পণ্যের বৈচিত্র্য আনয়নের মাধ্যমে আমাদের রপ্তানি বাড়াতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
পণ্যের বৈচিত্র্য আনয়নের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য, গালফ, আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন বাজার লক্ষ্য করে রপ্তানি বৃদ্ধি করে আয় বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা অল্প কিছু রপ্তানি পণ্যের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। আমাদের রপ্তানি বাড়াতে হবে। তাই আমাদের রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে।’
রবিবার (১৪ জুলাই) সকালে রাজধানীর ওসামানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৩২টি ক্যাটাগরিতে ৭৭ রপ্তানিকারকের মাঝে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে সরকার প্রধান বলেন, আমি আপনাদের আরও একটি কথা বলব আসলে যুদ্ধ জড়িয়ে পড়ে ইউরোপীয় দেশগুলো কিংবা আমেরিকাই বলেন, তাদের মূল্যস্কীতি বেশি এবং অর্থনীতি কিন্তু খুব চাপের মুখে। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমাদের কিন্তু নতুন সুযোগ আছে। মিডল ইস্ট, গালফ কান্ট্রি, আফ্রিকা, সাউথ এশিয়া, সাউথ ইস্ট এশিয়া, ইস্ট এশিয়ান কান্ট্রিগুলো, ইস্ট ইউরোপীয় কান্ট্রিগুলো-এদের সাথে যত বেশি আমরা আমাদের যোগাযোগ রাখতে পারবো, আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে পারবো। এই সুযোগটা আমাদের নিতে হবে। এজন্য আমরা ইতোমধ্যে কাজ করছি। মাঝে মাঝে প্রতিনিধিও পাঠাচ্ছি এসব জায়গায়।
তিনি বলেন, আমি আপনাদেরও বলবো এসব দেশের দিকে আপনারা আরও বেশি করে নজর দেন। কারণ যেসব দেশের সঙ্গে এত দিন আমরা রপ্তানি বাণিজ্য করতাম তাদের ক্রয় ক্ষমতাও কমে গেছে, দারিদ্রের হার বেড়ে গেছে, সেখানকার অবস্থা হয়তো ওপর দিয়ে বোঝার উপায় নেই। কিন্তু সেসব দেশে যারা থাকে তারা জানে। সেজন্যই আমাদের নতুন নতুন জায়গা এবং নতুন নতুন পণ্য খুঁজতে হবে।
এ সময় রপ্তানি বাস্কেটটকে স্ফিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কেবল আরএমজি পণ্যের ওপরই নির্ভরশীল থাকবো কেন? ট্রেন্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আমাদের পোশাকের ডিজাইনগুলো পরিবর্তন করতে হবে। সরকার এজন্য বেসরকারি খাতের সহায়তায় ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয় করেছে কেননা এক্ষেত্রে গবেষণারও প্রয়োজন রয়েছে।
বর্তমান যুগ ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির যুগ এবং সেভাবেই বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোকে তাঁর নির্দেশ দেওয়া রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কোন দেশের বাজারে আমরা ঢুকতে পারবো। সেটা সরকারের পক্ষ থেকেও আমরা করবো কিন্তু ব্যবসায়ীদেরকেও নিজেদের পার্টনার নিজেদেরকে খুঁজে নিতে হবে। সেদিকেও আপনাদের নিজেদের দৃষ্টি দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেদের উৎপাদন যেমন বাড়াবো, রপ্তানিও বাড়াবো আবার দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়িয়ে অর্থনৈতিকভাবেও আমরা এগিয়ে যাবো।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘরে ঘরে ইন্টারনেট, ছেলে মেয়েদের জন্য কম্পিউটার ট্রেনিং ও কম্পিউটার ইনকিউবেশন সেন্টার করে দিয়ে কারিগরি শিক্ষা ও ভোকেশনাল ট্রেনিংকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। ৪র্থ শিল্প বিপ্লব যখন আসবে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের জনশক্তি তৈরি করা-এটাও আমাদের জন্য প্রয়োজন। সেভাবে উপযুক্ত জনশক্তি তৈরিতে তাঁর সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্টার্টআপ প্রোগ্রাম নিয়ে এক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদের যুব সমাজ যাতে এগিয়ে আসে। এজন্য ‘কোম্পানি আইন’ সংশোধন করে সরকার ‘ওয়ান ম্যান কোম্পানী’ করার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। এসএমই ফাউন্ডেশনে নারীদের জন্য উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকার ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে, সেখানে নারীরা চাইলে আলাদাভাবে প্লট নিয়ে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে। কারণ আমি চাই আমাদের সমাজে মেয়েরাও এগিয়ে আসুক এবং তারাও এই ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত হোক।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আজ জাতীয় রপ্তানি ট্রফি বিতরণকালে অনেক যুব উদ্যোক্তা দেখতে পেয়ে তিনি আনন্দিত হয়েছেন। অনেকেই বাবার ব্যবসা ধরে রেখে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং ট্রফি হাতে তুলে নিয়েছেন। এতেই একটি আশার আলো দেখতে পাই যে বাংলাদেশটা এগিযে যাবে এবং এই যুব সমাজই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। এই স্বাধীনতা কখনও ব্যর্থ হতে পারে না। এর সুফল আমরা প্রত্যেক মানুষের ঘরে পৌঁছে দেব। কেননা দেশের মানুষের জীবন মান উন্নত করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। আর সেই প্রতিজ্ঞা নিয়েই দেশে ফিরেছি (’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর রিফিউজি হিসেবে ৬ বছর বিদেশে কাটাতে বাধ্য হয়েছিলাম। ’৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলে একরকম জোর করে দেশে ফেরা) এবং সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফি শিরোনামে ১টি বিশেষ ট্রফিসহ (স্বর্ণ) মোট ২৯টি স্বর্ণ, ২৭টি রৌপ্য এবং ২১টি ব্রোঞ্জ ট্রফি প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সরকারের রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে