পণ্যের বাজার সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন
সাধারণত রমজান মাস এলেই বাজারে পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বাড়ে, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের। বাজারসংশ্লিষ্টদের ধারণা, এই মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্যে যতটা না বাস্তবসম্মত কারণ থাকে, তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে কিছু মুনাফালোভীর কারসাজি। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অজুহাতের অভাব হয় না।
গত কয়েক মাসে দেশের বাজারে মাছ-মাংস ও চাল-ডালসহ কয়েকটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্যকে ঘিরে বড় ধরনের মূল্য কারসাজি হয়েছে। এসব পণ্যের দাম বিশ্ববাজারে যে হারে বেড়েছে, এর চেয়েও বেশি বাড়ানো হয়েছে স্থানীয় বাজারে। অনেক পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়েনি, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে।
ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা চাইলেই দাম বাড়ে, তারা চাইলেই দাম কমে। এই ‘সিন্ডিকেট’ থেকে মুক্তি চান ক্রেতারা। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, ব্যবসায়ীরা সামান্য কোনো কারণ পেলেও পণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করেন না। সেটি হতে পারে কোনো ছোটখাটো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবহনমালিকদের কোনো ধর্মঘট, রমজান কিংবা জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। প্রায়ই দেখা যায়, দেশে পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত এবং চাহিদা স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আবার দেখা যায়, বিশ্ববাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে দেশেও বাড়ানো হয়। অথচ বিশ্ববাজারে কমলে সেটি আর সহজে সমন্বয় করা হয় না।
দুর্ভাগ্যবশত ভোক্তারাও এই সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্রের কাছে বন্দি থাকতে বাধ্য হন। কিন্তু এভাবে মূল্যবৃদ্ধিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হলেও আদতে তাদের লাগাম টেনে ধরা কখনোই সম্ভব হয়নি। একদিকে দেশে অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে যখন মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে, তখন অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিয়ে বাজার আরও অস্থির করে তুলছেন।
মূলত দেশের বাজার পরিস্থিতির উন্নতি এখনো দেখা যাচ্ছে না। এর মূল কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ার হার বাড়ছে।
এ অবস্থায় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে থাকা নানা ধরনের সিন্ডিকেট ভাঙতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অবৈধ মজুতদারি রোধে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে নানা ধরনের তদারকি শুরু করা হয়েছে। তবু নিয়ন্ত্রণে আসছে না পণ্যের অস্বাভাবিক দাম।
কারা কীভাবে বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারসাজি করছেন, সেটা সরকারের নীতিনির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোরও অজানা নয়। তাই পণ্যের বাজারে বিরাজমান অস্থিতিশীলতা কাটাতে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। যারা কারসাজি করে ভোক্তার পকেট কাটছেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির মূল্যস্ফীতি রোধসহ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা খুব জরুরি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে