শ্রমিক বিক্ষোভ থামান
কারখানার শ্রমিকদের মুহুর্মুহু বিক্ষোভে গাজীপুর দিন দিন রণক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে। একটি কারখানার বিক্ষোভ শেষ হতে না হতেই নতুন আরেকটি কারখানায় বিক্ষোভ শুরু হয়। এই নিয়ে গাজীপুরবাসীর জীবন নারকীয় হয়ে উঠছে। কারণ শ্রমিক বিক্ষোভ মানেই রাস্তা অবরোধ। গত দেড়-দুমাস ধরে এটা গাজীপুরের নিয়মিত চিত্র। আজ সোমবার (১৮ নভেম্বর) পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গাজীপুরে সড়কে আরেক কারখানার শ্রমিকেরা সংঘর্ষ-আগুনে রণক্ষেত্র তৈরি করেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বেক্সিমকোর কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে গাজীপুর মহানগরীর পানিশাইল এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা আরেকটি কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেছেন। এ সময় শ্রমিক ও এলাকাবাসীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা জিরানি বাজারের পাশে অ্যামাজন নিটওয়্যার নামের একটি কারখানায় অগ্নিসংযোগ করেন।
শ্রমিক, এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত দুই দিনের মতো আজকেও বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা সকাল থেকে গাজীপুর মহানগরীর চক্রবর্তী এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ কারণে আশপাশের অন্তত ২০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ১ নভেম্বর থেকে পানিশাইল এলাকার ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। গতকাল রোববার কারখানা খুলে দেওয়া হলেও দুপুরের পর ছুটি দিয়ে দেয়া হয়।
আজ সোমবার সকালে কাজে যোগ দিতে এসে ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা দেখেন, তাদের কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই নোটিশ দেখে কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে শ্রমিকেরা বিক্ষোভে শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের জিরানী এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। একই সময়ে একই সড়কের পৃথক স্থানে বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকেরাও অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডরিন ফ্যাশন ও বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন আহত হন। আহত শ্রমিকদের স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
শ্রমিকেরা পানিশাইল ও কলতাসুতি এলাকায় ঢুকে পড়ে এলাকার লোকজনদের মারধর করেন। এতে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিকদের ধাওয়া দেন। বেশ কিছু সময় ত্রিমুখী পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। এ সময় ডরিন ফ্যাশন ও বেক্সিমকোর কিছু শ্রমিক পূর্ব কলতাসুতি এলাকার অ্যামাজন নিটওয়্যার নামের একটি কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেন। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, থানা-পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনেন।
খবর পড়ে মনে হবে দুদেশের মধ্যে বোধহয় যুদ্ধ বেঁধে গেছে। অথচ ঘটনা কিন্তু সামান্য। ঘটনার সূত্রপাত কোনো আগাম নোটিশ না দিয়ে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা। প্রশ্ন হচ্ছে, কারখানা কর্তৃপক্ষ এটা কেন করছে? আমরা জানি বেক্সিমকো কোম্পানির মালিক সালমান এফ রহমান। তিনি এখন জেলে। পরিস্থিতি ঘোলাটে করতেই কি এরকম কিছু করা হচ্ছে কি না? গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বর্তমান অন্তবর্তী সরকার কোনোভাবেই এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে দেশ দিন দিন অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে।
এই শ্রমিক বিক্ষোভে দেশের শিল্প-কারখানার খুব ক্ষতি হচ্ছে। জনগণকেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তিরও খুব ক্ষতি হচ্ছে। তাই আমরা চাই, যে করেই হোক এই শ্রমিক বিক্ষোভ এখনই থামাতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, শ্রমিকদের ক্ষেপিয়ে কারখানার মালিকরাও ভালো থাকবে না, দেশও ভালো থাকবে না। কার স্বার্থে এই বিক্ষোভ এত দীর্ঘদিন ধরে চলছে তা এখনই তদন্ত করে দেখতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে