Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এত ব্যাংক থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই

Salehuddin  Ahmed

সালেহউদ্দিন আহমেদ

রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের তাগিদ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। একই সঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি যথার্থই বলেছেন। এই মুহূর্তে ব্যাংক ও আর্থিক অত্যন্ত নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। তাই এই খাতের সংস্কার অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে সংস্কারের মাধ্যমে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে না পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। ব্যাংকিং খাত হচ্ছে একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম মূল চালিকাশক্তি। বিশেষ করে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকিং খাতের গুরুত্ব আরও বেশি। কোনো কারণে যদি ব্যাংকিং সেক্টর বিপর্যস্ত হয় তাহলে পুরো অর্থনীতিই সমস্যায় পতিত হবে। এমনকি অর্থনীতি অচল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ব্যাংকিং সেক্টরকে সুস্থ ধারায় পরিচালনা করা ব্যতীত কোনো গত্যন্তর নেই। ব্যাংকিং সেক্টর বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে তাতে মনে হয় আমরা যেনো একটি খাদের কিনারে চলে এসেছি। এই অবস্থা থেকে যে কোনো মূল্যেই হোক আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবেই। এর কোনো বিকল্প নেই। সম্ভাব্য সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য হতে হবে এই খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনা।

ব্যাংক পরিচালনার জন্য যে পরিচালনা বোর্ড থাকে, যারা ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন, যারা সুপারভিশনের দায়িত্বে থাকবেন তাদের সবাইকে সর্বোচ্চ সততা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো ক্ষেত্রেই গাফিলতির সুযোগ নেই। ব্যাংক পরিচালনার জন্য যে আইনি কাঠামো আছে, যেসব নর্মস আছে তা সঠিকভাবে পরিপালন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময় যে সব গাইডলাইন জারি করা হয়, তা যেন সঠিক এবং নির্মোহভাবে পরিপালন করা হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে।

ব্যাংক পরিচালনায় আন্তর্জাতিক কিছু নর্মস আছে যেমন ভ্যাসেল-১,ভ্যাসেল-২, ভ্যাসেল-৩ এবং কিছু অ্যাকাউন্টিং নর্মস আছে সেগুলো সঠিকভাবে পরিপালন করতে হবে। বাংলাদেশে একটি সমস্যা হচ্ছে এখানে যেসব আইন রয়েছে তা অত্যন্ত ভালো এবং আন্তর্জাতিক মানের; কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে পরিপালিত হচ্ছে না। আইন আইনের মতো খাতা-কলমে লিপিবদ্ধ থাকছে। আর ব্যাংক তার নিজস্ব গতিতে চলছে। কোনো কোনো সময় মহল বিশেষকে খুশি করার জন্য আইনি পরিবর্তন করা হয়। যারা আইন লঙ্ঘন করে ব্যাংকিং খাত পরিচালনা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। এই পরিপ্রেক্ষিতে আইন সংশোধনের ব্যাপার আছে। প্রচলিত আইন বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার ব্যাপার আছে। ব্যাংকিং সেক্টরে বিদ্যমান আইন পরিবর্তন এবং হালনাগাদকরণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই বিদ্যমান আইনের কার্যকারিত কমে গেছে।

কাজেই যুগের চাহিদার প্রতি দৃষ্টি রেখে এসব আইন সংশোধন, সংযোজন এবং পরিবর্তন করা যেতে পারে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের জন্য যে সব আইন রয়েছে তাও পরিবর্তন, পরিমার্জন এবং সংশোধনের আবশ্যকতা রয়েছে। আমাদের দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের একটি সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে তারা ঋণ নিয়ে ব্যবসায় পরিচালনা করতে চান। এটা নিরুৎসাহিত করতে হবে। ব্যবসায় পরিচালনা বা শিল্প স্থাপনের জন্য ব্যাংকের পাশাপাশি স্টক মার্কেটের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে। উদ্যোক্তারা যদি তাদের পুঁজি স্টক মার্কেট থেকে সংগ্রহ করতে পারেন তাহলে ব্যাংকের ওপর চাপ কমবে।

ব্যাংক থেকে কেউ ঋণ গ্রহণকালে তার আবেদন এবং সম্ভাব্যতা ভালোভাবেই যাচাই-বাছাই করতে হবে। যারা ঋণ নেবার পর সঠিক সময়ে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেন না তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। খেলাপি ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ আইন, ঋণ হিসাব অবলোপন নীতিমালা সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। কয়েক বছর আগে ঋণ হিসাব অবলোপন নীতিমালা সহজীকরণ করা হয়েছে। আগে কোনো ঋণ হিসাব মন্দমানে শ্রেণিকৃত হবার পর ৫ বছর অতিক্রান্ত হলে উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের এবং শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করার পর সেই ঋণ হিসাব অবলোপন করা যেত।

সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, এখন কোনো ঋণ হিসাব মন্দ মানে শ্রেণিকৃত হবার পর তিন বছর অতিক্রান্ত হলেই তা অবলোপন করা যাচ্ছে। এ জন্য শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণের বিধান বাতিল করা হয়েছে। ঋণের অঙ্ক ৫ লাখ টাকার কম হলে সেই উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের কোনো বিধান রাখা হয়নি। কিছুদিন আগে ২ শতাংশ নগদ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে এক বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণের সুযোগ দেয়া হয়েছে। আগের আইনে কোনো খেলাপি ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণের জন্য প্রথম বার ১০ শতাংশ, দ্বিতীয়বার ২০ শতাংশ এবং তৃতীয়বার ৩০ শতাংশ নগদ ডাউন পেমেন্ট দিতে হতো। একটি ঋণ হিসাব সর্বোচ্চ তিনবার পুনঃতপশিলীকরণ করা যেত।

ব্যাংকিং আইনের এসব সংস্কার বাতিল করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর ২০১৫ সালে সৃষ্ট সহিংসতার অজুহাতে ৫০০ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব ঋণ খেলাপিদের বিশেষ ব্যবস্থাধীনে ঋণ হিসাব পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। সেই সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেশ কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী তাদের ঋণ হিসাব পুনর্গঠন করে নিলেও পরবর্তীতে অধিকাংশ শিল্পগোষ্ঠীই শর্তানুসারে ঋণের কিস্তি ফেরত দিতে পারেনি। ঋণখেলাপিদের এভাবে বিশেষ সুবিধা দেবার কারণে সবার মাঝে একটি ভুল বার্তা গেছে। যেসব অযৌক্তিক আইনি পরিবর্তন করা হয়েছে, তা বাতিল করে আইনগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। কারণ আগের আইনগুলো ছিল আন্তর্জাতিকমানের। এমনকি প্রয়োজনে আইনগুলোকে আগের চেয়েও কঠিন করা যেতে পারে। যারা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করবেন তারা যেন বুঝতে পারেন ঋণের কিস্তি নির্ধারিত সময়ে সুদ সমেত ফেরত না দিলে কোনোভাবেই পার পাওয়া যাবে না। বর্তমানে অনেকেই মাঝেই এমন একটি ধারণা বদ্ধমূল হয়ে আছে যে, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দিলেও কোনো অসুবিধা হবে না। কোনো না কোনোভাবেই আইনের ফাঁক গলিয়ে পার পাওয়া যাবে। যারা যৌক্তিক কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ঋণের কিস্তি ফেরত দিতে পারছেন না তাদের বিশেষ সুবিধা দেয়া যেতে পারে; কিন্তু তাই বলে ঢালাওভাবে সবাইকে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ হিসাব ১০ বছরের জন্য পুনঃতপশিলীকরণের সুযোগ দেয়া কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। এই ব্যবস্থার ফলে যারা এক সময় নিয়মিত ঋণের কিস্তি ফেরত দিতেন তারাও ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি হতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এই অবস্থা ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য মোটেও শুভ হতে পারে না।

ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হলে সেই গ্রাহক যেন পার পেয়ে যান। মামলা উদ্দেশ্যমূলকভাবে দীর্ঘায়িত করা হয়। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা ঋণ খেলাপির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না। ব্যক্তি বা মহল বিশেষের উদ্দেশ্যসাধনের জন্য ব্যাংকের আইন পরিবর্তন করা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না, যারা ব্যাংক ও আর্থিক খাত সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ তাদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ শক্তি সম্পন্ন কমিশন গঠন করে ব্যাংকিং সেক্টরের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য আইনি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। কমিটির রিপোর্টে দেয়া সুপারিশ বা পরামর্শ সরকারকে বাস্তবায়ন করতে হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে যারা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন তাদের ব্যাপারে সতর্ক হবার সময় এসেছে। অনেক সময় দেখা যায় যোগ্যতা থাকুক আর নাই থাকুক দলীয় বিবেচনায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দেয়া হয়। একটি দলীয় সরকার তার পছন্দনীয় লোককে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেবেন এতে দোষের কিছু নেই; কিন্তু সেই নিয়োগ যেন সততা এবং দক্ষতার ভিত্তিতে দেয়া হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো অদক্ষ লোকের পক্ষে একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক সঠিকভাবে পরিচালনা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ব্যাংক ব্যবসায় সাধারণ অন্য দশটি ব্যবসায়ের মতো নয়। ব্যাংক অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি প্রতিষ্ঠান। সামান্য ভুলেই একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তাই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে যে কোনো সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ভেবে চিন্তে গ্রহণ করতে হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদেরই নিয়োগ দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সব সময়ই প্রফেশনাল ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া উচিত। কোনোভাবেই শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় কাউকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়া ঠিক হবে না।

কিছু দিন আগে ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকে একই পরিবার থেকে চারজন পরিচালক নিয়োগের বিধান করা হয়েছিল। তারা অব্যাহতভাবে তিন টার্ম অর্থাৎ ৯ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। আগে একই পরিবার থেকে দুজন পরিচালক নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারতেন। তারা অব্যাহতভাবে দুই টার্ম অর্থাৎ ৬ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারতেন। এই আইন পরিবর্তন করে একই পরিবার থেকে একযোগে ৪ জন পরিচালক নিয়োগের বিধান করা হয়। তারা অব্যাহতভাবে তিন টার্ম অর্থাৎ ৯ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। পরবর্তীতে এই আইনের সামান্য পরিবর্তন করে একই পরিবার থেকে একযোগে তিনজন পরিচালক নিয়োগের বিধান করা হয়। আগেই আইনটিই ভালো ছিল। কারণ একই পরিবার থেকে একযোগে তিন জন বা চার জন পরিচালক নিয়োগের বিধান করা হলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর পারিবারিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। তাই এই আইনটি পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিধান রয়েছে; কিন্তু দেখা যায়, ব্যাংকের মালিক পক্ষের আত্মীয়-স্বজনরাই স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ফলে তাদের পক্ষে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা কোনোভাবেই সম্ভব হয়না। তারা বরং ব্যাংকের মালিক পক্ষের স্বার্থ রক্ষায় সব সময় ব্যস্ত থাকেন। এই অবস্থার পরিবর্তন করে যোগ্য ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগদানের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তারা ব্যাংক পরিচালনায় সঠিকভাবে অবদান রাখতে পারেন। স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক আলাদাভাবে কিছু গাইড লাইন দিতে পারে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীনে এতগুলো ব্যাংক থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই। যত দ্রুত সম্ভব রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর করতে হবে। স্টক মার্কেটের মাধ্যমে বাজারে শেয়ার ছেড়ে এগুলোকে বিরাষ্ট্রীয়করণ করা যেতে পারে। একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বলেছে তারা সরকারের দেয়া অর্থ শেয়ারে রূপান্তর করবে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা এক ধরনের চালাকি মাত্র। প্রশ্ন হলো, যারা শেয়ার ক্রয় করবেন তারা কোনো একটি লোকসানি কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করতে যাবেন? তারা তো ভালো কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করতে পারেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা কখনোই এই সেক্টরের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে না। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে দ্বৈত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এক ধরনের সিদ্ধান্ত প্রদান করে। আবার অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ অন্য ধরনের সিদ্ধান্ত প্রদান করে। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক যতটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা পারে না। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ওপর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ বেশি। এটা ব্যাংকিং খাতের জন্য ভালো ফল দিচ্ছে না। আমি মনে করি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ অবলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও ক্ষমতায়িত করা যেতে পারে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আরও দক্ষতাসম্পন্ন লোকবল নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ নিয়োগ দিয়ে থাকে। এই বিধান পরিবর্তন করা যেতে পারে। সরকারের পরামর্শক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব পদে নিয়োগ দিতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের একটি তালিকা প্রণয়ন করতে পারে যোগ্যতার ভিত্তিতে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই তালিকা থেকে তালিকা থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেবে। সরকার সে ক্ষেত্রে পরামর্শ দিতে পারে।

বর্তমানে রিজার্ভ নিয়ে এক ধরনের সমস্যা চলছে। রিজার্ভ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরণ করছে। বাজারে মার্কিন ডলারের বিভিন্ন রকম রেট চালু আছে। এসব করে কোনো লাভ হবে না। হুন্ডি ব্যবসায়কে পুরোপুরি বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। অনেকেই মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেবার কথা বলে থাকেন। এটা এখনই করা সম্ভব হবে না। তাই হুন্ডি ব্যবসায় বন্ধ করার জন্যই উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

লেখক: অর্থনীতিবিদ ও সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক

অনুলিখন: এম এ খালেক

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ