কাঁচা লঙ্কা নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড
আমদানি সময়োচিত সিদ্ধান্ত
বিশ্বখ্যাত স্পেনীয় কবি ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা স্মরণে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কবির মৃত্যু’ শিরোনামে একটি সাড়া জাগানো কবিতা আছে। সেই কবিতার এক চরণে তিনি লিখেছেন, ‘একজন আদার ব্যাপারী জাহাজ মার্কা বিড়ি ধরিয়ে বললেন, কাঁচা লঙ্কাতেও আজকাল তেমন ঝাল নেই!’ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই কবিতায় কাঁচা মরিচের ঝাল নিয়ে আক্ষেপ থাকলেও বর্তমানে দেশজুড়ে কাঁচা মরিচের ঝাল সহ্যের বাইরে আছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বলছে, ১০০ টাকা কেজির কাঁচা মরিচ অঞ্চলভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা উচ্চমূল্যস্ফীতির বাজারে সাধারণ মানুষের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বাস্তবতা হলো, প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে কাঁচা মরিচের উৎপাদন কম থাকায় দাম এমনিতেই বেড়ে যায়। আবার কিছুদিনের মধ্যে দাম অনেক কমে আসে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, উৎপাদন কম বলে কি কাঁচা মরিচের দাম ৪০০ টাকা হবে? স্মরণ করে দিতে চাই, দুই বছর আগে এবারের কাঁচা মরিচের মতো লবণের দাম নিয়েও এ রকম আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছিল। অথচ লবণও কাঁচা মরিচের মতো নির্ধারিত চাহিদার বেশি গ্রহণ করা যায় না।
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির তালিকায় এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে কাঁচা মরিচ। সাধারণত দেশের বাজারে একেক সময় একেক বাহানায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। অতি মুনাফালোভী এই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা কখনো চাল, চিনি, ভোজ্যতেল আবার কখনো পেঁয়াজ ও ডিমের দাম বাড়িয়ে বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা কেড়ে নেয়। কিন্তু এই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তেমন কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখি না। ফলস্বরূপ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে এবার কাঁচা মরিচ নিয়ে কারসাজি-বাণিজ্যে মেতেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
আমরা জানি, উচ্চমূল্যস্ফীতির কারণে দেশের ৪২ শতাংশ মানুষ এখন দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করছেন। তাই নতুন অর্থবছরের বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতি কমিয়ে এনে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। কিন্তু এই মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন যে খুবই দুরূহ, তা বর্তমান বাজার পরিস্থিতি দেখেই অনুমান করা যায়।
এমতাবস্থায় আমরা মনে করি, নিত্যপণ্যের বাজারে চলমান অস্থিরতা দূর করতে হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে ব্যবসায়ীদের অবৈধ সিন্ডিকেট ভাঙাতে হবে। এ জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা আরও বাড়ানো যেতে পারে। পাশাপাশি অনিয়ম লুটপাট বন্ধ করতে হবে। অবশেষে বলতে চাই, সরকার নিত্যপণ্যের বাজারদরে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে- এটাই প্রত্যাশা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে