Views Bangladesh Logo

গুমের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অপরাধ-অত্যাচারের ঘটনা যতই সামনে আসছে ততই মনে হচ্ছে বাংলাদেশ এক আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ পার করেছে। ঘটনাগুলো এমন শিউরে ওঠার মতো সত্যিই অবিশ্বাস্য মনে হয়, কোনো সরকার তার দেশের সাধারণ মানুষের ওপর এমন বর্বরোচিত অত্যাচার চালাতে পারে!

আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক গুম-হত্যার ঘটনা আমরা জানি, গণঅভ্যুত্থানের সময় তারা গণহত্যাও চালিয়েছে; কিন্তু, গতকাল মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেল, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন জানতে পেরেছে যে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও গুমের শিকার হয়েছেন। কখনো কখনো মায়েদের সঙ্গে শিশুদেরও তুলে নিয়ে বন্দিশালায় আটকে রাখা হয়। বাদ যাননি অন্তঃসত্ত্বা নারীও। পুরুষ বন্দিকে মানসিক নির্যাতন করতে স্ত্রীকে আটকে রেখে কোলের সন্তানকে মায়ের দুধপান থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করা হয়েছে।

গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর ভয়াবহ নির্যাতনের এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল (২১ জানুয়ারি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে অন্তত চারজন নারীর গুমের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। এই নারীদের মধ্যে একজন এখনো ফিরে আসেননি। প্রতিবেদনে কমিশন জানিয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের কারণে নারীদের গুমের জন্য নিশানা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজের অভিযোগে, বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নারীদের তুলে নেয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই ও মনগড়া অভিযোগে তাদের তুলে নেয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীদের চেয়ে পুরুষদের গুমের শিকার হওয়ার বেশি ঘটনা পাওয়া গেছে। তবে নারীরা গুমের শিকার হলেও সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে এ নিয়ে তারা মুখ খোলেননি। এরপরও গুমের শিকার কিছু নারী তাদের তুলে নেয়া ও বন্দিশালায় আটকে রেখে নির্যাতনের অভিজ্ঞতা কমিশনের কাছে তুলে ধরেছেন। গুমের এমন ঘটনা কমিশন পেয়েছে, যেখানে মায়েদের সঙ্গে তাদের সন্তানদেরও তুলে নিয়ে গেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এমন এক নারীর সঙ্গে কমিশন কথা বলেছে। ওই নারীকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তুলে নিয়ে এক মাস বন্দিশালায় আটকে রাখা হয়। ওই নারীর সঙ্গে তার তিন বছর ও দেড় বছরের দুই সন্তানও ছিল। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নিরাপত্তা বাহিনীর একজন পুরুষ সদস্য তাকে মারধর করেন।

অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, র্যাব, ডিজিএফআই, ডিবি, সিটিটিসি, সিআইডি, পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে কমিশনে ১ হাজার ৬৭৬টি অভিযোগ জমা পড়ে। তার মধ্যে ৭৫৮ জনের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করেছে কমিশন। এতে দেখা গেছে, ৭৩ শতাংশ ভুক্তভোগী ফিরে এসেছেন। বাকি ২৭ শতাংশ (অন্তত ২০৪ জন) এখনো নিখোঁজ।

প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের প্ররোচনায় রাষ্ট্রীয় বাহিনী কেন এমন বিবেকবহির্ভূত-বর্বরোচিত কাজে নিয়োজিত হলো? ফ্যাসিবাদ তাহলে রাষ্ট্রের কোন স্তরে ছড়িয়ে পড়েছিল?

সৌভাগ্যের বিষয়, আমরা শেষ পর্যন্ত অনেক রক্তের বিনিময়ে সেই ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনই শেষ কথা নয়। অবশ্যই এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকটি ব্যক্তি ও সংস্থাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রতিটি গুমের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে হবে। অপরাধীদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। এর মধ্যেই অপরাধীদের প্রতি এক প্রকার সহনশীলতার মনোভাব দেখা যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে। এসব অপরাধের যদি ছাড় দেয়া হয় তাহলে ভবিষ্যতেও এসব অপরাধ চলমান থাকবে। আমরা চাই গুমের ঘটনাগুলোর সঠিক তদন্ত জোরদার ও অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা হোক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ