Views Bangladesh Logo

বার্ড ফ্লু নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

সামনে ঈদ, আর এখনই দেশে দেখা দিল বার্ড ফ্লু। যশোরের একটি সরকারি মুরগির খামারে শনাক্ত হয়েছে বার্ড ফ্লু। ২০১৮ সালের পর আবারও বাংলাদেশে এই ফ্লু শনাক্ত হওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে খামারিদের মাঝে। গত বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাবে যশোরের খামারে তিন হাজার ৯৭৮টি মুরগির মধ্যে এক হাজার ৯০০টি মারা গেছে। ফ্লু যেন ছড়িয়ে না পরে, সে জন্য বাকি মুরগি মেরে ফেলা হয়। ২০০৭ সালের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম বার্ড ফ্লু দেখা দেয়। সে বছর ১০ লাখেরও বেশি মুরগি এই ফ্লুর কারণে মেরে ফেলা হয়। ২০০৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশে মানুষের শরীরে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ ধরা পড়ে।

দেশে মাংসের মোট চাহিদার অর্ধেকের বেশি জোগান দেয় পোলট্রি খাত। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তারা বলেন, দেশে ৯৫ হাজার ৫২৩টি খামার আছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ও ডলার সংকটে বেড়ে গেছে প্রাণিজ খাদ্যের দাম। করোনার পর থেকে খরচ সামলাতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে ৬২ হাজার ৬৫৬টি খামার। এবার বার্ড ফ্লু যেন দেশের খামারিদের আরেকটি মহামারিতে না ফেলে, এ জন্য ফ্লু বিস্তার রোধে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে পোলট্রি খাত বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, গত ১২ মার্চ যশোরের সরকারি খামারে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছে। আমরা যে নমুনা পেয়েছি তা পরীক্ষার জন্য দেশের বাইরে পাঠাবো। তবে মৃদু আকারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি পোলট্রি খামারকে নির্দেশনা দিয়েছি। একই সঙ্গে পোলট্রি খামারিদের সংগঠনকেও আমরা সতর্ক থাকতে বলেছি। যাতে তারা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, ভ্যাকসিন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিশ্চিত করেন।

সরকারি সূত্রে জানা যায়, বিশেষায়িত ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত আছে। এবার আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ এবারের পরিস্থিতি অন্যবারের মতো না। বার্ড ফ্লু নিয়ে যেন অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল বোঝাবুঝি বা প্রচারণা না ছড়ায়, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। খামারি বা ক্রেতার আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

পরিস্থিতি আতঙ্কিত হওয়ার মতো না হলেও সচেতন থাকা ভালো। গরুর মাংসের দাম নাগালের বাইরে হওয়ায় অনেক নিম্নআয়ের মানুষই এখন গরুর মাংস খেতে পারেন না। ঈদে-উৎসবে-অনুষ্ঠানে তারা মুরগির মাংসই খান। সেই ক্ষেত্রে বার্ড ফ্লু দেখা দিলে অনেকের জন্যই মাংস খাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। যদিও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মুরগির মাংস খাওয়া বন্ধ না করার পরামর্শ দিয়েছেন; কিন্তু অনেকেই হয়তো মুরগি এড়িয়ে চলবেন। তাতে খামারিদেরও ব্যবসায় লোকসান হবে। এক বিবৃতিতে পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) জানিয়েছে, অতীতে বার্ড ফ্লূ প্রাদুর্ভাবের কারণে হাজার হাজার খামারি তাদের জীবিকা হারিয়েছেন। যদি এই পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনা যায় তাহলে বর্তমান সংকট আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব বার্ড ফ্লু নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিন। যদি বার্ড ফ্লূ কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাহলে শুধু পোলট্রি শিল্পেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ