মুহাম্মদ ইউনূস
বাংলাদেশের নার্সিং পেশা উন্নত করা জরুরি
১৮২০ সালের ১২ মে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আধুনিক নার্সিং পেশার অগ্রদূত ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। তার জন্মদিন উপলক্ষে ১৯৬৫ সাল থেকে পালন করা হয় ‘আন্তর্জাতিক নার্সিং দিবস’। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল- ‘আমাদের নার্স আমাদের ভবিষ্যৎ, অর্থনৈতিক শক্তি নার্সিং সেবার ভিত্তি’। দিবসটিতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সদের সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করেছে; কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়, দিবসটি উপলক্ষে আমরা জানতে পারলাম বাংলাদেশে ৯৬ শতাংশ নার্স কাজ করছেন কম বেতনে।
অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারে দৃষ্টান্ত স্থাপন না করলে, আর হবে না!
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংস্কারের ওপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘ঠুনকো সংস্কার না, লোক দেখানো সংস্কার না, একদম ফান্ডামেন্টাল সংস্কার। এটা এমনভাবে করব আর কেউ পাল্টাতে পারবে না।’ তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ‘আমার একটাই কথা- সংস্কার। সংস্কারে কী কী বিষয় হবে, সেটা নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা করেন; কিন্তু সংস্কার না করে যেন নির্বাচন না করি।… এই সুযোগ হারাবেন না।’ তিনি চমৎকার বলেন; কিন্তু তা তিনি বাস্তব অবস্থা বিচার করে বলেন না। তিনি স্বপ্ন দেখেন; কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে গিয়ে হতাশ হন। কেউ যাতে সংস্কার পাল্টাতে না পারে সেই ব্যবস্থা তিনি নেবেন- এই কথাটি বাস্তবতা বিবর্জিত আবেগের কথা।
শতভাগ বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রস্তাব বাস্তবায়িত হোক
স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। একটি উন্নত ও মানবিক সমাজ গঠনে স্বাস্থ্যসেবার সুলভ ও নিরবচ্ছিন্ন সুযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখনো আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের জনগণ প্রয়োজনীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। আর যারা পান, তাদের অনেককেই উচ্চ ব্যয়ের ভার বহন করতে হয়। এই পরিস্থিতি নিরসনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে শতভাগ বিনামূল্যে করা এখন সময়ের দাবি। আশার কথা হলো, শতভাগ বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
অন্যের দিকে তাকানোর আগে আয়নায় চোখ রাখি
যদি একটি জাতির খারাপ হতে ৫৪ বছর লাগে তাহলে এক বছরে কীভাবে ভালো হওয়া সম্ভব? যদি বাংলাদেশের মানুষ সত্যিকার অর্থে দুর্নীতিমুক্ত, সৎ, সুশিক্ষিত, ন্যায়পরায়ণ এবং সৃজনশীল হতে চায় তবে সেটা কি মাত্র এক বছরের মধ্যে সম্ভব? প্রকৃত সত্য হলো- ৫৪ বছরের দুর্নীতির আগুন এক বছরে নিভিয়ে ভালো কিছু করা যায় না।
সংবাদ বন্ধ এবং সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতির ‘অনিবার্য কারণ’
৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের ঠিক চার দিন আগে গত ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের তিনটি টেলিভিশন চ্যানেলে যা ঘটেছে- তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সরকারের সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বক্তব্যকে যেমন প্রশ্নের মুখে ফেলেছে, তেমনি সাংবাদিকের প্রশ্ন করার স্বাধীনতা, এখতিয়ার ও সীমারেখার বিষয়টিও সামনে এসেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার এক মাস পরে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘সংবাদমাধ্যম ও মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা সবাইকে বলে দিয়েছি আপনারা মন খুলে আমাদের সমালোচনা করুন। আমরা সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মিডিয়া যাতে কোনোরকমের বাধাবিপত্তি ছাড়া নির্বিঘ্নে তাদের কাজ করতে পারে, সেজন্য একটি মিডিয়া কমিশন করার ইচ্ছা সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন আছে।’
‘নাকচের সংস্কৃতি’ থেকে বাংলাদেশ কবে বেরিয়ে আসবে
পহেলা এপ্রিল, ২০২৫; দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ ‘নতুন বাংলাদেশ গঠনের সুযোগ নিচ্ছে ইসলামি কট্টরপন্থিরা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিকে ‘মিসিলিডিং’ বলে মন্তব্য করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় না নিয়ে শুধু বাছাই করা কিছু ঘটনা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাদের মতে এতে বিশ্বে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকান
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, নীতিগত অনুমতি না থাকলেও বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে বিভিন্নভাবে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা গ্রহণ করতে হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও প্রায় একইরকম বিবৃতি দিয়েছেন, অনেক সময় মানবিক কারণে বাধা দেয়া যায় না। সঙ্গে বিদেশিদের একটা চাপ থাকে। এ জন্য আমরাও তাদের সাহায্য-সহযোগিতা বাড়াতে বলেছি। আর এটাও তো ঠিক, যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তারা কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে একটা জায়গায় আটকা।
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে থাকা জরুরি
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কার কমিশন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ও গণভোটের বিধান ফিরিয়ে আনার সুপারিশ করেছে। এই সুপারিশ সংবিধান সংস্কার কমিশনও করেছে। অবশ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অতি সম্প্রতি হাইকোর্টের রায়ে অটোমেটিকেলি ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যে সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত করা হয়, সেই ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগ যে আদেশ দিয়েছিল, তার ওপর একটি রিভিউ পিটিশন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় থাকায় তার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করা যাবে না। বাহাত্তরের সংবিধানে গণভোটের বিধান ছিল না, ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের আমলে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে তা সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ১৯৯১ সালে তা আবার সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করা হয়। হাইকোর্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ও গণভোটের বিধানের পুনরুজ্জীবন হলো।