ডাইনোসরের হাইওয়ে
সিএনএন-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে চোখ আটকে গেল আজ সকালে। ডাইনোসরের হাইওয়ে আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। হাইওয়ে মানে ১৬৬ মিলিয়ন বছর আগে এ-পথ ধরে দল বেঁধে যাতায়ত করত অতিকায় ডাইনোসররা। পথটি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডশায়ারে, দেবার্স ফার্ম কোয়ারিতে। খনি শ্রমিক গ্যারি শ্রমিক রাস্তার খনন কাজ করতে গিয়ে মাটিতে বিপুল আকৃতির পায়ের ছাপ থেকে বড় ধরনের ধাক্কা খান। পরে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ স্বেচ্ছাসেবী পুরো জায়গাটি খুঁড়ে ২০০টি বিপুল আকৃতির পায়ের ছাপ আবিষ্কার করেন। তাদের বুঝতে বাকি থাকে না এই বিরাট পায়ের ছাপ ডাইনোসরের ছাড়া আর কারও না। তারা জায়গাটির নাম করেন ‘ডাইনোসরের হাইওয়ে’।
বিশ্বব্যাপী অন্যান্য জুরাসিক পথগুলোর সঙ্গে সাম্প্রতিক এই হাইওয়ের পার্থক্য হচ্ছে এখানে এ-পর্যন্ত প্রাপ্ত ডাইনোসরের চলাচলের পথগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে দীর্ঘ। আরও তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, এটি আবিষ্কার হলো এমন এক সময় যখন মানুষ ডাইনোসরের অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার ২০০ বছর পূর্ণ হয়েছে। ১৮২৪ সালে মানুষ প্রথমে এই প্রাগৈতিহাসিক অতি-আকৃতির প্রাণীটির অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত হয়েছিল, এই অক্সফোর্ডশায়ারেই।
ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোপ্যালিওন্টোলজির অধ্যাপক কার্স্টি এডগার জড়িত ছিলেন এই খনন কাজের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, ডাইনোসরদের এই চলার পথ সত্যিই উত্তেজনাকর এবং এই অঞ্চলে যে ডাইনোসরের দীর্ঘকালের বসতি ছিল সেই উত্তরাধিকারকেই বহন করছে এই হাইওয়ে। এই অঞ্চল থেকেই প্রাগৈতিহাসিক এই বিপুল আকৃতির প্রাণীর অনেক জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে।
সাম্প্রতিক এই খননকালে বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরদের চলাচলের পাঁচটি বিশাল ট্রাকওয়েস (ধারাবাহিক জীবাশ্ম পায়ের ছাপ) উন্মোচন করেছেন। যার মধ্যে একটি পায়ের ছাপের সঙ্গে আরেকটি পায়ের ছাপের দীর্ঘতম দূরত্ব দৈর্ঘে ১৫০ মিটারের (৪৯২ ফুট) বেশি। এ থেকে তাদের বিশাল আকৃতি ও চলাচলের গতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পায়ের ছাপের দিক ও দূরত্ব থেকে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন তারা উত্তর দিকে ছুটে গেছে ঘণ্টায় প্রায় ৫ কিলোমিটার বেগে। তার মানে ডাইনোসররা গতিশীল প্রাণী ছিল। পরবর্তীতে আর পায়ের ছাপ নেই দেখে এটা ধারণা করা কঠিন যে তারা ঠিক কোন দিকে গেছে, তবে এটা বোঝা যাচ্ছে খাদ্যের খুঁজেই তারা ঘুরে বেড়াচ্ছিল।
ডাইনোসরদের পায়ের ছাপ দেখে এটাও আন্দাজ করা যাচ্ছে যে, এই অঞ্চলটি এক সময় আচ্ছাদিত ছিল নরম পলিমাটি দ্বারা। আর চারদিকেই ছিল পর্যাপ্ত পানি। অধ্যাপক কার্স্টি এডগারের মতে, পায়ের ছাপগুলো ঢাকা পড়ে গিয়েছিল হয়তো কোনো ঝড়ের কারণে। ঢাকা পড়ে গিয়েছিল বলেই দীর্ঘকাল ধরে তারা রক্ষা পেয়েছে বাতাস, পানি বা অন্যান্য প্রাণীদ্বারা সৃষ্ট ক্ষয়ের হাত থেকে।
এর মধ্যে বহু ডাইনোসরদের হাড় আবিষ্কৃত হয়েছে। সেগুলোর মূল্য একরকম। কিন্তু জুরাসিক এই পায়ের ছাপের মূল্যও অন্যরকম। এডগারের মতে, হাড় নিশ্চিতভাবে তাদের বসবাসের নিশ্চিত অবস্থানকে নির্দেশ করে না। কারণ জলে-বাতাসে তারা হয়তো অন্য জায়গায় ভেসে গিয়ে পড়েছে বা কোনো মাংসখেকো প্রাণী মুখে করে নিয়ে অন্য জায়গায় ফেলেছে। কিন্তু পায়ের ছাপ তো আর ভেসে আসেনি, এগুলো নিশ্চিতভাবেই এই অঞ্চলে ডাইনোসরদের বসবাসের অবস্থানকেই প্রমাণ করে। তাই এই পায়ের চিহ্নগুলোর গুরুত্ব অন্যরকম। এগুলো শুধু ডাইনোসরদের আকারকেই বোঝায় না, তাদের আচরণ সম্পর্কেও সূত্র দেয়। তারা কি দলবেঁধে চলতো, একসঙ্গে শিকার করতো, পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে তারা কীভাবে খাপ খাইয়ে নিত তারও দিকনির্দেশনা দেয়।
তথ্যসূত্র- সিএনএন
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে