Views Bangladesh Logo

পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে মাটির তৈজসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

পৌষসংক্রান্তির বাকি আর মাত্র ২৫ দিন। একটা সময় সংক্রান্তি উপলক্ষে গ্রামের হাট-বাজারে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের মেলা বসত। অবশ্য এখন আর সেই দিন নেই। তবুও সিলেট অঞ্চলের মৃৎশিল্পীরা সেই ঐতিহ্যকে এখনো টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। শীত মৌসুমে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে কুমারপাড়ার মৃৎশিল্পীরা। আসছে মৌসুমে সারা বছরের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার সময়। বিভিন্ন মেলা আর উৎসব-পার্বণে মাটির তৈরি এসব তৈজসপত্রের কদর একটু বেশি। তাই শিল্পীরা তাদের হাতের নিপুণ কাজ দিয়ে রংবেরঙের এসব জিনিস তৈরি করছেন।

জরাজীর্ণ আবাসগুলোতে কেউ মাটি ঘুঁটছেন, কেউ সেই মাটি দিয়ে হাতে তৈরি করছেন হাঁড়ি, পাতিল, হাতি, ঘোড়া, পুতুল। কেউবা এসব খেলনা শুকানোর পর রংতুলির আঁচড় দিচ্ছে। আবার কেউ রোদে শুকাচ্ছে, কেউ বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন এই কুমারপাড়ার মানুষজন। তবে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। এমন চিত্র দেখা যায় হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পৌরসভার নগর কুমার হাটি।

মৃৎশিল্পীরা বলছেন, পৌষসংক্রান্তি ও নববর্ষে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। সারা বছর মাটির তৈজস বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ না করলেও মেলার কারণে বাহারি সব খেলনা তৈরি করেন। যদিও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তাদের অনেকে পেশা ছেড়ে দিয়েছে।

তারা বলছেন-হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অনবদ্য রূপ মৃৎশিল্প। এর সঙ্গে একদিকে জড়িয়ে আছে জীবনের প্রয়োজন, অন্যদিকে নান্দনিকতা ও চিত্রকলার বহিঃপ্রকাশ। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নিয়ে পেশাটি বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

সরেজমিন দেখা যায়, মাটির তৈজসপত্রের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের খেলনা তৈরি করছেন মৃৎশিল্পীরা। মাটির পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ষাঁড়, নৌকা, টিয়া, সিংহ, দোয়েল, কচ্ছপ, মাছ, হাঁসসহ নানা রকম ফল, ফুল আর বাহারি মাটির ব্যাংক, প্লেট, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ, পিঠা তৈরির ছাঁচ তৈরি হচ্ছে সমানতালে। আসছে মেলায় এসব জিনিস বিক্রি করা হবে।

কাজল রানী পাল জানান, আমাদের এই পেশা বংশপরম্পরা। আমরা এখানে নারী-পুরুষ সবাই মিলেমিশে কাজ করি। পুরুষরা নদী থেকে মাটি নিয়ে এসে মাড়াই করেন আর নারীরা হাত দিয়ে খেলনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করি। শুকনো মৌসুমে আমাদের কাজের চাপ বেড়ে যায়। এক মৌসুমে তৈরি করে সারা বছর বিক্রি করি।

জ্যোতি রানী পাল বলেন, বর্ষা মৌসুমে কোনো কাজ করা যায় না। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে আমাদের সারা বছরের জিনিসপত্র তৈরি করতে হয়। এই দুই মাসে আমরা মৌসুম হিসেবে মাঠির পণ্য তৈরি করি। রোধে শুকিয়ে সংরক্ষণ করি।

রতন কুমার পাল বলেন-আগে সব জায়গা মাটি পাওয়া যেত, এখন মাটি পাওয়াটা অনেক কষ্টের। এ ছাড়া সব ধরনের মাটি দিয়ে এসব জিনিস তৈরি করা যায় না। আমাদের এই পাড়ায় নারী-পুরুষ সকলেই কাজ করেন।

রতন আরও জানান, নদী-নালা ও খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ার কারণে আগের মতো ডিঙি নৌকা নিয়ে ব্যবসায়ীরা আসে না। এখন আমাদের বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়ে এসব মালামাল বিক্রি করতে হয়, যার কারণে আগের মতো লভ্যাংশ হয় না। আমাদেরকে সরকারিভাবে কোনো ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় না। ইতোমধ্যে অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ