ড. আতিউর রহমান
লন্ডনের এসওএএস বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিগ্রি পাচ্ছেন ড. আতিউর
অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমানকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেবে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (এসওএএস)।
তারুণ্যের চোখে বাংলাদেশের স্বাধীনতা
সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে যে অল্প কিছু দেশ, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হওয়ার পরও পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায়। সমস্ত শান্তিপূর্ণ আলোচনা ব্যর্থ হয়, যার ফলে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের নামে ১৯৪৭ সালে সৃষ্টি হওয়া পাকিস্তান ছিল একটি কৃত্রিম রাষ্ট্র। পূর্ব পাকিস্তান ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের একটি প্রদেশ। অসাম্য ও অবিচারের কারণে পাকিস্তান রাষ্ট্র দুই টুকরো হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
শিল্পেই আমাদের ভবিষ্যৎ
রপ্তানি আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ। আমাদের অর্থনীতি এখন যে রূপ নিয়েছে, তা আসলে ভারতের উন্নয়নের যে ধারা সেটি নয়। আমাদের উন্নয়নের ধারাটি হচ্ছে কার্যত সনাতনি। ম্যানুফ্যাকচারিং খাত নির্ভর ধারা। যেসব দেশ উন্নত হয়েছে, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন তারা মূলত ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের ওপর ভর করেই উন্নত হয়েছে। পূর্ব এশীয় দেশগুলো যেমন সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এগুলোকে ইস্ট এশিয়ান মিরাকল বলা হয়। এসব দেশও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে গুরুত্ব দিয়ে রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন কৌশল রচনা করে চলেছে।
আমাদের পণ্য রপ্তানি গন্তব্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে
বাংলাদেশের রাপ্তানি বাণিজ্যের আর একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে আমরা সীমিতসংখ্যক দেশকে কেন্দ্র করেই বাণিজ্য বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছি। আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর অতিমাত্রায় নিভরশীল হয়ে পড়েছে। অথচ আরও অনেক দেশ ও অঞ্চল আছে যেখানে চেষ্টা করলেই আমাদের তৈরি পণ্য রপ্তানি করা যায়। পূর্ব ইউরোপীয়দেশগুলোতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি চমৎকার সুযোগ রয়েছে। রাশিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। এ জন্য আমাদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো পণ্য রপ্তানির বাজার অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আশার কথা জাপানসহ নয়া ডেস্টিনেশনে রপ্তানির পরিমাণ হ্রাস বেশ বাড়ছে।
তামাক পণ্যে আরো বেশি করারোপ প্রয়োজন
মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি। ধূমপানজনিত কারণে বাংলাদেশে প্রতিদিন মারা যায় প্রায় সাড়ে তিনশ মানুষ। তামাকজনিত ব্যাধি ও অকাল মৃত্যুর কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর আর্থিক ক্ষতি ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ধূমপান কমানোর জন্য সরকার অনেক দিন থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবুও আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের স্বনামধন্য গবেষণা-প্রতিষ্ঠান ‘উন্নায়ন সমন্বয়’ প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, সিগারেট ব্যবহার কমিয়ে আনার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো কার্যকর করারোপের মাধ্যমে এই ক্ষতিকারক পণ্যের খুচরা মূল্য বাড়ানো। তাতে করে এগুলোর সহজলভ্যতা কমবে। নাগালের বাইরে দাম বাড়লে মানুষ আর ধূমাপানে আসক্ত হবে না।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান
যে অঞ্চল নিয়ে আজকের বাংলাদেশ সেখানে ভাষা-বিতর্কের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তা সত্ত্বেও ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের প্রতীক হয়ে আছে বেশির ভাগ বাঙালির কাছে। তবে এই আন্দোলনের ব্যাপ্তি ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সময়টিকেই ঘিরে বলে বেশিরভাগ গবেষকদের লেখায় উঠে এসেছে। এই আন্দোলনকে নিছক বাংলা ভাষার মর্যাদার লড়াই মনে করলে সবটা বলা হবে না। ১৯৪৮ সালের শুরু থেকেই এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। পূর্ব-বাংলার উদীয়মান মধ্যবিত্ত শ্রেণির একজন প্রতিনিধি হিসেবে নেতৃত্ব দিলেও তার সঙ্গে গভীর সংযোগ ছিল এদেশের কৃষক, শ্রমিক ও নিম্নমধ্যবিত্তসহ সাধারণ মানুষের। তাই তো একুশে ফেব্রুয়ারির গণবিস্ফোরণের প্রথম বার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে ১৯৫৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি আরমানিটোলা ময়দানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় তিনি উচ্চারণ করেছিলেন, ‘১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার দাবিতে ছিল না, সেটা ছিল আমাদের জীবন-মরণের লড়াই। আমরা মানুষের মতো বাঁচতে চাই। আমরা খাদ্য চাই, বস্ত্র চাই, আশ্রয় চাই, নাগরিক অধিকার চাই। আমরা কথা বলার অধিকার চাই, শোষণমুক্ত সমাজ চাই।’ (‘সিক্রেট ডকুমেন্টস’, প্রতিবেদন নং ৪৭, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৩)।
বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব জোরদারে আগ্রহ দেখিয়েছে ইইউ
বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব জোরদার করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক কালে এ আগ্রহের কথা জানান ইউরোপীয় কমিশনাররা।
খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা স্বর্ণপদক পাচ্ছেন ড. আতিউর রহমান
আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দেশের অর্থনীতিতে অনবদ্য অবদানের জন্য ‘খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা স্বর্ণপদক ২০২১’ পাচ্ছেন অর্থনীতিবিদ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। সমাজের বিভিন্ন খাতে কর্মরত জাতীয় পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তি নিয়ে গঠিত ১১ সদস্যের একটি জুরিবোর্ড সর্বসম্মতিক্রমে ড. আতিউর রহমানকে এ পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন এ তথ্য জানিয়েছে।
ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত এবং অর্থনীতির হালের গতি-প্রকৃতি
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে যে অর্জন করেছে, তা বৈরী রাজনীতি সত্ত্বেও এক কথায় চমকপ্রদ। এ কথা ঠিক যে, দীর্ঘ একটা সময় মুক্তিযুদ্ধের যে অর্থনীতি বাংলাদেশ চালু করেছিল, তা ওই রাজনৈতিক চাপে বিপর্যস্ত এবং বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। সেই সময়টায় যে গরিব হিতৈষী, কৃষিবান্ধব, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাবান্ধব যে অর্থনীতি বাংলাদেশে চালু হয়েছিল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সেটা ১৯৭৫-পরবতী সময়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। মাত্র ৯৩ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয় নিয়ে যে অর্থনীতি যাত্রা শুরু করেছিল, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাড়ে তিন বছরেই তা প্রায় ২৬০ ডলারে উন্নীত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তার শারীরিক অনুপস্থিতিতে দেশ আবারও পিছিয়ে যেতে থাকে। অর্থনীতি উল্টোপথে চলতে শুরু করে। মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় পরের বছরই (১৯৭৬) ১৩৮ মার্কিন ডলারে নেমে আসে। পরের বছরে তা আরও একটু কমে ১২৮ মার্কিন ডলারে নেমে আসে। দীর্ঘ
বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন ও দিনবদলের অঙ্গীকার
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ হানাদার পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসরমুক্ত হলেও আমাদের বিজয় সেদিন পূর্ণ হয়নি। যিনি বাংলাদেশের আরেক নাম, সেই তিনি তখনো পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। একে তো হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে অগুনতি মানুষের প্রাণহানি, পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর বন্দিদশা–দুইয়ে মিলে আমাদের বিজয়ের আনন্দকে অনেকটাই বিষণ্ণ করে রেখেছিল।