Views Bangladesh Logo

ভারতীয় ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করার সাহস দেখালে কঠিন ফল ভোগ করতে হবে: মোদি

ভারতের জাতীয় ঐক্যকে ভাঙতে চাইলে কঠিন ফল ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সে সঙ্গে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’ এখন দেশটির নতুন সন্ত্রাসবিরোধী নীতির ভিত্তি।

সোমবার (১২ মে) দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণে মোদি এসব হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এসময় তিনি ২২ এপ্রিল, জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সংঘটিত নির্মম সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এটি কেবল একটি জঘন্য অপরাধ নয়, বরং ভারতের জাতীয় ঐক্যকে ভাঙার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা। হামলায় ঘুরতে আসা নিরপরাধ মানুষদের ধর্ম পরিচয় জেনে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, যা গোটা জাতিকে গভীর শোক এবং ক্ষোভে আচ্ছন্ন করেছে।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও আধাসামরিক বাহিনী সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। তিনি জানান, অপারেশন সিঁদুর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানগুলোর মধ্যে এক নতুন মাপকাঠি তৈরি করেছে, যা ভারতের নিরাপত্তা দৃষ্টিভঙ্গিতে এক দৃঢ় ও সক্রিয় পদক্ষেপ। এসময় তিনি এর সাফল্যকে স্মরণ করে তিনি ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্ব, গোয়েন্দা সংস্থা ও বিজ্ঞানীদের অবদানের প্রশংসা করেন এবং দেশজুড়ে ঐক্যের বার্তা দেন।

মোদি বলেন, সম্প্রতি জাতি একযোগে ভারতের শক্তি ও সংযম প্রত্যক্ষ করেছে। তিনি বলেন, অপারেশন সিঁদুর শুধু একটি সামরিক অভিযান নয়, বরং কোটি কোটি ভারতীয়ের আবেগের প্রতিফলন, যা ন্যায়বিচারের প্রতি ভারতের অটল অঙ্গীকারের প্রতীক।

তিনি জানান, ভারতীয় সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। তার ভাষায়, এই বীরত্ব দেশের প্রতিটি মা, বোন ও কন্যার প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানান, ৬-৭ মে পর্যন্ত চালানো অপারেশনে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে নিশানা করে হামলা চালানো হয়। বাহাওয়ালপুর ও মুরিদকের মতো স্থানে এই হামলায় শতাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে, যারা দশকের পর দশক ধরে ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে।

মোদি আরও জানান, এই অপারেশনের পর পাকিস্তান মারাত্মকভাবে হতবিহ্বল হয়ে যায় এবং ভারতের স্কুল, কলেজ, মন্দির ও বেসামরিক এলাকাগুলিতে হামলা চালাতে শুরু করে। তবে ভারতের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অধিকাংশ হামলা প্রতিহত করে।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ১০ মে বিকেলে যুদ্ধবিরতির আবেদন জানানো হয়। ততক্ষণে ভারত তাদের সন্ত্রাসী অবকাঠামো ও সামরিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ধ্বংস করে দেয়। সরকার এরপর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সাময়িকভাবে প্রতিক্রিয়া স্থগিত রাখে, তবে মোদি স্পষ্ট করে বলেন, এটি এখনই শেষ নয়, আমরা পাকিস্তানের প্রতিটি পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করব।

মোদি বলেন, অপারেশন সিঁদুর ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলে একটি স্থায়ী পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এসময় তিনি ভারতের প্রতিরক্ষা নীতির তিনটি নতুন স্তম্ভ ঘোষণা করেন: দৃঢ় প্রতিশোধ; পারমাণবিক হুমকিকে উপেক্ষা এবং সন্ত্রাসবাদী ও তাদের আশ্রয়দাতাদের সমান দৃষ্টিতে দেখা।

তিনি বলেন, বিশ্ব আবারও দেখেছে পাকিস্তানের আসল চেহারা— যেখানে উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তারা নিহত জঙ্গিদের জানাজায় অংশ নিচ্ছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অপারেশনে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ অস্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। যা ভারতের আত্মনির্ভরতার প্রতীক।

তিনি বলেন, ভারতের তৈরি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আজ বিশ্বের নজর কাড়ছে এবং একবিংশ শতাব্দীর যুদ্ধক্ষেত্রে প্রমাণিত শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

ভাষণের শেষে বুদ্ধপূর্ণিমার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তির পথ শক্তির দ্বারা রক্ষিত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতাই একটি উন্নত ও মানবিক বিশ্বের পথ দেখাতে পারে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, পাকিস্তান যদি তার পথ পরিবর্তন না করে, তবে তা তাদের পতনের পথেই নিয়ে যাবে।

তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, সন্ত্রাস ও আলোচনা একসাথে চলতে পারে না, সন্ত্রাস ও বাণিজ্য একসাথে হতে পারে না, যেমন রক্ত ও জল একসাথে প্রবাহিত হতে পারে না।

ভাষণের শেষ পর্বে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর ঐক্য, সাহস ও সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ভারতের সেনারা মরুভূমি হোক বা পাহাড়, সর্বত্র দক্ষতা দেখিয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর যুদ্ধেও তারা শ্রেষ্ঠতা অর্জন করেছে।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ