প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক
প্রশ্নপত্র ফাঁস যেন মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশে। প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে প্রায় সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নিয়মিত প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায়ও উঠেছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ। এবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে সরকারের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি)। পিএসসির অধীনে বিসিএস ক্যাডার এবং নন-ক্যাডারের প্রায় ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অশনি সংকেত।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ খবরে স্তম্ভিত হয়ে গেছে সারা জাতি। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ৩৩তম বিসিএস থেকে ৪৬তম বিসিএস পর্যন্ত প্রায় ৩০টি ক্যাডার-নন-ক্যাডার পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত পিএসসির বড় কর্মকর্তারা। জীবনের শুরুর ৩০ বছরের প্রায় সব সুখ আর চাওয়া-পাওয়া বিসর্জন দিয়ে বিসিএস ধ্যান-জ্ঞান করে, নিদেনপক্ষে পিএসসির একটি নন-ক্যাডার প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির আশায় যারা দিন গোনেন, লাইব্রেরিতে পড়ে থাকেন দিনের পর দিন, তাদের জন্য এ খবর রীতিমতো বজ্রাঘাত! রাষ্ট্রের তরফে প্রহসন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) দুজন উপ-পরিচালক, দুজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীও রয়েছেন। তিনি ‘প্রশ্ন ফাঁস করে’ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত রোববার (৭ জুলাই) ও সোমবার (৮ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই ১৭ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কথা হচ্ছে, একজন গাড়িচালক কীভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন? অবৈধ উপায়ে তিনি কীভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হন? তাও সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানে? কেউ কি দেখার নেই? দেশে কি কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নেই? এই অনিয়ম-অপরাধ-দুর্নীতিতে দেশের কত শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট হয়েছে, তার কোনো হিসাব আছে? তাদের জীবনের ক্ষতিপূরণ কে দেবে?
বাংলাদেশ আজ সব দিক দিয়েই দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হয়ে গেছে। মানুষের আর কোনো মূল্যবোধ, নীতিবোধ অবশিষ্ট নেই। যে যেভাবে পারে কেবল টাকা কামাতে পারলেই হয়। সামাজিকভাবেও তাদের কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় না।
এভাবে চলতে থাকলে দেশ নিশ্চিতভাবেই ধ্বংসের দিকে যাবে। এসব অপরাধ কোনোভাবেই সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই। এর জন্য শুধু ব্যক্তি-মানুষ দায়ী নয়। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনাই দায়ী। সরকারকে শক্ত হাতে এসব অপরাধ দমন করতে হবে। তা না হলে শেষ পর্যন্ত এসব অপরাধ সরকারের দিকেই আঙুল তুলবে এবং এ দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করবে।
তাই আমরা বলতে চাই, যত দ্রুত সম্ভব প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনুন। এমন দৃষ্টান্তমূলক বিচার স্থাপন করুন, যেন আর কেউ এরকম গর্হিত অপরাধ করার সাহস না পায়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে