Views Bangladesh Logo

রানা প্লাজা ধসের ১ যুগ

এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে

সেদিন ছিল বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৩। সকাল ৮টা বেজে ৪৫ মিনিট। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যায় সেদিন। ঢাকার সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে রানা প্লাজা নামে আটতলা একটি ভবন ধসে পড়ে। ভবনটি ছিল একটি পোশাক কারখানা। মুহূর্তে খবরটি রাষ্ট্র হয়ে যায় সারা দেশে।

সকালবেলা শ্রমিকরা মাত্র ভবনে ঢুকেছেন, কেউ জানে না ঠিক কতজন কর্মী আছেন ওখানে। ভবনটির কয়েকটি তলা মাটির নিচে ডেবে গেছে। রাষ্ট্রীয় উদ্ধারকর্মীদের সাথে ছুটে গেছেন হাজারো সাধারণ মানুষ। ছুটে গেছেন সংবাদকর্মীরা। সারা দেশের মানুষের চোখ টেলিভিশনের পর্দায়। ভাঙা স্তূপের ভেতর থেকে একের পর এক বেরোচ্ছে মৃতদেহ, অসংখ্য আহত মানুষ। কেউ-বা আটকে আছেন স্তূপের নিচে, হাত-পা কেটে বের করতে হচ্ছে। প্রথম দিনেও এর ভয়াবহতা ঠিক বোঝা যায়নি।

দিন যত যেতে লাগল ততই এই ধবংসের ভয়ঙ্কর রূপ প্রকাশিত হতে লাগল। একশ-দুশ-পাঁচশ থেকে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেল। ভবন ধসে পড়ার ১৭ দিন পর সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের মেজর মোয়াজ্জেম সঙ্গী সার্জেন্ট রাজ্জাককে নিয়ে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত বের করে নিয়ে আসেন রেশমা নামের একটি মেয়েকে। রেশমাকে উদ্ধারের ঘটনাটি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। বিশ্বের প্রায় সব সংবাদ সংস্থার মূল সংবাদই ছিল ১৭ দিন পর উদ্ধার হওয়া রেশমা। সারা দেশের মানুষেরও চোখ ছিল টেলিভিশনের পর্দার দিকে।

ভয়াবহ এই দূর্ঘটনায় ১১৩৮ জন শ্রমিক নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয় যা বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সাধারণ জনগণ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালায়। ভবনটিতে পোশাক কারখানা, একটি ব্যাংক এবং একাধিক অন্যান্য দোকান ছিল, সকালে ব্যস্ত সময়ে এই ধসের ঘটনাটি ঘটে বলে হতাহতের সংখ্যা ছিল অনেক।

অথচ একটু সতর্ক হলেই এই দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যেত। ভবনটি যে-কোনো সময় ধসে পড়তে পারে তার আলামত আগেই দেখা গিয়েছিল। আগের দিনই ভবনটিতে ফাটল দেখা গিয়েছিল। তা নিয়ে টেলিভিশনের প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছিল। ২০০৭ সালে রানা প্লাজা নির্মাণ করার আগে জায়গাটি ছিল পরিত্যক্ত ডোবা। ভবন নির্মাণ করার আগে বালু ফেলে এটি ভরাট করা হয়। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর তথ্যমতে ভবনের উপরের চার তলা অনুমতি ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছিল।

ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় একই বছরের ২৯ এপ্রিল বেনাপোল থেকে ভবনমালিক সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এর পর থেকে তিনি কারাগারে। এ ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যা মামলা করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়েও মামলা করে।

গতকাল বুধবার (২৩ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত রানা প্লাজা ধসের দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ মামলার নিষ্পত্তি হয়নি এবং ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাননি। দ্রুত তাদের ক্ষতিপূরণ, বিচার সম্পন্ন ও নিহতদের স্মরণে স্মৃতিফলক করার দাবি জানিয়েছে বেসরকারি আইন সহায়তা সংস্থা বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এই ট্র্যাজেডির দায় কেউ নেয়নি, বিচার হয়নি, ক্ষতিপূরণও হয়নি। আমরা চাই, দ্রুত বিচার শেষ হোক, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন হোক, আর এই ঘটনা যেন কোনো দিন ভুলে না যাওয়া একটি শিক্ষা হয়ে থাকে।’

আমরাও চাই এটা যেন আমাদের জন্য একটা চরম শিক্ষা হয়ে থাকে। এরকম কোনো মর্মস্পর্শী ভয়াবহ দূর্ঘটনা আর যেন না ঘটে। বাংলাদেশের অনেক বহুতল ভবন এখনো মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে, কিন্তু এখনো নিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। রানা প্লাজার ভয়াবহ দূর্ঘটনার কথা স্মরণ রেখে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ