Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

আন্তর্জাতিক নারী দিবস

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নারীদের সক্ষমতায় বিনিয়োগ অপরিহার্য

Shirin Sharmin  Chaudhury

শিরীন শারমিন চৌধুরী

শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪

বারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য Invest in women: Accelerate progress, অর্থাৎ নারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ অপরিহার্য। সেই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখেই ৮ মার্চ নারী দিবস পালন করা হবে। আমি মনে করি, এই প্রতিপাদ্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

সে কারণে এই বিশেষ প্রতিপাদ্যটি এবার নির্ধারণ করা হয়েছে। শুধু নারীদের এগিয়ে নেয়ার কথা বলা কিংবা তাদের অগ্রগতির কথা বলাটাই যথেষ্ট নয়। কার্যত সেটা বাস্তবায়ন করতে হলে তার সঙ্গে যে একটি আর্থিক যোগ রয়েছে, বাজেটের প্রয়োজন আছে, সম্পদের প্রয়োজন আছে, সেই বিষয়টিকেও আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

নারীদের ওপরে বিনিয়োগ বলতে যেটা বোঝায়, সেটা হচ্ছে সারাবিশ্বের নারীরাই অত্যন্ত মেধাবী, তাদের অসম্ভব প্রতিভা আছে। সেই প্রতিভা বিকাশের জন্য যে সুযোগগুলো তাদের প্রয়োজন, সেই সুযোগগুলো তৈরি করে দেয়া এবং সেই সুযোগ যেন তারা গ্রহণ করতে পারে সেই বিষয়টির দিকে নজর দিতে হবে।

সেটা করতে হলে তাদের জন্য একদিকে যেমন বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, তেমনিভাবে যারা কন্যাশিশু তারা যেন শিশুকাল থেকেই যথাসময়ে তাদের শিক্ষার সুযোগটা পায়, সেই বিষয়ের প্রতিও আমাদের নজর রাখতে হবে।

আবার যেসব নারী ক্ষুদ্র এবং মাঝারি উদ্যোক্তারূপে নিজেরাই অনেক কাজ করে নিজেদের এগিয়ে নেয়ার প্রয়াসে নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের বিভিন্ন ধরনের ঋণ সুবিধা দিয়ে, বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে।
কাজেই প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিন্তু আমাদের বিনিয়োগের বিষয়টি সামনে চলে আসছে, এবং সেটাকে প্রাধান্য দেয়া একান্ত অপরিহার্য। তাই আমি আশা করি, এবারের এই প্রতিপাদ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে আগামী দিনে শুধু নীতিমালা গ্রহণ নয়, সেই নীতিমালা বাস্তবায়নে নারীদের এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন সেটাও যেন তার সঙ্গে বরাদ্দ করা হয়।

এক্ষেত্রে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রণী ভূমিকার কথা বলতে চাই। যিনি সর্বপ্রথম বাংলাদেশে বাজেটে নারীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই কাজটি শুরু হয়েছিল প্রথমে চারটি মন্ত্রণালয় নারীদের জন্য পৃথক বিশেষ বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে। জাতীয় বাজেটে এভাবে প্রথম তিনি শুরু করেন। এখন সব মন্ত্রণালয়েরই নারীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ বাজেট রয়েছে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর একটি পদক্ষেপ। যেটা নারীদের সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এবং নারীদের ওপর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক।

এবারের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের যে প্রতিপাদ্য, Invest in women: Accelerate progress, এখানে আপনি দুটি অংশ দেখতে পাবেন। Investing in Women একটা অংশ, আরেকটা হচ্ছে Accelerate Progress, অর্থাৎ নারীর ওপর বিনিয়োগ করুন, সেটাই আপনার অগ্রগতি বা উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। এ দুটি বিষয়ের মধ্যে কিন্তু একটা নিবিড় যোগসূত্র আছে। এটা পারস্পরিক সম্পূরক। আপনি যদি নারীর ওপর বিনিয়োগ না করেন, তাহলে আপনার যে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সেটা বাধাগ্রস্ত হবে।

কাজেই সব উন্নয়ন, কর্মকাণ্ড, যে কোনো প্রকল্প, যে কোনো নীতি-নির্ধারণ, পলিসি- যা-ই কিছু গ্রহণ করা হোক না কেন, সেখানে নারীদের জন্য অর্থের বরাদ্দ থাকতে হবে। এবং কন্যাশিশুদের জন্যও লেখাপড়ার পর্যাপ্ত সুযোগ, শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে প্রাথমিক, পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষা- কোনো ক্ষেত্রেই যেন মেয়েরা বঞ্চিত না হয়, সে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এগুলোর প্রত্যেকটি বিষয়ের সঙ্গে আর্থিক যোগসূত্র রয়েছে। আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে।

সে কারণে জাতীয় বাজেটে নারীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকা খুবই জরুরি। নারী উন্নয়ন, নারীর স্বাস্থ্য, নারীর শিক্ষা, নারীর উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ, নারীর প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়নে নারীদের এগিয়ে নেয়া, তথ্যপ্রযুক্তি- যেটা এখন সারা বিশ্বকে চালিকাশক্তি হিসেবে পরিচালিত করছে, সেই তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে নারীরা যেন পিছিয়ে না পড়ে। অর্থাৎ, ডিজিটাল বিভাজন যেন তৈরি না হয়, এ সব বিষয়েই আমাদের নারীদের ওপর বিনিয়োগ করে সেই বিষয়গুলোকে সুনিশ্চিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর উন্নয়নে সারা বিশ্বে আজ বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। সেটার কারণ হচ্ছে, তিনি বিভিন্ন ধরনের নারীবান্ধব যে নীতিগ্রহণ করেছেন, বাস্তবায়ন করেছেন, আইন-প্রণয়ন করেছেন, একটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছেন; যার মাধ্যমে নারীরা আজকে এই জায়গাটি নিজেদের জন্য তৈরি করে নিতে পারছেন।

নারীর ওপর বিনিয়োগের একটা বড় উদাহরণ হচ্ছে জাতীয় বাজেটে আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যেটাকে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট বলা হয়। অর্থাৎ নারীদের জন্য পৃথকভাবেই বরাদ্দ রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ আছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ আছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে বরাদ্দ আছে। এটা কিন্তু একটা অনন্য উদাহরণ। এটা বিশ্বের সব দেশে নেই। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

একদিকে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট, এ ছাড়া বিভিন্ন প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ দিয়ে আয়বর্ধক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানে নারীকে এগিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের আইটি প্রশিক্ষণ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ছেলেমেয়েদের এবং মেয়েদের জন্যও একেবারে শিশুকাল থেকে যেন তারা তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে সে জন্য প্রতিটি স্কুলে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব করেছেন। এই যে আইটি ইনকিউবেশন সেন্টারগুলো করেছেন বিভিন্ন জায়গায়, আমার নিজের নির্বাচনি এলাকা পীরগঞ্জে একটা আছে শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন সেন্টার- সেখানেও বিভিন্ন ধরনের এই আইটি প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে নারী, পুরুষ উভয়কেই তৈরি হওয়ার সুযোগ করে দেয়া। এর মাধ্যমেই, এই বিনিয়োগগুলোই কিন্তু আগামী দিনে স্মার্ট নাগরিক এবং স্মার্ট নাগরিকদের মধ্যে যেসব নারী রয়েছেন তাদের তৈরির ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

আবার অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন অন্য বিষয়। এতে একজন নারী নিজে স্বাবলম্বী হবেন, নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াবেন, নিজের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ক্ষেত্র তৈরি করবেন; সেটা হচ্ছে এক ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন; কিন্তু নারীর ওপরে বিনিয়োগ করা রাষ্ট্রেরও একটা দায়িত্ব আছে। আমরা যারা এই ক্ষেত্রে কাজ করছি, তাদের সবারই একটা দায়িত্ব আছে। শুধু ফাঁপা বুলি দিয়ে তো হবে না। কাজটা করতে হলে তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিতে হবে, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য, আয়-বর্ধক প্রশিক্ষণ দিতে হবে, নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, এগুলোতে সব কিছুতেই অর্থের যোগ আছে, জাতীয় বাজেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটা অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলেই তো এতটা সুফল পাওয়া যাচ্ছে।

লেখক: টানা চতুর্থবার জাতীয় সংসদের স্পিকার ও রাজনীতিবিদ

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ