Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

স্বল্পকালীন পরিবেশ সনদ পাবেন ট্যানারি ব্যবসায়ীরা: সালমান এফ রহমান

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ ২০২৪

চামড়া রপ্তানির স্বার্থে কোরবানি পর্যন্ত ট্যানারি শিল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের স্বল্পকালীন পরিবেশ সনদ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তবে কোরবানির পর তারা যদি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নিয়মের মধ্যে না আসে তবে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও সতর্ক করে দেন তিনি।

বুধবার (৬ মার্চ) বিকেলে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্পনগরীতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও এই ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সালমান এফ রহমান। একই সঙ্গে কোনো ট্যানারি নিজে বর্জ্য শোধনাগার করতে চাইলে কোনো বাধা নেই বলেও জানান তিনি।

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সরিয়ে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে আনা হয় ২০১৭ সালে। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্ধারিত নির্দেশক বাস্তবায়নোপযোগী সিইটিপি কার্যকর না থাকায় সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর সংশ্লিষ্ট কালীগঙ্গা ও ইছামতী নদীর পানিতে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহাপরিচালক বিসিক ও ট্যানারি শিল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

সভায় সালমান এফ রহমান বলেন, ‘কোরবানির বাড়তি চাপ সামলাতে ব্যবসায়ীদের পরিবেশের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হবে। তবে সেটা সামায়িক সময়ের জন্য। পরিবেশ, কৃষি ও মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক রেখেই এই ছাড় দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী চামড়া খাতকে বিশেষ খাত হিসেবে দেখেন। তিনি সবসময় এই খাতের উজ্জল সম্ভাবনার কথা বলেন। তাই এই খাতের উন্নয়নে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।’

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সাময়িক ছাড় দেওয়া হলেও পরিবেশ, কৃষি ও জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে কঠোর থাকবে সরকার। কোরবানির পর পরিবেশ দূষণকারী কারখানার সনদ বাতিল করা হবে। পরিবেশসহ সমস্যাগুলো জানা হয়েছে। এটার কারণে সব ধরনের যে ক্ষতি হচ্ছে তার সমাধান করতে হবে। স্বল্পকালীন সার্টিফিকেট দেওয়া হবে, তবে পরিবেশ ও মানুষের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকটা বিবেচনায় রেখে অনুমতি দেওয়া হবে।’

মতবিনিময় সভায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘ট্যানারি শিল্পে যেসব সমস্যা তৈরি হয়েছে তা এক দিনে সমাধান সম্ভব নয়। এটাকে বিভিন্ন মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে সংস্কার করা হবে। ট্যানারির সিইটিপি সংস্কারে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।’

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবির) তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চামড়া খাতের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আয় এসেছে ৮৯৫.২৭ মিলিয়ন ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের আয়ের তুলনায় ১৪.৩৮% কম। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত আয় এসেছিল ৮৩২.৩৮ মিলিয়ন ডলার।

রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের বড় ব্র্যান্ডগুলোর কাছে ভালো দামে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিক্রি করতে হলে বৈশ্বিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ থাকতে হয়। বৈশ্বিক বাজারের কথা মাথায় রেখে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তরের জন্য ২০০৩ সালে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। সে অনুযায়ী ২০০ একর জমি নিয়ে সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় গড়ে ওঠে চামড়া শিল্পনগরী। বর্তমানে এখানে ১৪১টি ট্যানারি রয়েছে। যেখানে ৫৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) তৈরি করা হয়।
তবে সেটি পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো এলডব্লিউজি সনদ পাচ্ছে না। গত ২১ বছরের মধ্যে শুধু ২০২৩ সালের নভেম্বরে এলডব্লিউজি স্বীকৃতি পেয়েছে ‘সিমোনা ট্যানিং’ নামে একটি কারখানা। তাদের নিজস্ব ইটিপি রয়েছে। আর বাকিরা কেউই পায়নি এই সনদ। ফলে সার্বিক রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ছে এই খাত।

গতকালের এ অনুষ্ঠানে চামড়া শিল্পনগরীর নানা বিষয় নিয়ে কারখানা মালিকসহ এ খাত-সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষের সঙ্গে আলাপ করেন তারা। সেখানে উঠে আসে নানা বিষয়। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও মন্ত্রীরা সাংবাদিকদের সঙ্গেও আলাপ করেন।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘চামড়া শিল্পনগরীর এই সমস্যা নিয়ে, বিসিকের যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা এখানে উপস্থিত ছিলেন, এ ছাড়া চামড়া শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ট্যানারি মালিকরা উপস্থিত ছিলেন। আজকে আমরা কথাগুলো শুনেছি। মূলত সমস্যাগুলো শোনার পর সেগুলো সমাধানের জন্য আমরা সরেজমিনে বিষয়গুলো দেখেছি। বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কী করা যায়, সেটি নিয়ে আমরা আলোচনা করব। সমাধান হিসেবে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছি। এক দিনে আসলে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া সব কিছু বন্ধ করে দিয়েও এ সমস্যার সমাধান এখন আমরা করতে পারছি না।’


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ