Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ যেন অক্ষুণ্ণ থাকে

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের ছাত্রদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে এবং লেখা থাকবে। ভাষা-আন্দোলনে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস জন্ম দিয়েছিলেন ছাত্ররা। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্ররা নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও ছাত্রদের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তারপর ১৯৯০-এর স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে এবং ২০২৪-এর জুলাই ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনেও তারা মহান ভূমিকা পালন করেছেন। জাতির যে কোনো ক্রান্তিলগ্নেই ছাত্ররা সবার আগে এগিয়ে এসেছেন। আমাদের ছাত্রদের নিয়ে আমাদের গর্বের সীমা-পরিসীমা নেই। বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্ররা যে ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তাতে সারা বিশ্বকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

ছাত্রদের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষকে বিমূঢ় করে দিয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে রাস্তা অবরোধ, বাস-ট্রেন আটকে যাত্রীদের দুর্ভোগ সৃষ্টি, কার্যত ঢাকা শহরকে স্থবির করার মধ্য দিয়ে তারা সাধারণ মানুষের বিরাগভাজন হয়েছেন। এর মধ্যে এ সপ্তাহে তিন কলেজের সহিংসতার ঘটনা কোনোভাবেই শিক্ষার্থীসূলভ আচরণ বলা যায় না। সামান্য ঘটনায় তারা রণক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে, আধিপত্য প্রতিষ্ঠাই ছিল এসব উচ্ছৃঙ্খলার লক্ষ্য। তুচ্ছ কারণে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

প্রশ্ন হচ্ছে, তুচ্ছ ঘটনাকে ঘিরে কেন শিক্ষার্থীরা এভাবে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন? এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির চিত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এসে পড়েছে। জবাবদিহি ও আইনের শাসনের ঘাটতি, অন্যায় করে পার পাওয়ার প্রবণতা, মূল্যবোধের চর্চা না থাকার কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে। আর কী করে এক কলেজের শিক্ষার্থীরা গিয়ে আরেক কলেজে নামফলক খুলে উল্লাস করে! আচ্ছা, বিবেকবোধ কী হারিয়ে গেল শিক্ষার্থীদের? শিক্ষার উদ্দেশ্য তো মানুষ তৈরি করা, বিবেকবোধ তৈরি করা!

তাহলে কেন এমন ধ্বংস? আমরা মনে করি, এগুলো আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা। পাশাপাশি শিক্ষকরা কেন তাদের শিক্ষার্থীদের থামাতে ব্যর্থ হলেন? এসব সংঘর্ষে তো শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ারও ক্ষতি হচ্ছে, মূল্যবান সময়ের অপচয় হচ্ছে। শিক্ষকদেরও দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে রাখার, লেখাপড়ার মধ্যে ব্যস্ত রাখার। শিক্ষকরাও কেন ব্যর্থ হচ্ছেন এতে? আমাদের সবার মনে রাখা উচিত, মানুষ না হলে আর বিবেকবোধ না থাকলে সব লেখাপড়া বৃথা! কাজেই সবার আগে মানুষ হওয়া জরুরি। মানুষ হওয়ার পরিবেশ সমাজ-রাষ্ট্র থেকেই শুরু করতে হয়।

সমাজে-রাষ্ট্রে মূল্যবোধ চর্চা থাকতে হয়। এক সময় কলেজে কলেজে খেলাধুলা হতো, বিতর্ক প্রতিযোগিতা হতো, এখন তো আর সেসব নেই? বিকাশের সমস্ত পথ রুদ্ধ। তারুণ্যের স্বভাবধর্ম সর্বদাই নতুন কিছু করা। সেই নতুনের ডাক নেই। স্থবির এক সমাজ-কাঠামো, ব্যক্তিগত স্বার্থান্বেষণ ছাড়া আর কীসেরই-বা চর্চা আছে সমাজে? বড় মানুষ হওয়ার, বিজ্ঞানী হওয়ার, লেখক হওয়ার, উদ্যোক্তা হওয়া, সমাজসেবী হওয়ার চর্চা কোথায় সমাজে? সবাই হয়তো বিরাট বিজ্ঞানী, লেখক হবে না; কিন্তু সমাজে-রাষ্ট্রে উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চা থাকতে হয়, যার মধ্য দিয়ে তরুণ শিক্ষার্থীরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়, সেসব আদর্শ কোথায় আমাদের সমাজে?

গণঅভ্যুত্থান হয়েছে দীর্ঘদিনের দমবন্ধ অনুভূতি থেকে বাঁচতে; কিন্তু গণঅভ্যুত্থানই তো শেষ কথা নয়, এখন তো দেশ নতুন করে গঠন করতে হবে। আর তার জন্য তরুণদেরই লাগবে। নিজেদের মধ্যে এমন মারামারি করে তো তা সম্ভব নয়। তার জন্য দরকার সহনশীলতা। সেই সহনশীলতার চর্চা সাংস্কৃতিক জাগরণ ছাড়া হয় না। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক জাগরণ তৈরি হোক, আদর্শ-মূল্যবোধ তৈরি হোক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ