নিনমাসে চিকিৎসায় স্থবিরতা, ভোগান্তিতে রোগীরা
ক্যান্সারসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হাজার হাজার রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ক্যাম্পাসে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সে (নিনমাস)। অথচ গত দেড় মাস ধরে বিশেষায়িত এই প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাসেবায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। স্বাভাবিক সময়ের থেকে এই সময়ে রোগীর সেবা অনেকটাই কমে এসেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এই প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নেয়া প্রায় ১০ হাজার থাইরয়েড ক্যান্সার আক্রান্ত নিয়মিত রোগীসহ ও নতুন রোগীরা।
সম্প্রতি নিনমাসে চিকিৎসক ব্যতিরেক একজন পদার্থ বিজ্ঞানীকে সেখানকার পরিচালকের দায়িত্ব দেয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার একাধিক চিকিৎসক। চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্স হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের একটি প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে, সম্প্রতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর নিনমাসের চিকিৎসকরা সেখানকার বর্তমান সমস্যর বিষয়ে পৃথক চিঠি দিয়েছেন।
দুই চিঠিতেই নিনমাসে চিকিৎসাসেবার স্থবিরতার কারণ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘নিনমাসে সিনিয়র চিকিৎসক ব্যতিরেক পদার্থ বিজ্ঞানি ফেরদৌসী বেগমকে গত ৭ অক্টোবর পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা নিনমাসের ইতিহাসে প্রথম কোনো ঘটনা। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকের বাইরে কাউকে পরিচালক করায় নিনমাসের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে নিনমাসে কর্মরত চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক বিশেষ সভা করেন। সভায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানের দপ্তরে শারীরিকভাবে উপস্থিত হয়ে জমা দিয়ে আমাদের আর্জি বিস্তারিতভাবে জানানো হয়।
তাছাড়া কমিশনের পক্ষ হতে সদস্য (পরিকল্পনা) অধ্যাপক ডা. শামীম মমতাজ ফেরদৌসি বেগম নিনমাসে আসেন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি চিকিৎসকদের তাদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। সেই মোতাবেক চিকিৎসকবৃন্দ তাদের কর্মসূচি বন্ধ রাখেন। সদস্য এক সপ্তাহ সময় নেন। কমিশনে মিটিং করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন; কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এ ব্যাপারে কমিশনকে বারবার অবহিত করে এবং সদস্য তার প্রতিশ্রুতির পর কমিশন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ডাক্তার কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
ফলে নিনমাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায়, বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখা ও চিকিৎসকদের সুষ্ঠু চিকিৎসাসেবা প্রদানের সুযোগের জন্য জরুরিভিত্তিতে একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসককে পরিচালক হিসেবে নিনমাসে পদায়ন করে উদ্ভূত পরিস্থিতির নিরসন ঘটিয়ে দ্রুত সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিনীত অনুরোধ করছি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘দেশের সব মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক একজন চিকিৎসক। নিনমাসেও কোনো দিন চিকিৎসকের বাইরে কাউকে পরিচালক করা হয়নি।’ এতে আরও বলা হয়, ‘বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে অন্যান্য বিভাগের অধ্যাপক এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও সমন্বয় করে চিকিৎসা-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র একজন চিকিৎসকই নিতে পারেন। নিনমাস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট হওয়ায় এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের নিউক্লিয়ার মেডিসিনের প্রাণকেন্দ্র এবং বাংলাদেশের নিউক্লিয়ার মেডিসিন চিকিৎসা ব্যবস্থার ধারক। নিনমাসে নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির জন্য এম ডি কোর্স চলমান, যা শিক্ষা ব্যবস্থার একটি মাইলফলক।
নিনমাসের প্রধান কাজ সাধারণ মানুষকে বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা প্রদান করা আর একজন পদার্থবিদের প্রধান কাজ মেশিনারিজের কোয়ালিটি কন্ট্রোল করা। নিনমাসের পরিচালক সম্পূর্ণ প্রশাসনিক পদ নয় বরং কার্যত ক্লিনিক্যাল পদ; যার দায়িত্ব একজন অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ ক্লিনিশিয়ান সঠিকভাবে পালন করতে পারবেন।’ নিনমাসের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘নিনমাসে ১০ হাজার ক্যান্সার রোগীর নিয়মিত চিকিৎসা ও ফলোআপ হয়ে থাকে। তাই বিপুল চিকিৎসক ও সহযোগীদের সমন্বয়ে এই বিপুলসংখ্যক রোগীর সঠিক চিকিৎসার জন্য একজন অভিজ্ঞ, দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচালকের দায়িত্বে থাকা জরুরি ও অত্যাবশ্যক।’
এ ব্যাপারে নিনমাসের পরিচালক ফেরদৌসি বেগম ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘একজন ডাক্তার যদি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান বা মেম্বার হতে পারেন যেখানে সব কাজ বিজ্ঞানীদের, তাহলে একজন পদার্থ বিজ্ঞানী কেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সের পরিচালক হতে পারবেন না? এখানে ১৯৯২ সালেও চিকিৎসকের বাইরে একজন বিজ্ঞানী পরিচালক ছিলেন। তাছাড়া আমি আগামী মার্চে এলপিআরে যাব। ওই সময় পর্যন্তই তো এখনে (নিনমাসে) আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিনমাসে আগের মতো এখনো স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা চলছে। তবে নভেম্বর-ডিসেম্বরে প্রতি বছরই রোগীর সংখ্যা কিছুটা কম থাকে।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে