যে কারণে হারলেন ইনু, জিতলেন সুমন
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অভাবনীয় দুটি খবর হচ্ছে কুষ্টিয়া-২ আসনে সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু নৌকা প্রতীক নিয়েও হেরেছেন। তিনি হেরেছেন স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরিফিনের কাছে। আর হবিগঞ্জ-৪ আসনে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সুমন। তার কাছে পরাজিত হয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্য়টন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। ফল ঘোষণার পর থেকেই ইনুর পরাজয় আর সুমনের জয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
হাসানুল হক ইনু এর আগে এ আসন থেকেই তিনবার নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। ওই তিনবারই তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কেউ প্রার্থী ছিলেন না। এবার তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন স্থানীয় মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরিফিন। তিনি প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় অংশ তার পক্ষে প্রচারে নামে। অন্য দিকে হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ ছিল তিনি এর আগে বার বার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখেননি। বরং নানাভাবে দূরত্ব তৈরি করেছেন। সে দূরত্বই শেষ পর্যন্ত তাকে এবারের নির্বাচনে পরাজয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হলো, এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সক্রিয় সমর্থন ছাড়া শুধু নিজের ইমেজে আর দলের সক্ষমতা দিয়ে ইনুর পক্ষে বিজয়ী হওয়া সম্ভব নয়। এ পরাজয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম হেভিয়েট নেতা হাসানুল হক ইনুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন অধ্যায়ের সমাপ্তির পথেই নিয়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে হবিগঞ্জ-৪ আসনে বিজয়ী ব্যারিস্টার সুমন ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন রাস্তার পাশের ময়লা-আবর্জনা রাখার প্রতিবাদ করার মধ্য দিয়ে। একটি ফেসবুক পেজে থেকে তিনি লাইভ শুরু করেন। সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ফেসবুক লাইভে এলে কিংবা কোনো ভিডিও পোস্ট করলে মুহূর্তেই হাজার হাজার মানুষ দেখা শুরু করে। এই সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়ে যেতেও সময় লাগেনি। ক্রমেই এই সুমনের জনপ্রিয়তা আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠল। সুমন যখন বুঝতে পেরেছেন, মানুষ তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছেন, তখনই চেষ্টা করেছেন মানুষের আরও মন জয় করতে। সুমন সার্থক হয়েছেন।
নির্বাচনে বিজয়ের পর ব্যারিস্টার সুমন সাধারণ মানুষকে উদ্দেশ করে তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘আমাকে কেউ এমপি সাহেব বলবেন না। যারা আমার বড় তারা সুমন বলবেন, যারা আমার ছোট তারা সুমন ভাই বলবে। এমপি হিসেবে আমাক কোথাও প্রধান অতিথি করলেও সেখানে আমার জন্য বড় চেয়ার রাখবেন না। সবার জন্য যে চেয়ার থাকবে আমার জন্যও সেই একই চেয়ার রাখবেন। তিনি আরও বলেছেন, মরা গাঙ্গের কচুরিপানা পরিষ্কার করবেন তিনি। বাজারের সব ময়লা তুলে ফেলবেন। আর তিনি শপথ নিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় এলাকার বাচ্চাদের জন্য ৫ লাখ টাকার ফুটবল নিয়ে যাবেন। তার এ বক্তব্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে