নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী ইলিশ শিকারিদের শাস্তির আওতায় আনুন
মা ইলিশ রক্ষার মধ্য দিয়ে বছর বছর ইলিশ উৎপাদন বেড়েই চলেছে বাংলাদেশে। ইলিশ আজ আমাদের এক জাতীয় সম্পদে পরিণত হয়েছে, জিডিপিতে যার অবদান ১ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫ লাখ ৭১ হাজার টন ইলিশ ধরা হয়েছে, আর রপ্তানি করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। বাংলাদেশে ইলিশ উৎপাদন বাড়ার নেপথ্যে অনেকটাই বড় কারণ, মা ইলিশ রক্ষায় বছরে একটি নির্দিষ্ট সময় ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এ বছর ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মা ইলিশ রক্ষা করতে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী ব্যক্তির সর্বোচ্চ ২ বছরের জেল বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
গত মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও মা-ইলিশ শিকার বন্ধ করা যাচ্ছে না মেঘনা ও এর শাখা নদনদীর অভয়াশ্রমে। ছোট-বড় ইঞ্জিনচালিত অসংখ্য নৌকা নিয়ে এসব এলাকায় দিন-রাত মা ইলিশ শিকার করা হচ্ছে। এর পেছনে এখন বিএনপির নেতারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জেলেরা জানিয়েছেন।
মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হামলার শিকার হচ্ছেন। অভিযান শুরুর প্রথম পাঁচ দিনে তিন দফায় হামলার শিকার হয়েছেন তারা। সর্বশেষ গত শুক্রবার বিকেলে হিজলা-গৌরনদী ইউনিয়নের ওরাকল বাজারের ৭ নম্বর ঘাট-সংলগ্ন মেঘনা নদীতে অভিযান চালাতে গেলে হামলার শিকার হয়েছেন হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), একজন আনসার সদস্য ও মৎস্য বিভাগের তিন কর্মচারী।
আরেকটি খবরে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেঘনা নদীতে মাছ শিকারে যাওয়ায় ৬০ হাজার মিটার কারেন্ট জালসহ ৯ জেলেকে আটক করা হয়েছে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাত জনকে ১২ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়। দুই জেলে নাবালক হওয়ায় তাদের অভিভাবকের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, হিজলা উপজেলা বিএনপির কয়েকজন নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় হিজলা, ভোলা, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও চাঁদপুরের জেলেদের নিয়ে অবৈধ চক্র গড়ে উঠেছে। চক্রটি শিকার করা ইলিশ সন্ধ্যা ও ভোরে মেঘনা নদীর তীরে কয়েকটি এলাকায় নিলামে বিক্রির পর শরীয়তপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর ও মাওয়া থেকে আসা পাইকাররা কিনে স্পিডবোট ও ট্রলারে করে নিয়ে চলে যান।
আমরা চাই, অপরাধী যেই হোক, তাকে শাস্তির আওতায় আনা হোক। এটা একটি রাষ্ট্রীয় অপরাধ। কোনোভাবেই যেন এই অপরাধ ছাড় না দেয়া হয়। তারা গরিব জেলে না, তারা অবৈধ চক্র। ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে এবং জেলেদের রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার গত মঙ্গলবার এক সভায় বলেছেন, ‘ইলিশ আমাদের খুব বড় একটা সম্পদ। ইলিশের সঙ্গে অনেক জেলে ও জেলে পরিবার জড়িত আছেন। মা ইলিশকে রক্ষা করতে, জেলেদের রক্ষা করতে আমরা কাজ করছি।’
তাই, জেলেদের রক্ষা করেই ইলিশ উৎপাদন বাড়ানো হোক; কিন্তু এর মধ্যে যেন কোনো অবৈধ চক্র এসে ফায়দা লুটে না নিতে পারে, সেদিকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে