গরমে পশু-পাখির যত্ন নিন
তীব্র গরমে যখন মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে, তখন পশু-পাখিদের কী অবস্থা? পোষা পশু-পাখিদের না হয় কিছুটা যত্ন নেয় মানুষ; কিন্তু কী অবস্থা বনের পশু-পাখিদের? বনেও না হয় সবুজ গাছপালা আছে তাই পশু-পাখিরা নিজের মতো একটা ব্যবস্থা করে নিতে পারে; কিন্তু লোকালয়ের পশু-পাখিদের কী অবস্থা? বিশেষ করে শহর অঞ্চলে, যেখানে গাছপালা বা জলাশয় বেশি নেই। প্রাণিবিদরা বলেছেন, তীব্র গরমে মানুষের মতো প্রাণিদেরও কষ্ট হয়। বাঁচার জন্য প্রাণীরাও নিজস্ব কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি হলেই মানুষ ঘামতে থাকে; শরীর থেকে ঘাম বেরিয়ে গেলে দেহ শীতল হয়। ঠিক একইভাবে প্রাণীদের শরীর শীতল করার জন্যও তারা বিশেষ ব্যবস্থা নেয়।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গরমের তীব্রতায় অনেক গরু মারা যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে গরুর ওজন ও দুধের উৎপাদন। অনেক স্থানে হঠাৎ গর্ভপাত হয়ে যাচ্ছে গাভীর। বারবার গোসল করানো, টিনের চালে পাটের বস্তা রাখা, স্যালাইন ও গ্লুকোজ খাওয়ানো এবং পাখা চালিয়েও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না পরিস্থিতি। ডেইরি খাতের এমন বিপর্যয়ে ঈদুল আজহার আগে খামারিদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।
নিজের স্বার্থে না-হয় খামারিরা গরুর যত্ন নেবেন; কিন্তু কী অবস্থা রাস্তার কুকুরগুলোর? ঢাকার রাস্তায় কদিন ধরে আর কুকুর দেখা যাচ্ছে না। যেখানে ছায়া পাচ্ছে, সেখানেই তারা আশ্রয় নিচ্ছে। পানি পানের জন্য নোংরা ড্রেনে মুখ ডুবিয়ে দিচ্ছে। ঢাকা শহরের উন্মুক্ত স্থানে পানির সুব্যবস্থা নেই বলে পাখিরাও কষ্টে আছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘তীব্র গরমে জলাধারগুলো শুকিয়ে যায়। পানি পানের উৎস সংকুচিত হয়ে আসে। তখন পানির অভাবই প্রাণীদের কষ্টের বড় কারণ। এসব প্রাণী বাধ্য হয়ে জনবসতির কাছে গিয়ে ধরাও পড়ে। গরম থেকে রেহাই পেতে প্রাণীরা ছায়াময় জায়গায় আশ্রয় নেয় বা শরীর পানিতে ডুবিয়ে রাখে। পাখিদের ক্ষেত্রে পাখা ও পালক ভিজিয়ে গা ঠান্ডা করে। ডিম থাকলে বাবা কিংবা মা পাখি ছায়া দিয়ে ঢেকে রাখে। নিজেদের শরীর ভিজিয়ে এনেও তারা ডিম ঠান্ডা রাখে।’ কিন্তু তীব্র গরমে পাখিরা এখন সারা দিন ছটফট করছে। ঢাকা শহরে গাছের সংখ্যা কম বলে গাছের ছায়াতেও তারা আশ্রয় নিতে পারছে না। এ অবস্থায় অনেক মানুষ ঘরের বারান্দায় পাখিদের জন্য পানি রাখছেন; কিন্তু পশু-পাখিদের খাওয়া খাদ্যে যে কমতি হচ্ছে এ কথা বলাই বাহুল্য। পাখিরাও না হয় উড়তে পারে বলে একটা আশ্রয় খুঁজে নিতে পারে; কিন্তু বন্দি পশু-পাখিদের কী অবস্থা?
শনিবার (২৭ এপ্রিল) কাঁটাবনে গিয়ে দেখা যায়, তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে খাঁচায় বন্দি প্রাণীরা। বিক্রেতারা প্রাণীদের জন্য ফ্যানের ব্যবস্থা করলেও স্বস্তি নেই। গরম সহ্য করতে না পেরে খাঁচার মধ্যেই চিৎকার, ছোটাছুটি করছে কুকুর, বিড়াল, পাখিরা। একটু স্বস্তি দিতে অনেক দোকানি খাঁচাগুলো খোলামেলা জায়গায় রাখলেও শান্ত হচ্ছে না প্রাণীগুলো। ফলে প্রাণীগুলো নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কাঁটাবনের দোকানিরা। চিড়িয়াখানার বন্দি পশু-পাখিদের অবস্থাও ভয়াবহ। চট্টগ্রাম ও ঢাকা চিড়িয়াখানা পরিদর্শন শেষে সংবাদকর্মীরা জানিয়েছেন, তীব্র গরমে চিড়িয়াখানার বন্দি পশু-পাখিরা ছটফট করছে। তারা ঠিক মতো খাবারও খাচ্ছে না।
গতকাল সোমবার (২৯ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, টানা তাপপ্রবাহে মরছে পোলট্রি-গবাদিপশু। প্রান্তিক পোলট্রি খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, ঈদুল ফিতরের পর ১০-১২ দিনে দেশে ১০ লাখের বেশি ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালি মুরগি মারা গেছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ছিল ব্রয়লার মুরগি। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ২০০ কোটি টাকার মতো। এরপর গত দুদিনে এ মৃত্যু আরও বেড়েছে বলে জানান খামারিরা।
সব মিলিয়ে এবার গরমে আর্থিক ও মানবিক ক্ষতির পরিমাণ বিপুল। সরকার এখনো দুর্যোগ পরিস্থিতি ঘোষণা করেনি; কিন্তু আমরা এক দুর্যোগ অবস্থার মধ্যেই আছি। তাই সবাইকে অতিরিক্ত সচেতন হতে হবে। নিজের ও পরিবারের মানুষদের যত্ন নেয়ার পাশাপাশি আশপাশের মানুষদের যত্নও যেমন নিতে হবে তেমনি যত্ন নিতে হবে আমাদের চারপাশের পশু-পাখিগুলোর। মনে রাখতে হবে, অবলা প্রাণীদের বন্ধু হিসেবে সহায়ক ব্যবস্থা একমাত্র নিতে পারে মানুষই।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে