Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের দুর্ভোগ লাঘব করা হোক

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

রবিবার, ২ জুন ২০২৪

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে জহিরুল ইসলামের বাড়ি। মালয়েশিয়া যাওয়ার আশায় গত শুক্রবার (৩১ মে) পর্যন্ত চার দিন ধরে বসেছিলেন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ভিসা পেলেও টিকিট পাননি। ৩১ মে ছিল তার মালয়েশিয়া প্রবেশের শেষ দিন। মালয়েশিয়া যাওয়ার শেষ দিনে টিকিট না পেয়ে সাংবাদ মাধ্যমকে জানালেন, তিনিসহ ছয়জনের কাছ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা করে নিয়েছে দালাল। কাঁদতে কাঁদতে জহিরুল বলেন, ‘মালয়েশিয়া যাতি জমি বেইচে টাকা দিছি। আমাগে শেষ কইরে দিয়েছে।’

নাটোরের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে তিন দিন ধরে অপেক্ষা করছেন তিনি। শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত উড়োজাহাজের টিকিট হাতে পাননি হাবিবুর। যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য সাড়ে ছয় লাখ টাকা জমা দিয়েছেন, তারাও এখন আর ফোন ধরছেন না।

এই কান্না কেবল জহিরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমানের না। তাদের মতো আরও হাজার হাজার শ্রমিকের। গত মার্চে মালয় সরকার ঘোষণা করেছিল, দেশটির ভিসা পাওয়া বিদেশি কর্মীদের ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে হবে। প্রায় আড়াই মাস সময় পাওয়ার পরও ভিসা পাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত ফ্লাইট নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। ফ্লাইট বৃদ্ধির ব্যবস্থা না করে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্মীদের প্রবেশের সময়সীমা বৃদ্ধির অনুরোধ করে। এতে সাড়া না দিয়ে ৩১ মে সব দেশের কর্মীদের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ করে মালয়েশিয়া।

এদিকে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) পর্যন্ত কুয়ালালামপুরের দুটি আন্তর্জাতিক টার্মিনালে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী পৌঁছেছেন, যারা দেশটিতে প্রবেশ করতে পারেননি। তারা অবস্থান করছেন বিমানবন্দরের ফ্লোরে। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে কর্মী ও নিয়োগকর্তাদের। নিজেদের কর্মী শনাক্তেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নিয়োগকর্তাদের। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে কর্মীদের। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত বিদেশি কর্মী নিয়োগ করবে না দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি। ফলে যেসব বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালকে টাকা দিয়েও স্বপ্নের দেশে যেতে পারেননি, তারা পড়েছেন অথৈ সাগরে।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং রিক্রুটিং এজেন্সির সংগঠন বায়রা টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করবে বলে আশ্বস্ত করেছে। যদিও অতীত অভিজ্ঞতায় এতে ভরসা পাচ্ছেন না কর্মীরা। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ খরচ ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। তবে এক গবেষণা বলছে, কর্মীর খরচ হয়েছে গড়ে ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। চক্রে থাকা এজেন্সিগুলো বলছে, শ্রমিকদের বাড়তি খরচের দায় চক্রের বাইরে থাকা এজেন্সির। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে তারা চড়া দামে মালয়েশিয়া থেকে কর্মীর চাহিদাপত্র কিনে ভিসা বাণিজ্য করেছে।

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আলাদা করে কোনো তদন্ত করছে না বলে জানা গেছে। তবে এসব অভিযোগ নিয়ে দুই দেশের যৌথ কারিগরি কমিটির সভায় আলোচনা করতে চায় মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে সভা আহ্বানের অনুরোধ করে মালয়েশিয়ায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। সভার তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। মালয়েশিয়া বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজার। গত দেড় বছর সৌদি আরবের পর সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছে মালয়েশিয়ায়, সাড়ে ৪ লাখের বেশি।

শ্রমবাজারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে। মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা ছাড়া শ্রমিকদের এ সমস্যার সমাধান হবে না। আমরা প্রত্যাশা করব বাংলাদেশের শ্রমিকদের দুর্ভোগ লাঘব করার জন্য বাংলাদেশ সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ