কেএনএফ'র তাণ্ডব
আজও থমথমে, বান্দরবান পরিদর্শনে সেনাপ্রধান
বান্দরবানের রুমা-থানচিতে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর তাণ্ডব ও ব্যাংক লুটের ঘটনায় সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
রোববার (৭ এপ্রিল) সকালে হেলিকপ্টারযোগে বান্দরবানে এসে পৌছান তিনি এবং বান্দরবান ৬৯ সেনা রিজিয়নে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন।
জানা গেছে, মতবিনিময় শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন সেনাপ্রধান।
এদিকে কেএনএফের তাণ্ডবের ঘটনায় রুমা এবং থানচিতে আজও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আতঙ্ক কাটেনি উপজেলাবাসীদের। অপরদিকে তাণ্ডবের ঘটনায় মামলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮টি। এর মধ্যে রুমায় ৪টি এবং থানচিতে ৪টি। সবগুলো মামলায় অজ্ঞাতনামাতের আসামি করা হয়েছে।
তবে রুমা ও থানচি কোথাও নতুন করে কেএনএফ'র গোলাগুলির খবর পাওয়া যায়নি।
থানচি উপজেলার বাসিন্দার মংব্রাচিং মারমা ও জসিম উদ্দিন বলেন, থানচি বাজারের ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষজনের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাজারের দোকানপাট খুললেও লোকজনের উপস্থিতি কম। সন্ধ্যা নামলেই অজানা শঙ্কায় মানুষজন সবকিছু গুটিয়ে নেয়। পর্যটকদেরও কোনো উপস্থিত নেই চার দিন ধরে। চিরচেনা সরগরম থানচি বাজার যেন জনশূন্য হয়ে পড়েছে। কোনো শব্দ শোনলেই মনে হচ্ছে গুলির শব্দ। সারাক্ষণ যেন গুলির শব্দ শোনতে পাচ্ছে মানুষজন।
রুমা বাজারের ব্যবসায়ী উত্তম দাস ও সহোরাব বলেন, রুমা জুড়েই কেএনএফ'র আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে মানুষজনের। আগে যেখানে রুমা বাজারে রাত ১১টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকত। বর্তমানে সন্ধ্যা সাতটার পরই দোকানপাট বন্ধ করে দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। বেচাকেনাও কমে গেছে।
এদিকে ব্যাংক লুটকারীদের ধরতে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে বলেও জানা গেছে। এরই অংশ হিসেবে রুমা-রোয়াংছড়ি, থানচি-আলীকদম সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে সাড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করে থানচি থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, থানচিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের ঘটনায় ২টি মামলা হয়েছে। হামলাকারীদের সনাক্ত করে তাদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী।
তিনি আরও জানান, হামলার ঘটনায় থানচিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোসহ থানচি বাজার ও আশপাশের এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে রুমা থানার ওসি মোহাম্মদ শাহাজাহান জানান, ব্যাংক ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় ৪টি মামলা করা হয়েছে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী। পরিস্থিতি বর্তমানে মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও আতঙ্ক কাটেনি।
অপরদিকে বম জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের নামে সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ জেলার রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি এবং আলীকদম উপজেলায় পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তার এবং অপহরণ চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্থ আদায় করে ত্রাস সৃষ্টি করেছে। রুমা উপজেলার মুন্নুম পাড়া, আত্তা পাড়া, বেতেলপাড়া, রনিনপাড়া এলাকাগুলো ঘিরেই তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে অভিযোগ স্থানীয়দের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি অভিযোগ করে বলেন, কেএনএফ'র সঙ্গে বম জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর একটি সংখ্যা জড়িয়ে পড়েছে। বম জনগোষ্ঠীর অনেক নেতা জনসাধারণের সঙ্গে মিশে কেএনএফকে সমস্ত তথ্য সরবরাহ করে চলেছে।
তারা আরও বলেন, বম পাড়াগুলোতে কেএনএফ এর সন্ত্রাসীদের আনাগোনা সব সময় রয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হলে কেএনএফ'র সোর্সগুলো সহজে চিহ্নিত করা সম্ভব।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে