সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চাই আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতা
নিরাপদ সড়কের প্রত্যাশা একজন নাগরিকের অধিকার। এ প্রত্যাশা পূরণে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবু দেশে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। প্রতিদিন ঝরে যাচ্ছে প্রাণ এবং দুর্ঘটনায় যারা বেঁচে থাকেন, তাদের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। তাই দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য নিরাপদ সড়ক প্রয়োজন। সেই সঙ্গে জনসচেতনতা ও বিদ্যমান আইন প্রয়োগের বিকল্প নেই।
দেশের পরিবহন খাত দীর্ঘদিন ধরে ১৯৩৯ সালের ‘বেঙ্গল মোটর ভেহিকেল অ্যাক্ট’ এবং ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। দেশব্যাপী নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের আন্দোলন হয়। তারই ফলস্বরূপ ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে সড়কপথের নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা রোধ ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে যে সড়ক পরিবহন আইন পাস হয়েছিল, জনগণ এ আইনটির খুব প্রশংসা করেছিল। কিন্তু পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর চরম বিরোধিতার কারণে গত চার বছরেও আইনটি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করা হয়নি। তৈরি হয়নি আইনের বিধিমালা। হয়নি নিরাপদ সড়কের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন। আইনের বাস্তবায়ন না হওয়ায় কমছে না সড়ক দুর্ঘটনা, নিরাপদ হচ্ছে না সড়ক। তাই আমরা বলব, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যমান আইন ২০১৯ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সড়কে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য জাতিসংঘের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সড়ক নিরাপদ করার দায়িত্ব সরকারের। এটি কোনো সামাজিক সংগঠন বা এনজিওর দায়িত্ব না। নিরাপদ সড়ক সরকারকেই করতে হবে। দুর্ঘটনা কমলে সরকারের নিরাপদ সড়কের প্রতিশ্রুতি কিছুটা বাস্তবায়ন হতো। তা ছাড়া শ্রমিকদের প্রতি মালিকদের যে দায়দায়িত্ব আছে, তারা তা পালন করছেন না। সড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে তাদেরও দায় আছে। তারা দক্ষ চালক নিয়োগ দেন না, তারা ফিটনেস ছাড়া গাড়ি নামান। তাই এসব আইনের মাধ্যমে বন্ধ করতে হবে।
আজ শনিবার (৬) এপ্রিল একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ফেনীর ফাজিলপুরে ট্রাকে ট্রেনের ধাক্কায় ছয়জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন ট্রেনের ইঞ্জিনে বসা ছিল। বাকি একজন ওই ট্রাকের চালক। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে ঈদের ছুটিতে বাইকে বাড়ি ফিরতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন স্বামী-স্ত্রী। এ ছাড়া চার জেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় আরো চারজন নিহত হয়েছে।
গবেষণা বলছে, দেশের মহাসড়কে প্রায় ৮৪ ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে। সুতরাং মহাসড়কে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানবসম্পদের ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য ৯ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, যা জিডিপির দশমিক ৩ শতাংশ।
২০১৭ সালের জুন মাসে ২২ অক্টোবরকে নিরাপদ সড়ক দিবস ঘোষণা করে সরকার। এবারের সড়ক দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আইন মেনে সড়কে চলি, নিরাপদে ঘরে ফিরি’। জাতিসংঘ ২০১১ থেকে ২০২১ সালকে সড়ক নিরাপত্তা দশক ঘোষণা করেছিল। এর সদস্যদেশগুলো সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনলেও বাংলাদেশ তা করতে পারেনি।
এমতাবস্থায় নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে দেশে বেশি করে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত চালক প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে জনসচেতনতার পাশাপাশি ট্রাফিক আইন মেনে চলার অভ্যাস আমাদের গড়ে তুলতে হবে। স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে নতিস্বীকার না করে সড়ক পরিবহন আইনটি অচিরে বাস্তবায়ন করতে হবে। সে লক্ষ্যে আইনের বিধিমালা প্রণয়ন জরুরি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে ভাবনার এখনই মোক্ষম সময়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে