঁদাবাজ এমন কী সশস্ত্র্রও। তার মানে এটি ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষসহ সারা দেশের জন্যই হুমকি।

আমরা জানি, বাংলাদেশের যে কোনো ব্যবসার প্রধান সমস্যা চাঁদাবাজি। সড়ক পরিবহন, নৌপরিবহন, মিল কারখানাসহ এমন কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই, যে ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি নেই। সরকার পরিবর্তন হয়; কিন্তু এসব চাঁদাবাজির কোনো পরিবর্তন হয় না। কেবল হাত বদল হয়। আমরা চাই কাপ্তাই হ্রদের চাঁদাবাজিসহ সারা দেশের চাঁদাবাজি কঠোর হস্তে দমন করা হোক। কাপ্তাই হ্রদের প্রকৃতির সন্তানরা যেন প্রকৃতির মাঝে নির্ভয়ে বিচরণ করতে পারে- এমন ব্যবস্থা অতি শিগগিরই প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হোক। ওই নির্ভৃত অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা আরও জোরদার করা হোক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ