পাথরখেকোদের হাত থেকে সাদা পাথর রক্ষা করুন
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অন্যতম এক আকর্ষণীয় স্থান। সিলেট ঘুরতে গেলে এমন কেউ নেই একবার ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর দেখতে যান না। প্রায় ১৫ একর এলাকাজুড়ে এ পর্যটনকেন্দ্র। ছোটবড় অসংখ্য পাথরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত জলের স্রোতধারা এই পর্যটনকেন্দ্রের মূল আকর্ষণ। এই সৌন্দর্যের টানে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের হাজারো পর্যটক ভিড় জমান; কিন্তু পাথরখেকোদের দৌরাত্ম্যে এলাকাটি সম্প্রতি পাথরশূন্য হয়ে পড়তে শুরু করেছে।
আজ (৩ মে) সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, গত ২৩ এপ্রিল থেকে চক্রটি সাদা পাথর এলাকায় পাথর লুট শুরু করেছে। ভোলাগঞ্জ পাথরকোয়ারি ও শাহ আরেফিন টিলা এলাকা এরই মধ্যে প্রায় পাথরশূন্য করে ফেলা হয়েছে। তবে পার্শ্ববর্তী বাংকার এলাকায় দেদার পাথর উত্তোলন চলছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২৭ এপ্রিল বেলা সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাদা পাথর ও বাংকার এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, শ্রমিকরা বেলচা, কোদাল ও শাবল ব্যবহার করে পাথর উত্তোলন করে অন্তত শতাধিক বারকি নৌকায় বোঝাই করেছেন। পরে সেসব পাথর বিক্রির জন্য ধলাই নদ দিয়ে ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বর সাইট এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে আড়ালে-আবডালে পাথর উত্তোলন চলত। গত ৫ আগস্টের পর প্রকাশ্যে হাজারো মানুষ অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করছেন। স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালালে পাথর উত্তোলনকারীরা সটকে পড়েন। পরে অভিযানে আসা দলটি চলে গেলে আবার উত্তোলন শুরু করে। রাতের বেলা তো বটেই, দিনের বেলা প্রকাশ্যেই এখন বাংকার ও সাদা পাথর এলাকায় পাথর লুট চলছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, পাথর উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দোষীদের কারাদণ্ডও দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় প্রয়োজনে তারা আরও কঠোরতা দেখাবেন। সর্বশেষ ২৮ এপ্রিল বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। তবে প্রবল বৃষ্টির কারণে এ সময় কমসংখ্যক পাথর উত্তোলনকারী ছিলেন। যারা ছিলেন, তারা স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে সটকে পড়েন।
এটা স্পষ্ট যে প্রশাসন চাইলে পাথরখোকেদের দৌরাত্ম্য কমাতে পারে। এর জন্য দরকার নিয়মিত অভিযান ও শাস্তির ব্যবস্থা। প্রশাসনের দুর্বলতা দেখেই পাথরখেকোরা এই অপরাধ করার সাহস পায়। সাদা পাথর আমাদের জাতীয় সম্পদ, যদি ভোলাগঞ্জ এলাকা পাথরশূন্য হয়ে যায় তাহলে আর কোনো পর্যটক ওখানে যাবে না। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সূত্রে জানা যায়, ভোলাগঞ্জ পাথরকোয়ারি ও শাহ আরেফিনের টিলার পাথর লুট করে প্রায় ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। বাংকার এলাকাও পাথরশূন্য হওয়ার পথে। দিনের বেলা প্রকাশ্যেই এসব করা হলেও প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা দেখা যায়নি। এখন সাদা পাথরেও নজর পড়েছে পাথরখেকোদের, তা ঠেকাতে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।
আমরা চাই পাথরখেকোদের হাত থেকে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর রক্ষা করার জন্য প্রশাসন আরও কঠোর হোক। পাশাপাশি বাংলাদেশের কোনো প্রাকৃতিক সম্পদই যেন এভাবে লুটপাট না হতে পারে তার জন্য প্রশাসনকে এখনই সক্রিয় হতে হবে। ৫ আগস্টের পর এ ধরনের অপরাধ বেড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতা পরিশেষে পুরো সরকারের কাঁধেই পড়বে। তাই স্থানীয় প্রশাসনকে অপরাধ দমনে আরও সক্রিয় করা দরকার সরকারের।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে