Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

আত্মীয়দের দাবি

‘পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা না পেয়েই হত্যা করা হয় তোফাজ্জলকে’

Kamrul Hasan  & Mahedi Hasan Murad

কামরুল হাসান ও মেহেদী হামান মুরাদ

শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে মাসুদ কামাল তোফাজ্জল নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে চূড়ান্ত নির্যাতন করার আগে তোফাজ্জলের স্বজনের কাছে দাবি করা হয় ৩৫ হাজার টাকা। স্বজন টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষুব্ধ হয়ে ভবঘুরে তরুণটির উপরে চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন, তাতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তোফাজ্জল।

ঢাবির এক ছাত্র জানান, ফজলুল হক মুসলিম হলে চলা তিন দিনব্যাপী বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মাঝেই ছয় ছাত্রের মোবাইল ও দুজনের মানিব্যাগ চুরি হয়। এতে ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় বহিরাগত ভবঘুরে তোফাজ্জল হোসেনকে তারা চোর হিসেবে সন্দেহ করে বসে।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে জানা যায়, গত বুধবার সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে হলের গেস্টরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তোফাজ্জলকে হালকা মারধর করার পর তার থেকে স্বজনের ফোন নম্বর নেওয়া হয়। প্রথমেই ফোন করা হয় তোফাজ্জলের মামাকে, দাবি করা হয় ৩৫ হাজার টাকা। এরপর ক্ষুধার্ত তোফাজ্জলকে ক্যান্টিনে খাবার খাওয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ ব্যাপারে ভিউজ বাংলাদেশকে তোফাজ্জলের মামাতো বোন আছমা আক্তার তানিয়া বলেন, ‘রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমার বাবাকে একজন ফোন দিয়ে জানান, তোফাজ্জল চুরি করতে এসে ধরা পড়েছে। ৩৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। এরপর বাবা তাকে আমার নম্বরে কথা বলতে বলেন।’

‘আমি ওই নম্বরে কল দিলে আমার কাছেও একই দাবি করা হয়। তখন আমি তাদের অনুরোধ করে বলি, তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন, তাকে আপনারা মারবেন না। সন্দেহ হলে পুলিশের কাছে দিয়ে দিন।’

অভিযোগ উঠেছে, স্বজনের কাছে টাকা পাওয়ার আশ্বাস না পেয়েই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। তোফাজ্জলকে এরপর এক্সটেনশন বিল্ডিংয়ের গেস্টরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিভিন্ন ব্যাচের প্রায় ৩০ শিক্ষার্থী তাকে দ্বিতীয় দফায় মারধর শুরু করে।

সাধারণ ছাত্ররা জানান, মারধরকারীরা চেষ্টা করছিল তার স্বীকারোক্তি নেবে যে, চুরি হওয়া ফোন সেই নিয়েছে এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে তোফাজ্জলের স্বজন যেন ৩৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে।

এদিকে তোফাজ্জলের বড় ভাই এএসআই নাসির উদ্দিনের স্ত্রী শরিফা আক্তার একাধিক সংবাদমাধ্যমকে জানান, তোফাজ্জলকে মারধরের সময় একটি মোবাইল নম্বর থেকে ফোন দিয়ে তার কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করছিলেন একজন। তার টাকা দেয়ার মতো সামর্থ্য না থাকায় তিনি সেই টাকা পাঠাতে পারেননি।

এরপর, তোফাজ্জলের মামাকে ফোন করে সর্বশেষ চাওয়া হয় ৩৫ হাজার টাকা। স্বজন মনে করছেন এই টাকার জন্যই তোফাজ্জলের প্রাণ চলে গেছে।

কীভাবে মারা হয় তোফাজ্জলকে
ভিউজ বাংলাদেশের তদন্তে উঠে আসে, টাঙ্গাইলের সন্তান পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী জালাল আহমেদের নেতৃত্বেই এই মারধরের ঘটনা ঘটে। তার সঙ্গে যোগ দেয়, মাটি, পানি ও পরিবেশ বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের মোহাম্মদ সুমন, খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের মো. মোত্তাকিন সাকিন, ওশেনোগ্রাফি বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের ওয়াজিবুল আলম, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের আল হুসাইন সাজ্জাদ, গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের মো. আহসানউল্লাহ ও জিওলজি বিভাগের শেখ রমজান আলী রকি। তাদের মধ্যে সাকিন এবং ওয়াজিবুলের মোবাইল হারিয়ে যায় গত সপ্তাহে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিট থেকে মারধরের এই ঘটনা চলছিল প্রায় ১২টা পর্যন্ত। তোফাজ্জলকে প্রথম বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের আব্দুস সামাদ। তবে সে মারধর করেছে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে।

তারা জানান, তোফাজ্জলকে যখন এক্সটেনশন বিল্ডিংয়ের গেস্টরুমে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তার হাত বাঁধে জালাল। সুমন পেটানো শুরু করলে তোফাজ্জল পড়ে যায়। এরপরে পানি এনে তাকে পানি খাওয়ানো হলে সে উঠে বসে। এ সময় সবাই হাততালি দেয়। সবাই খুশি হয় কারণ তাকে আবার মারতে পারবে। এরপর আবার শুরু হয় পেটানো। এ দফায়ও সবচেয়ে বেশি মারে ফিরোজ। এ সময় জালাল গ্যাস লাইট দিয়ে তোফাজ্জলের পায়ে আগুনও ধরিয়ে দেয় ও গোপনাঙ্গে লাঠি দিয়ে জোরে জোরে আঘাত করে। পরে সুমন এসে তার ভ্রু ও চুল কেটে দেয়।

এক পর্যায়ে তোফাজ্জলের অবস্থা খারাপ হলে পাঁচ-ছয় জনের একটি দল তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় চিকিৎসক তোফাজ্জলকে মৃত ঘোষণা করলে সরে পড়েন ওই শিক্ষার্থীরা।

প্রশাসন ও সমন্বয়কের অবহেলা
এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছে, সন্ধ্যার পরে শুরু হওয়া এই ঘটনা হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত গড়াতো না, যদি হল কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীলভাবে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারতো। অভিযোগ এসেছে সমন্বয়কদের উদাসীনতা নিয়েও।

তোফাজ্জলকে যখন আটক করা হয়, তখন ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার সেখানে ছিলেন; কিন্তু তিনি সক্রিয় না হয়ে সেখান থেকে সরে যান। পরে তোফাজ্জলকে হাসপাতালে পাঠানোর পরে তিনি ফিরে আসেন। অনেকেই আক্ষেপ করে বলেছেন, তিনি যদি চলে না গিয়ে সঠিক সময়ে মীমাংসা করতেন তবে এ ঘটনা ঘটতো না।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবু বাকের মজুমদার বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিককদের জানান, ঘটনার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন না এবং হলে ফিরে এই ঘটনা জেনেই তিনি প্রতিবাদ জানান। ‘এ ধরনের সহিংসতা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কিছু জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বাকিদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’

এদিকে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই দোষ দিচ্ছেন শিক্ষকদের। তাদের প্রশ্ন, চারঘণ্টা ধরে চলা এই নির্যাতনের সময় কোনো শিক্ষক কি পদক্ষেপ নিতে পারতেন না?

তারা জানান, একপর্যায়ে খবর পেয়ে প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে আসে। কিছু অভিযুক্ত টিমের কাছে তোফাজ্জলকে দিতে চাচ্ছিলেন না। ২৫ মিনিট ধরে শিক্ষকরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের কথা না মেনে উল্টা শিক্ষকদের কাছেই চাওয়া হয় ক্ষতিপূরণ।

কার নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ড
তোফাজ্জল হত্যায় আসলে কে নেতৃত্ব দেয় সেটা নিয়ে ছাত্রদের মধ্যে দ্বিধা থাকলেও ভিউজ বাংলাদেশের তদন্তে উঠে আসে, নেতৃত্বদানকারী সবাই লেবাসধারী রাজনৈতিক সুবিধাভোগী। আওয়ামী লীগ আমলে এরা ছাত্রলীগে থাকলেও, জুলাইয়ে আন্দোলন শুরুর দিকে তারা পদত্যাগ করে আন্দোলনে যোগ দেন। আবার সরকার পতনেই তারা রাতারাতি ছাত্রদলের কর্মীতে পরিণত হন।

সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্বদানকারী জালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই ছাত্রলীগে যোগ দেন। ২০২২ সালে সাদ্দাম-ইনান কমিটিকে দায়িত্ব দেয়ার আগেই ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রলীগের সাবেক উপবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ছিলেন তিনি। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি দেয়ার পরে তিনি শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারী হন। তার বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেক অভিযোগ।

একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থী ভিউজ বাংলাদেশকে জানান, গত ৪ বছরে হলে যত মারামারি হয়েছে তার বেশিরভাগগুলোতেই জালালের উপস্থিতি ছিল। এই জালালই পরে সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদলের সমর্থকে পরিণত হয় এবং হলে তাণ্ডব চালাতে শুরু করে।

সদ্য চতুর্থ বর্ষে ওঠা এক শিক্ষার্থী জানান, রাত ৯টার দিকে এক সহকারী আবাসিক শিক্ষক এই ঘটনা জেনে থামাতে এলে তাকে চুরি যাওয়া মোবাইলের ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয় এবং তাড়িয়ে দেয়া হয়। তবে এই কাজ জালাল করেছে নাকি জিওলোজি বিভাগের শেখ রমজান আলী রকি করেছে, সেটা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। তবে অনেকেই বলেছে, যে গ্রুপ এই হত্যায় জড়িত, তারা সবাই এখন রকির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই ছাত্রদলের পরিচয় দিচ্ছে।

তবে যেহেতু সম্পূর্ণ হল সিসিটিভি ফুটেজের আওতায় আছে এবং প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের বয়ানের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টোরিয়াল বডি জালালসহ আরও পাঁচ শিক্ষার্থীকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করেছেন।

আটককৃত বাকি শিক্ষার্থীরা হলো মোহাম্মদ সুমন, মো. মোত্তাকিন সাকিন, ওয়াজিবুল আলম, আল হুসাইন সাজ্জাদ ও মো. আহসানউল্লাহ।

এর মধ্যে জালাল এবং সাজ্জাদ দুজনের বাড়ি টাঙ্গাইলে হওয়ায় তাদের মধ্যে সখ্যও বেশি বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। মোহাম্মদ সুমন কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে এবং পরে হলে কমিটি গঠন করে নিজেকে হলের সহসমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় দিতো; কিন্তু হলের এমন কোনো কমিটি না দেয়ায় সেই কমিটি বাতিল হয়ে যায়। তবে সমন্বয়করা যখন বন্যার ত্রাণ দিতে যায়, তাদের সঙ্গে সুমনও গিয়েছিল।

শিক্ষার্থীরা জানান, এখানে যারা বারাবাড়ি করেছে, এরা প্রায় সবাই একসময়ে ছাত্রলীগের নিয়মিত কর্মী ছিল এবং সরকার বদলের পরেই তারা ভোলপাল্টে ছাত্রদলের সমর্থক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং দলবদ্ধভাবে নিজেদের প্রমাণ করতে উঠেপরে লাগে।

ডিএমপি মিডিয়া উইংয়ের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার ওবায়দুর রহমান জানান তোফাজ্জল হত্যার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করে।

মামলা হবার পর তদন্ত কর্মকর্তা ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছেন। উক্ত ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টোরিয়াল বডি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করেছেন।

সুরতহাল প্রতিবেদনে শাহবাগ থানার এসআই আমিনুল ইসলাম তোফাজ্জলের মৃতদেহের নীলা ফুলা যখম এবং ডানপায়ের হাঁটুর নিচে রক্তাক্ত থেঁতলানোর অবস্থার উল্লেখ করেন।

তোফাজ্জলের মামাতো বোন তানিয়া বলেন, ‘তারা আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে গেছে। এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আইনিভাবে পরিবার লড়ব।’

কে এই তোফাজ্জল
নিহত তোফাজ্জল বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার সন্তান। সে পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিল। ব্যক্তিগত জীবনে প্রেম-সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় প্রথমে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারায়। এর কিছুদিনের মধ্যে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে তোফাজ্জলের মা, বাবা ও একমাত্র বড় ভাই মারা যান। তোফাজ্জল পরিবার ও অভিভাবকশূন্য হয়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে গত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে। বিগত ২ থেকে ৩ বছর তোফাজ্জল প্রায়ই ঢাকা বিশবিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াত। এলাকার পরিচিত কাউকে পেলে টাকা বা খাবার চেয়ে নিত বলে জানিয়েছে পরিচিতরা। তাদের ধারণা, খাবারের জন্যই হয়তো সে ফজলুল হক মুসলিম হলে গিয়েছিল।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ