Views Bangladesh Logo

কারাগারে অপরাধপ্রবণতা নিরসনে চাই কঠোর পদক্ষেপ

কারাগার মূলত অপরাধীদের সংশোধনের স্থান। সেখানে বন্দিদের অন্ধকার জীবন থেকে আলোর পথে আনার জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অন্তরীণ করে রাখা হয়; কিন্তু অপরাধীদের সেই সংশোধনের স্থান কারাগার হয়ে উঠেছে অপরাধস্থল। এমন তথ্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে মাঝে মধ্যে প্রকাশিত হচ্ছে, যা দেশের জন্য উদ্বেগজনক।

কারা অধিদপ্তরের স্লোগান ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’; কিন্তু কারাগারে থাকা অপরাধীদের আলোর পথে ফেরার চেয়ে অন্ধকারের পথ বেছে নেয়ার নজির বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দেখা গেছে, ছোট অপরাধে জেলে ঢুকে অনেক বন্দি বড় অপরাধী হয়ে বের হচ্ছেন। কেউ কেউ কারাগারে বসেই চালিয়ে যাচ্ছেন অপরাধ কর্মকাণ্ড। এমনকি ‘জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল’ নামে নতুন যে জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, সেটির জন্মও হয়েছে কারাগার থেকেই। তাই কারাগারে গিয়ে শোধরানোর বদলে বড় অপরাধী ও অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সর্বশেষ কারাগারে বসেই পরিকল্পনা করে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা সারা দেশে আলোচিত হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন কারাগারের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টিও বহু বছর ধরে আলোচিত। কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাদের টাকা দিলে কারাগারে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করা যায়। বিশেষ করে বন্দিদের অসুস্থতার ভান করে কারা হাসপাতালে থাকা, মাদক গ্রহণ করা, নারীসংগ গ্রহণ, বহিরাগতদের কারাগারে প্রবেশ ও বের হওয়া, ভালো মানের খাবার গ্রহণ, মোবাইল ফোন ব্যবহার করা- টাকা দিলেই নিয়মহীন এ জাতীয় সব ধরনের কাজ করা সম্ভব। মূলত কারাগারের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীই এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। ফলে একদিকে যেমন কারাগারের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে, অন্যদিকে বন্দিদের সংশোধনের বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

একজন বন্দির নিরাপদ আটক নিশ্চিত করে তাকে সুনাগরিক ও দক্ষ কর্মী হিসেবে সমাজে পুনর্বাসিত করাই কারা বিভাগের প্রধান কাজ; কিন্তু ছোটখাটো অপরাধে জেলে গিয়ে অনেকেই বড় অপরাধী হয়ে বের হয়ে আসার কারণ হিসেবে দেখা গেছে, জেলে অপরাধ বিবেচনায় পৃথক সেলে রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ছোট অপরাধীরা পেশাদার বা বড় অপরাধীদের সংস্পর্শে আরও বড় অপরাধী হয়ে উঠছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী অপরাধীদের শ্রেণি বিভাজন করে পৃথক সেলে রাখার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আমাদের কারাগারের এমন সক্ষমতা নেই; কিন্তু ভবিষ্যতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সক্ষমতা তৈরি করার বিকল্প নেই।

অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে, একজন বন্দি অনেক ক্ষেত্রে মানসিকভাবে অসুস্থ থাকে। তাই তাকে সুস্থ করতেই সংশোধনাগার প্রয়োজন। এ জন্যই কারাগারকে সংশোধনাগার বলা হয়। সে জন্য বন্দিকে কাউন্সেলিং ও মোটিভেশন করে সংশোধন করা হয়; কিন্তু আমাদের দেশের কারাগারে কাউন্সেলিং করা তো দূরের কথা, চিকিৎসার জন্যই পর্যাপ্ত চিকিৎসক পর্যন্ত নেই। সারা দেশে ৬৮টি কারাগারের প্রায় ৮০ হাজার বন্দির জন্য চিকিৎসকের সংখ্যা হাতে গোনা।

এমতাবস্থায় দেশের কারাগারগুলোতে যে পরিবেশ-পরিস্থিতি বিদ্যমান, তাতে বন্দিদের সংশোধন না হয়ে আরও বেশি অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। তাই কারাগারগুলোকে প্রকৃত সংশোধনের স্থান করার জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগসহ নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। পাশাপাশি কারাগারের ভেতর ও বাইরে সিসিটিভি সংযোগের ব্যবস্থাসহ উন্নত প্রযুক্তির দেখভালের ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সেই সঙ্গে শুধু অসাধু ও দুর্নীতিগ্রস্ত কারা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বদলি বা বিভাগীয় ব্যবস্থা নিলেই এ সমস্যার সমাধান হবে না। অপরাধভেদে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থাও নিতে হবে। তা না হলে বন্দিরা কখনো আলোর পথের দিশা খুঁজে পাবেন না।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ