লরি ও জাহাজ থেকে তেল চোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন
বাংলাদেশের বিভিন্ন তেলের ডিপো থেকে যে কম-বেশি তেল চুরি হয়, এটা অনেকেই জানেন। অনেকবার এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবরও এসেছে খবর আসার পরে প্রশাসন কদিনের জন্য একটু নড়েচড়ে বসে, পুলিশ কিছু ধরপাকড় করে, তারপর দেখা যায় সেই চুরিদারি ফিরে যায় আগের নিয়মেই। এবার এমনই এক খবর এলো বাঘাবাড়ী ডিপো থেকে।
গতকাল বুধবার (৫ মার্চ) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীর বড়াল নদীতে রাতের আঁধারে প্রতিদিন তেলবাহী জাহাজ থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার লিটার ডিজেল ও অকটেন। বিশেষ কায়দায় পাইপলাইন থেকে ড্রামে তেল ভরার পর ছোট নৌকায় করে সেগুলো চলে যাচ্ছে কালোবাজারে। এই চুরির সঙ্গে জড়িত একটি শক্তিশালী চক্র। এর মধ্যে রয়েছেন জাহাজের সারেং, তেল ডিপোর কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। তেল চুরির কারণে বছরে সরকারের ক্ষতি হচ্ছে শত শত কোটি টাকা। সেই টাকায় ফুলেফেঁপে উঠছে অপরাধী চক্র। স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় এই লুটপাট চললেও যেন দেখার কেউ নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ীতে বড়াল নদীর তীরে ১৯৮৩ সালে ৪৭ একর জায়গার ওপর নির্মিত হয় এ বন্দর। রয়েছে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা কোম্পানির তেলের ডিপো। এখান থেকে উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া নদীপথে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার জন্য সার, কয়লা, সিমেন্ট, চাল, গম, জ্বালানি তেলসহ ৯০ শতাংশ নিত্যপণ্য নামে এই বন্দরে। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে নাব্য সংকট দেখা দেয়ায় পণ্য নিয়ে বড় জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারে না।
সে সময় বাঘাবাড়ী থেকে প্রায় ৪৫ মাইল দূরে মানিকগঞ্জের বাহাদুরাবাদে যমুনা নদীতে জাহাজগুলোকে অবস্থান করতে হয়। সেখান থেকে ছোট ছোট জাহাজে করে মালপত্র আসে। ছোট ছোট জাহাজে করে তেল আসার সময়ই জাহাজের তেলভর্তি ট্যাঙ্কার থেকে পাইপে করে তেল সরিয়ে নিতে সহায়তা করে দুষ্কৃতকারী শ্রমিকরা। সেখানে কোনো পুলিশি টহলও থাকে না এবং শাহজাদপুর থানার ওসি জানিয়েছেন, চুরির কোনো অভিযোগ তার কাছে নেই। চুরির সঙ্গে পুলিশের সম্পর্কটিও তিনি অস্বীকার করেন।
অন্যদিকে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। উপজেলা প্রশাসনের এ ক্ষেত্রে সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের। তারা অভিযান চালালে উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতা করে। তবে এক বছরে এ ধরনের কোনো অভিযান হয়নি।
তার মানে ওসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কথার মধ্যেই গোলমাল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, সংবাদমাধ্যমের সরেজমিন তদন্তে দেখা গেছে, এই চুরির বিষয়টি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। স্থানীয় অনেকেই বিষয়টি জানেন। এমন পুকুর চুরির ঘটনা লুকিয়ে রাখা যায় না। তাহলে তারপরও কেন প্রশাসন নিশ্চুপ? উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উপজেলা প্রশাসনের এ ক্ষেত্রে সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তাহলে তিনি কেন ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালেন না? তার তো দায়িত্ব ছিল সরকারি সম্পদ দেখভাল করার।
তা ছাড়া থানার ওসি কাছে চুরির অভিযোগ না-ই থাকতে পারে, ভয়ে হয়তো কেউ অভিযোগ করেনি; কিন্তু যেখানে স্থানীয় সাধারণ মানুষও তেল চুরির বিষয়টি জানেন, সেখানে থানার ওসি জানবেন না এটা বিশ্বাস হয় না। এ থেকেও বোঝা যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেন বলছেন যে বিষয়টি স্পর্শকাতর। আমরা এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত চাই, এবং জরুরিভিত্তিতে সমাধান চাই। এভাবে বছরে কী পরিমাণ সরকারি তেল চুরি হয়, তারও হিসাব চাই। বর্তমান সরকারের এদিকে দ্রুত নজর দেয়া দরকার। যারা এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে