নির্বাচনের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি সহজ হবে না: কুগেলম্যান
উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, বাংলাদেশের পরবর্তী সরকারকে দেশীয় নীতিগত চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান বহিরাগত সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।
তিনি ভারত-বাংলাদেশের টানাপোড়েনপূর্ণ সম্পর্ক, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে অনিশ্চিত সম্পর্ক এবং মিয়ানমার সীমান্তে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণকে অন্যতম বহিরাগত উদ্বেগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এক ব্রিফে তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন যখনই হোক না কেন, নির্বাচনের পর ঢাকার জন্য পরিস্থিতি সহজ হবে না।’
গত সপ্তাহে ঢাকা সফর করে তিনি দেখেছেন যে শেখ হাসিনার পিতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহ্য ও ধারা, যা একসময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবলভাবে দৃশ্যমান ছিল, সেটি এখন প্রায় অনুপস্থিত।
কুগেলম্যান লিখেছেন, ‘স্বাধীনতার নেতার ভাস্কর্য ও ম্যুরাল একসময় শহরজুড়ে দেখা যেত, তার নাম নিয়মিতভাবে বক্তৃতায় উচ্চারিত হতো। কিন্তু এখন শহরে তার উপস্থিতি অনুপস্থিত, বরং সর্বত্র জেনারেশন জেড বিপ্লবের স্মারক দেখা যায়।’
ঢাকা সফরের প্রধান অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, প্রতিষ্ঠান সংস্কার ও সুশাসন পুনর্গঠনের মতো উচ্চাভিলাষী প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে এখনও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি, যা জনগণের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতা না হওয়ায় দেশের জননিরাপত্তা কিছুটা উন্নত হয়েছে।
তবে, অনেক পুলিশ সদস্য এখনও দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখাচ্ছেন এবং গত বছরের আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত কর্মীরা বিভিন্ন দাবিতে নিয়মিতভাবে রাস্তায় নামছেন বলে কুগেলম্যান পর্যবেক্ষণ করেছেন।
দেশের অনেক মানুষ, বিশেষ করে ব্যবসায়ী নেতারা, এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও মন্দার মুখে রয়েছে, যা শেখ হাসিনার শাসনের শেষ বছরগুলোতেই শুরু হয়েছিল, বলেন কুগেলম্যান।
তিনি আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জনগণের কাছে খুব সীমিত তথ্য রয়েছে। যদিও ব্যাংক খাত ও সংবিধানসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করতে কমিশন গঠন করা হয়েছে, তবে তাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য কী, তা স্পষ্ট নয়।’
তবে, তিনি মনে করেন, জনসমর্থনের আনুষ্ঠানিক ম্যান্ডেটের অভাব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
‘গত আগস্টে অধিকাংশ বাংলাদেশি নতুন প্রশাসনকে স্বাগত জানিয়েছিল, তবে এটি একটি নির্বাচিত সরকার নয়। ফলে, যত দিন তারা ক্ষমতায় থাকবে, তত বেশি তারা নির্বাচনের জন্য চাপের মুখে পড়বে,’ বলেছেন কুগেলম্যান।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে