অর্থনীতির গতি রুদ্ধ করলে বিপর্যয় ঘটবেই
অর্থনীতি কিছু সাধারণ সূত্র বা নীতি মেনে চলে। এসব সূত্র নির্ণীত হয় চলমান বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে। মানুষের দৈনন্দিন আচরণকে কেন্দ্র করেই এসব সূত্র নির্ণীত হয়। সময় এবং বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এসব সূত্র কখনো কখনো কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। তবে মূল সূত্র একই থাকে। কোনো কারণে অর্থনীতির এসব সূত্র লঙ্ঘিত হলে বিপর্যয় ঘটতে পারে।
অর্থনীতির কোনো সূত্রই আপনা-আপনি বাস্তবায়িত হয় না বা সুফল দেয় না। এ জন্য বেশ কিছু আবশ্যিক শর্ত পালন করতে হয়। এই আবশ্যিক শর্ত পালন করতে হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। নদীর স্রোত আর অর্থনীতির সাধারণ সূত্রের গতি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে নিশ্চিতভাবেই বিপর্যয় ঘটে থাকে। নদীর স্রোতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে দুকূল প্লাবিত হয়ে জনপদ ভাসিয়ে নেয়। আর অর্থনীতির সূত্র লঙ্ঘিত হলে জাতীয় জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়, যার অনিবার্য পরিণতি ভোগ করতে হয় সাধারণ মানুষকে।
আমরা যদি নির্মোহভাবে আলোচনা করি তাহলে দেখব সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অর্থনীতি নিয়ে এমন সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে যা কাঙ্ক্ষিত ফল না দিয়ে উল্টো ফল দিয়েছে। বর্তমানে অর্থনীতিতে যে বিপর্যয়ের আশঙ্কা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তার পেছনে রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অপরিণামদর্শী কিছু সিদ্ধান্ত। বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বা উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে অতি উচ্চ মাত্রার মূল্যস্ফীতি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও সেই সব পদক্ষেপের অধিকাংশই ছিল আংশিক এবং বাস্তবতা বিবর্জিত। ফলে মূল্যস্ফীতি না কমে বরং একই মাত্রায় বিরাজ করছে।
করোনা-উত্তর বিশ্ব অর্থনীতি যখন পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল ঠিক সেই সময় শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। যুদ্ধের পূর্বে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য যেখানে ছিল ৭০ থেকে ৭২ মার্কিন ডলার কিছু দিনের মধ্যেই তা ১৩৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। বিশ্বব্যাপী সাম্প্রতিক সময়ে সৃষ্ট উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য উৎপাদন স্বল্পতা যতটা না দায়ি তার চেয়ে বেশি দায়ী হচ্ছে উৎপাদিত পণ্য ও সেবা বাজারজাতকরণে ব্যর্থতা। ইউক্রেন এবং রাশিয়া মিলে বিশ্বের মোট দানাদার খাদ্যের ৩০ শতাংশ উৎপাদন করে থাকে। আফ্রিকা এবং মধ্য প্রাচ্যের অনেক দেশই ইউক্রেনের খাদ্য পণ্যের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল; কিন্তু ইউক্রেন তাদের উৎপাদিত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করতে পারেনি। ফলে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো অর্থনীতিতেও মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়, যা ছিল বিগত ৪০ বছরের মধ্যে দেশটির সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকা (ফেড) দেড় বছরের মধ্যে তাদের পলিসি রেট (সিডিউল ব্যাংকগুলো স্বল্পকালীন প্রয়োজন মেটানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে ঋণ গ্রহণ করে) ১৩ বার বৃদ্ধি করে। একই সঙ্গে আরও নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তাদের অর্থনীতিতে বিদ্যমান অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে।
অর্থনীতির সূত্র মতে, কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি পলিসি রেট বৃদ্ধি করে তাহলে সিডিউল ব্যাংকগুলো ব্যাংক ঋণের (সিডিউল ব্যাংকগুলো উদ্যোক্তা বা সাধারণ ঋণ গ্রহীতাদের ঋণদানকালে যে সুদ চার্জ করে) সুদের হার বাড়াতে বাধ্য হয়। এতে ঋণ গ্রহণের ব্যয় আগের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। উদ্যোক্তাগণ একান্ত প্রয়োজন না হলে ঋণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। ফলে বাজারে অর্থ প্রবাহ কমে যায়। মানুষ চাইলেই আর আগের মতো যে কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয় করতে পারে না। এভাবে এক পর্যায়ে বিদ্যমান মূল্যস্ফীতি কমে আসতে শুরু করে। এই সূত্র ক্রিয়াশীল হবার জন্য একটি আবশ্যিক শর্ত হচ্ছে পলিসি রেট বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাজারের উপর ছেড়ে দিতে হয়।
বিশ্বের অন্তত ৭৭টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসি রেট বৃদ্ধি এবং অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তাদের অর্থনীতিতে বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কাও তাদের মূল্যস্ফীতির হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে; কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটেছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রবণতা শুরু হবার পর থেকে বেশ কয়েকবার পলিসি রেট বৃদ্ধি করেছে। আগে যেখানে পলিসি রেট ছিল ৫ শতাংশ। এখন তা সাড়ে ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে; কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতি হ্রাসের ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ কোনো ফল দেয়নি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসি রেট বারবার বাড়ালেও ব্যাংক ঋণের সুদের হার কিছু দিন আগ পর্যন্ত ৯ শতাংশে সীমিত করে রেখেছিল। এতে উদ্যোক্তা পর্যায়ে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ আগের তুলনায় সস্তা হয়ে পড়ে। অনেকেই প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে তা উদ্দিষ্ট খাতে ব্যবহার না করে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছেন। এই ঋণের একটি বড় অংশই নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাজারে চলে এসেছে। এমনকি বিদেশে পাচার হয়েছে বলে অর্থনীতিবিদদের অনেকেই অভিযোগ করছেন। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক কি পলিসি রেট বৃদ্ধির পর ব্যাংক ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করে রাখার পরিণতি জানতো না? অনেকেই মনে করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিণতি সম্পর্কে জ্ঞাত থাকলেও মহল বিশেষকে স্বল্প সুদের ঋণদানের জন্রই এমন আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে। বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হারের ওপর নিয়ন্ত্রণ কিছুটা শিথিল করা হলেও তা পুরোপুরি বাজার ভিত্তিক করা হয়নি।
অর্থনীতিবিদরা অনেক দিন ধরেই বৈদেশিক মুদ্রা, বিশেষ করে মার্কিন ডলারের বিনিময় হারকে বাজারভিত্তিক করার ওপর জোর দিয়ে এলেও বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এতে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক হয়তো মনে করছে, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হলে স্থানীয় মুদ্রা টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন ঘটবে। এতে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাবে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হবে; কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারিত করে রাখলেই যে আমদানি ব্যয় হ্রাস করা সম্ভব হবে এই ধারনা যে ঠিক নয় তা ইতিমধ্যেই প্রমানিত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারিত করে রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান নিশ্চিত করতে পারতো তাহলে এই উদ্যোগ হয়তো কিছুটা সফল হতে পারতো; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বর্তমানে যে অবস্থায় আছে তা দিয়ে আমদানিকারকদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণভাবে পণ্য চাহিদা মেটানোর কোনো বিকল্প পন্থা উদ্ভাবন করতে পারেনি। ফলে আমদানিকারকগণ বিকল্প সূত্র অর্থাৎ কার্ব মার্কেট থেকে উচ্চ মূল্যে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয করে তা দিয়ে পণ্য আমদানি করছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য হ্রাস পেলেও স্থানীয় বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই।
বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে অন্যতম আলোচিত ইস্যু হচ্ছে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি চিহ্নিতকরণ। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি জারিকৃত এক সার্কুলারের মাধ্যমে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করার জন্য সিডিউল ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এতদিনে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে নড়েচড়ে বসেছে এটা ভালো কথা; কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে বা কীভাবে? বাংলাদেশ ব্যাংক একদিকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করছে। ঠিক একই সময়ে নতুন ঋণখেলাপি হবার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। এটা কি স্ববিরোধিত নয়? বাংলাদেশ ব্যাংক সাম্প্রতিক এক সার্কুলারের মাধ্যমে বলেছে, এখন থেকে কোনো শিল্পগোষ্ঠীর এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হলেও অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করা যাবে। আগে নিয়ম ছিল, কোনো শিল্পগোষ্ঠীর এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হয়ে পড়লে গোষ্ঠীভুক্ত অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের অযোগ্য বিবেচিত হবে যতক্ষণ খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করা হবে। নতুন এই নির্দেশনার কারণে ঋণখেলাপিদের নতুন করে ব্যাংক ঋণ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি নতুন করে যাতে ঋণখেলাপি সৃষ্টি না হয় সে জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল; কিন্তু তা না করে বাংলাদেশ নতুন করে ঋণখেলাপি সৃষ্টির সুযোগ করে দিয়েছে। বাঁধের উজানে কেউ যদি পানি ঘোলা করে তাহলে ভাটিতে ঘোলা পানিই প্রবাহিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে কতটা আন্তরিক তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়া স্বাভাবিক। বাংলাদেশ ব্যাংক কি আসলেই ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে চায় নাকি উন্নয়ন সহযোগিদের চোখে ধুলো দিতে চায়? কিছু দিন আগে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিলীকরণ করা হয়েছে। ৩৮ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ নিয়ে তাদের খেলাপি ঋণ হিসাব নিয়মিতকরণ করে নিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি; কিন্তু আইনি দুর্বলতার কারণে এদের এখন আর ঋণখেলাপি হিসেবে আখ্যায়িত করা যাবে না। এভাবে যাদের ঋণখেলাপি থেকে দায় মুক্তি দেয়া হয়েছে তাদের কিভাবে ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে? বাংলাদেশ ব্যাংক কি পারবে এদের দেয়া বিশেষ সুবিধার আওতায় দেয়া দায়মুক্তি বাতিল করে ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করতে। আমাদের দেশে ঋণখেলাপিরা যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধকারিরা তা পায় না। নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধকারীদের কি ১ বা ২ শতাংশ কম সুদ আরোপ করা যায় না? বাংলাদেশ ব্যাংক যদি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে চায় তাহলে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে যারা ১০ বছরের জন্য ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ করিয়ে নিয়েছেন তাদের সেই সুবিধা বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে ২০১৫ সালের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অজুহাতে ৫০০ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব অঙ্কের খেলাপি ঋণ হিসাব পুনর্গঠন করার যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছিল তা বাতিল করা যেতে পারে।
কিছু দিন আগে ঋণ হিসাব অবলোপন নীতিমালা আরও সহজীকরণ করা হয়েছে। কয়েক বছর আগে নিয়ম ছিল, কোনো ঋণ হিসাব মন্দমানে শ্রেণিকৃত হবার পর ৫ বছর অতিক্রান্ত হলে উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়েরপূর্বক শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করে একটি ঋণ হিসাব অবলোপন করা যেত। পরবর্তীতে এই আইন সংশোধন করে ৫ বছরের পরিবর্তে তিন বছর মন্দমানে শ্রেণিকৃত থাকার পর একটি ঋণ হিসাব অবলোপনের অনুমতি দেয়া হয়। এ জন্য শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণের বিধান বাতিল করা হয়। ৫ লাখ টাকার কম ঋণ হিসাবের ক্ষেত্রে মামলা দায়েরের শর্ত বাতিল করা হয়। সর্বশেষ আইনি সংশোধনের মাধ্যমে মন্দমানে শ্রেণিকৃত থাকার মেয়াদ ৩ বছরের পরিবর্তে ২ বছর করা হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক কাদের স্বার্থে এসব পরিবর্তন সাধন করছে? তারা কি সত্যি সত্যি খেলাপি ঋণ আদায় করতে চায় নাকি ব্যাংকিং সেক্টরকে আরো বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিতে চায়? বাংলাদেশ ব্যাংক যদি সত্যি সত্যি খেলাপি ঋণের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে চায় তাহলে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে তার সুপারিশের ভিত্তিকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে