সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
সব কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে দেশকে এগিয়ে নিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “৫৪তম স্বাধীনতা দিবসে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসি এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাই।”
স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
সোমবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল, রেডিও স্টেশন ও অনলাইন প্লাটফর্মে একযোগে ভাষণটি সম্প্রচার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার সমর্থন ও সহযোগিতায় তিনি সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের মাধ্যমে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে নিরলসভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
স্বাধীনতার ৫৩তম বার্ষিকীতে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, তার সরকার দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেকাংশে পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা কোনো ফাঁপা বাগাড়ম্বরপূর্ণ দাবি নয়। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল বিশ্বে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তিনি বলেন, তার সরকার প্রমাণ করেছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে সীমিত সম্পদের মধ্যে একটি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
তিনি বলেন, কিন্তু অপ্রিয় সত্য যে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করা এবং অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র আজও থেমে নেই।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, 'বাংলাদেশের চলমান অগ্রযাত্রা কীভাবে থামানো যায়, তা খুঁজে বের করতে ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও লুকিয়ে আছে।’
তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে পরাজিত শক্তি এবং পঁচাত্তরের হত্যাকারী ও তাদের দোসররা এখনও তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে লেগে আছে।”
প্রধানমন্ত্রী জনগণকে সতর্ক করে বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, তাদের চলার পথে একমাত্র বাধা আওয়ামী লীগ। যেকোনো কূটকৌশলে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে পারলে পরাজিত শক্তির উত্থান অনিবার্য। তাই সাবধানে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতির 'সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর সঙ্গে বৈরিতা নয়' অনুসরণ করে দেশ পরিচালনা করছে।
'আমাদের কোনো প্রভু নেই, বরং আমাদের বন্ধু আছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাঙালি জাতি কখনো কারো কাছে পরাজিত হবে না।
৭ জানুয়ারির একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি তার দলের প্রতি আস্থা রাখার জন্য জনগণের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, “আমরা এ পর্যন্ত যে উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন করেছি তার ধারা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ।”
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর ধরে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে দেশ শাসন করছে।
কোভিড-১৯ মহামারি, অগ্নিসংযোগ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক উচ্চ মুদ্রাস্ফীতিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ এবং যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ১৫ বছরের যাত্রা পুরোপুরি নিষ্কণ্টক ছিল না।
বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক সূচকে এবং কৃষি খাতে দেশের শক্তিশালী অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এবং বিভাগীয় শহরগুলোকে ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত করে চার বা ততোধিক লেনবিশিষ্ট মহাসড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।
রমজানে দ্রব্যমূল্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ এবং একই পরিমাণ আলু আমদানির অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি চিনি, ছোলা, ডাল ও ভোজ্যতেলের মতো বেশ কয়েকটি পণ্য মজুদ করেছে।
এছাড়া রমজানের শুরু থেকে রাজধানীর ২৫টি পয়েন্টে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ বিক্রি করা হচ্ছে।
টিসিবি সারাদেশে এক কোটি কার্ডধারী পরিবারের মধ্যে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলা সুলভ মূল্যে বিক্রি করছে।
তিনি বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকার এক কোটি পরিবারের জন্য ১ লাখ ৬২৮ মেট্রিক টন চাল বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে এবং প্রতিটি পরিবার বিনামূল্যে ১০ কেজি চাল পাবে।
তিনি বলেন, রমজান মাসের শুরুতে খেজুর, আমদানি করা ফল, লেবু, তরমুজ, পেঁয়াজসহ কিছু পণ্যের দাম কিছুটা বেশি ছিল। কিন্তু কিছুদিনের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম স্বাভাবিক ও সাশ্রয়ী পর্যায়ে নেমে এসেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “দ্রব্যমূল্য বাড়লে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে