Views Bangladesh Logo

গৃহবধুর গরু আত্মসাৎ

চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করুন

বরটা শুধু মর্মান্তিক নয়, জাতিগত লজ্জার। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, ঝালকাঠির রাজাপুরে ‘চাঁদার’ টাকা না পেয়ে নার্গিস বেগম (২৫) নামের এক গৃহবধূর গরু নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক কর্মীর বিরুদ্ধে। গত বুধবার সকালে উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের ঘিগড়া গ্রামের একটি মাঠ থেকে গরুটি নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীর নাম বেল্লাল খান (৫৮)। তিনি শুক্তাগড় ইউনিয়নের বামন খান গ্রামের আজিজ খানের ছেলে এবং একই ইউনিয়নের বাসিন্দা ও রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালামের আজাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অভিযুক্ত বেল্লাল খানের ভাষ্য, চাঁদার টাকার জন্য নয়, নার্গিসের স্বামীর কাছে পাওনা ২০ হাজার টাকার জন্য তিনি গরুটি নিয়ে গেছেন। টাকা দিয়ে দিলে তিনি গরুটি ফেরত দেবেন।

খবরে জানা গেছে, ভুক্তভোগী নার্গিস বেগম শুক্তাগড় ইউনিয়নের ঘিগড়া গ্রামের আবু বক্করের স্ত্রী। আবু বক্কর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন। গরুটি ফেরত পেতে বৃহস্পতিবার সকালে গরুর বাছুর নিয়ে ঝালকাঠির আদালতপাড়ায় হাজির হন তিনি। বাছুরের সঙ্গে নার্গিসের সাথে নার্গিসের শিশু সন্তানও ছিল, এবং গরুর জন্য বাছুরটি যেমন উদগ্রীব ছিল, শিশু সন্তানটিও কাঁদছিল।

এবার দৃশ্যটি একটু ভাবুন, গরুর জন্য বাছুর ও শিশু সন্তাসহ দাঁড়িয়ে আছেন একজন গৃহবধু, স্বামীর অনুপস্থিতিতে এই গরুটিই তার একমাত্র সম্বল। অভিযুক্তের কথা অনুযায়ী যদি তিনি স্বামীর কাছ থেকে টাকা পানও তাহলে কি তিনি উক্ত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে স্ত্রীর গরু নিয়ে যেতে পারেন? মানুষের তো স্বাভাবিক একটু মানবিকতাবোধ থাকে। সেই মানবিকতাবোধটুকু কোথায়? জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী। তাহলে দলীয় ক্ষমতাই তাকে এরকম অমানবিক হতে প্ররোচিত করল?

গণ-অভ্যুত্থানের পর এরকম আরো অভিযোগই পাওয়া গেছে, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন, বা আওয়ামী লীগের সাথে কোনোভাবে জড়িত ছিলেন এমন ব্যক্তিদের সয়-সম্পত্তি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা দখল করে নিচ্ছেন? এটাই কি গণ-অভ্যুত্থানের মর্মবানী ছিল? আমরা আশা করেছিলাম গণ-অভ্যুত্থানের পর সামাজিক অবিচার-বিশৃঙ্খলা কমবে, বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণ হবে, তাহলে কেন অরাজকতা? আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর অবহেলার কারণেই যে এসব ঘটনা ঘটছে তা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি কিছু রাজনৈতিক দল মনে করছে তারা সব ক্ষমতা হাতে পেয়ে গেছে তাই যা খুশি তাই করছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের এই স্বেচ্ছাচারিতা তারই প্রমাণ।

আমরা চাই সমাজ থেকে এরকম অমানবিক অরাজকতা দূর হোক। মানুষের নূন্যতম মানবিকবোধটুকু অক্ষুণ্ন থাকুক, মানুষের প্রতি মানুষের স্বাভাবিক মানবিক শ্রদ্ধাবোধটুকু প্রকাশ হোক। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি দ্রুত নার্গিসের গরুটি ফেরত দেয়া হোক। এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হোক। চাঁদা আদায়ের নামে তিনি শুধু আইনবহির্ভূত কাজ করেননি, তিনি মানুষের সামাজিক অমর্যাদা করেছেন। এরকম একটি হীন ঘটনাকে কোনোভাবেই ক্ষমাশীল চোখে দেখার সুযোগ নেই।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ