Views Bangladesh Logo

বিনামূল্যের পাঠ্যবই কালোবাজারে: শিক্ষাব্যবস্থার চরম নৈরাজ্যকে স্পষ্ট করে

ব সম্ভবের এই দেশে কেবল মন্দ কাজগুলোই হয় অনায়াসে। বলা হয়, টাকা দিলে এই দেশে বাঘের দুধও পাওয়া যায়। বলাই বাহুল্য, প্রবাদটি নেতিবাচক অর্থেই ব্যবহৃত হয় বেশি। কিন্তু তাই বলে পাঠ্যপুস্তকও কালোবাজারের খপ্পরে পড়বে এরকম চিন্তা বোধহয় কেউ কোনোদিন করেননি। গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথম দিনই পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে হাতে পেতে অভ্যস্ত; কিন্তু এবার হলো তার ব্যতিক্রম। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে পাঠ্যপুস্তকেও এসেছে পরিবর্তন, আর তাই বই ছাপাতে দেরি হচ্ছে, ফলে কবে নাগাদ শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

এর মধ্যে জানুয়ারি মাস চলে গেল। ফেব্রুয়ারি মাসেও শিক্ষার্থীরা সব বই হাতে পাবে কি না জানে না। কিন্তু সব বই পাওয়া যাচ্ছে কালোবাজারে। লুকিয়ে বিনামূল্যের বই কিনতে হচ্ছে অধিক দামে। গতকাল বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, চলতি শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ‘মূল্য’ দিলে কেনা যায় খোলাবাজারে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির একসেট বই বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকায়। নবম শ্রেণির বই সেটপ্রতি (গ্রুপভেদে দু-একটি বই কম থাকছে) ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। রাজধানীর নীলক্ষেত, বাংলাবাজারসহ দেশের অনেক স্থানে বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিকিকিনির তথ্য মিলেছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, বিনামূল্যের পাঠ্যবই কেনাবেচার সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে জড়িতদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযান না-হয় চালানো হলো, অপরাধীদের ধরাও হলো; কিন্তু শিক্ষার্থীরা কী করবে? তারা কি পড়বে না? ক্লাসে যাবে না? তার সদোত্তর কারও কাছে নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কেবল আশ্বাস দেয়া হয়, সেই আশ্বাস কবে বাস্তবায়ন হবে তার কোনো ভরসা নেই।

পাঠ্যপুস্তক নিয়ে এমন বিশৃঙ্খল ও অরাজক অবস্থা দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে কখনো হয়নি। একটি দেশের সরকার শিক্ষা বিষয়ে কতটা অবহেলা ও অসচেতনতা প্রকাশ করলে এরকমটা হতে পারে? পাঠ্যপুস্তকের মতো পবিত্র একটা বিষয়কে পর্যন্ত এ দেশের সরকার কালোবাজারের অন্তর্ভুক্ত করে ছাড়ল! যারা কালোবাজারে বই বিক্রি করেন তাদের তো দোষ দিয়ে লাভ নেই। বিক্রেতারা স্বীকার করেন, কালোবাজারে পাঠ্যবই বিক্রিতে ঝুঁকি থাকলেও লাভ বেশি। কোনো কোনো কালোবাজারি ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনার মতো বড় শহরেও এসব বই নিয়ে যাচ্ছেন। রাজধানীর মতিঝিল, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, মালিবাগ, নাখালপাড়ার রেলগেট-সংলগ্ন কয়েকটি লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন স্থানে বইয়ের দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে বিনামূল্যের পাঠ্যবই।

এতে শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হচ্ছে। কিন্তু যে অর্থের ক্ষতি তাদের হচ্ছে তা কে দিবে? নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের সন্তানের পাঠ্যপুস্তকের পেছনে পাঁচ-সাত হাজার টাকা ব্যয় করা কম কথা নয়; কিন্তু বই না কিনে দিলে তারা পিছিয়ে পড়বে। অন্যদিকে যাদের টাকা আছে, বই কিনতে পারছে তারা কিছুটা হলেও এগিয়ে যাবে। পরবর্তীতে ক্লাস শুরু হলে দেখা যাবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর তুলনায় কিছু শিক্ষার্থী এগিয়ে আছে। এতেই একটা বড় ধরনের বৈষম্য হয়ে যাবে। এটা কোনো সামান্য নৈরাজ্য নয়, সমাজের চরম বিশৃঙ্খলাই এতে স্পষ্ট হয়। এর সমাধান যত দ্রুত হবে ততই মঙ্গল। দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের সব পাঠ্যবই পৌঁছে দেয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ