তৃতীয় দফায় বন্যার কবলে সিলেটের ৪ উপজেলা
অবিরাম বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ফের বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সিলেট জেলার অন্তত ৪টি উপজেলা। অন্যদিকে সিলেট ও সুনামগঞ্জে সবগুলো নদ-নদীর পানি বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাাবিত হয়েছে। সেই সঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সাথে বিভিন্ন উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এ পরিস্থিতিতে সিলেট মহানগরেরও অনেক জায়গায় নতুন করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর মির্জাজাঙ্গাল, মণিপুরি রাজবাড়ি, তালতলা, জামতলা, কুয়ারপার, শিবগঞ্জ, শাহজালাল উপশহর, হাওয়াপাড়া, যতরপুর, মেন্দিবাগ, তোপখানা, মজুমদারি, চৌকিদেখী, দক্ষিণ সুরমাসহ বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় অধিবাসীরা।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৯৪ মিলিমিটার। আর মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩ মিলিমিটার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ৩ দিন সিলেটে ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সোমবার সকাল থেকে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কানাইঘাটে সুরমা ও লোভা নদীর পানি দ্রুত বাড়তে থাকে। ফলে আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত সুরমা ডাইকের অন্তত ১৮টি স্থান দিয়ে সুরমা ও লোভা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রত্যন্ত জনপদ ফের বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এ ছাড়াও প্লাবিত হয়েছে কোম্পানীঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার নতুন নতুন এলাকা। এসব বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছেন। ফলে তৃতীয় দফা ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষজন।
পাউবো সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত সিলেটের ৫টি নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর মধ্যে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১১৮ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি আমলশীদ পয়েন্টে ৭৭ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি ৯৫ সেন্টিমিটার, শেরপুর পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার ও শেওলা পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার এবং সারিগোয়াইন নদীর পানি গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সিলেট মহানগর ছাড়া জেলার সব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জেলার ১ হাজার ৮১টি গ্রামে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ ৫০০ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এসব উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মানুষ রয়েছেন। বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসন ও প্রত্যেক উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে কন্ট্রোল স্থাপন করে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রতি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন করে বন্যার্ত অসুস্থ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে।
গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুই সপ্তাহ স্থায়ী এ বন্যায় পানিবন্দি ছিলেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রথম দফায় বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন থেকে দ্বিতীয় দফায় বন্যা হয় সিলেটে। বিশেষ করে ঈদুল আজহার দিন ভোররাত থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার অতি ভারী বৃষ্টিপাতে মহানগরসহ সিলেটের সব উপজেলায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। পরবর্তী এক সপ্তাহ সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ছিলো ভয়াবহ। এরপর পানি নামতে শুরু করে। তবে দ্বিতীয় দফার বন্যা শেষ হওয়ার আগেই রবিবার (৩০ জুন) দিনভর ও উজানে ভারী বৃষ্টির ফলে সোমবার থেকে সিলেটে দেখা দেয় তৃতীয় দফায় বন্যা। এ বন্যায় জেলার কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট ও বিয়ানীবাজার উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে তুলিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে নতুন করে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে