আবারও দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড, দিনে আয় দেড় লাখ টাকা
রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড আবারও বেপরোয়া দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে স্থাপন করা এসব ট্রাক পার্কিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ টাকা তুলছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রাক স্ট্যান্ডের প্রতিটি প্রবেশ পথেই অবৈধ চাঁদা আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী রয়েছে। দেখা যায় পার্কিং করা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান থেকে প্রতিদিন তিন স্লিপে ১৪০ টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। সড়কে থাকা গাড়িগুলো থেকেও নেয়া হচ্ছে সমপরিমাণ অর্থ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে সারি করে দাঁড় করানো প্রায় ১২০০ গাড়ি থেকে জোরপূর্বক এই চাঁদা উত্তোলন করে ‘কালা নীরব’। এই কালা নীরবের বিরুদ্ধে রাজধানীর বাড্ডা, মোহাম্মদপুর ও যাত্রাবাড়ী-এই তিনটি থানায় হত্যা মামলার রেকর্ড রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নীরব ভিউজ বাংলাদেশকে জানান, তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো ষড়যন্ত্রমূলক। চাঁদা উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না দিয়েই ফোন কেটে দেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ট্রাকচালক বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই বাধ্য হয়ে টাকা দিচ্ছি। কেউ কিছু বলতে পারে না, পুলিশও জানে কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয় না।’
তেজগাঁও ট্রাক মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, ‘এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। প্রশাসন মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযানে নামলেও কিছুদিন পর আবার দখল হয়ে যায়। আমাদের ট্রাকচালকদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।’
ট্রাক মালিক মো. কবির জানান, তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডের নির্দিষ্ট স্থানে রাখা ট্রাক থেকে টাকা নেয়ার কথা থাকলেও তারা সড়কে থাকা পরিবহন থেকেও জোরপূর্বক টাকা আদায় করছে। এমন অভিযোগ সড়কে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান রাখা সকল ড্রাইভারের।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বশির হাওলাদারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ১০০টি গাড়ি রাখার ধারণ ক্ষমতা নিয়ে ট্রাক স্ট্যান্ড মেরামতে আমাদের নিজস্ব অর্থ ব্যয় হয়েছে। ফলে সর্বসম্মতিক্রমে যারা স্ট্যান্ডে গাড়ি রাখবে তাদের জন্য ১০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। তবে সড়কে রাখা গাড়ি থেকে চাঁদা উত্তোলনের কোনো নির্দেশনা নেই।
একই মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মো. তোফাজ্জল হোসেন মজুমদারের।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার ইবনে মিজান ভিউজ বাংলাদেশকে জানান, ট্রাক স্ট্যান্ড স্থানান্তরের পরিকল্পনা চলমান রয়েছে। এটাকে কেন্দ্র করে কোনো চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া যে কোনো অনিয়ম ও অপরাধের বিষয়ে সার্বক্ষণিক পুলিশ তৎপর রয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রেও পুলিশ নিরলস কাজ করছে।
এদিকে দীপ্ত টিভির এক নারী কর্মী জানান, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে গাড়ি রাখায় মাঝে মাঝে অফিসে যেতে সময় ক্ষেপণ হয়। বেশি রাতে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতেও ভয় হয়। তেজগাঁওয়ের একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী জীবন জানান, সড়ক যেন গেরেজ হয়ে উছেছে। একে তো গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। অন্যদিকে সড়কে বসেই করছে মেরামতের কাজ।
স্থানীয়রা মনে করছেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছি কিন্তু দখলদাররা আবারও দখল করে ফেলে। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র আনিসুল হক আনুষ্ঠানিকভাবে তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডকে পার্কিংমুক্ত বলে ঘোষণা করেছিলেন। আনিসুল হকের জীবদ্দশায় তা পুনরায় দখল হয়ে যায়। তার মৃত্যুর পর পার্কিংয়ের মাধ্যমে পুরোপুরি দখল হয় রাজধানীর তেজগাঁও সাত রাস্তাসহ আশপাশের এলাকা। তবে সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম পার্কিংমুক্ত করতে নানাবিধ চেষ্টা করেও সফল হননি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে